যৌন আনন্দ বাড়ায় গাঁজার তেল!
কিছুদিন আগেই ‘বিনোদনমূলক নেশার সামগ্রী’ হিসেবে গাঁজা বৈধ করা হয়েছে কানাডায়, আরো অনেক দেশেই ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা বিতর্ক চলছে। এর মধ্যেই এক ধরণের গাঁজাসেবী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে – যারা গাঁজা ব্যবহার করছেন যৌন আনন্দ বাড়ানোর জন্য ।
এই ধরণের লোকদের বলা হচ্ছে ‘ক্যানাসেক্সুয়াল’ – শব্দটা তৈরি হয়েছে গাঁজার ইংরেজি নাম ক্যানাবিসের প্রথম অংশটা নিয়ে।এর বিচিত্র সব পদ্ধতি অবলম্বন করছেন – যার মধ্যে আছে শয়নকক্ষে গাঁজা মেশানো মোমবাতি জ্বালানো, বা মেয়েদের গোপন অঙ্গে গাঁজার তেল ছিটিয়ে দেয়া।
বিবিসির সাংবাদিক আয়মান আল-জুজি লিখছেন, শুনতে অদ্ভূত শোনালেও অনলাইনে এধরণের নানা রকম পণ্য বিক্রি ক্রমশই বাড়ছে – যার মধ্যে আছে গাঁজা থেকে তৈরি তেল, স্প্রে, মোমবাতি, এমনকি গাঁজা গাছের ফুল।
সত্যিকথা বলতে কি, যৌন সুখের জন্য গাঁজার ব্যবহার বহু প্রাচীন। ভারতবর্ষে ঐতিহ্যাশ্রয়ী হিন্দুদের অনেকে বিশ্বাস করেন গাঁজা থেকে তৈরি পানীয় – যাকে বলা হয় ‘ভাঙ লাচ্ছি’ – তা পান করলে যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।প্রাচীন মিশরে মহিলারা তাদের যৌনাঙ্গে প্রয়োগ করতেন গাঁজা মেশানো মধু – যার উদ্দেশ্য ছিল তাদের ভাষায় ‘জরায়ুকে ঠান্ডা করা।
তার মানে কি ‘ক্যানাসেক্সুয়াল’ মোটেও নতুন ব্যাপার নয়?ক্যানাসেক্সুয়াল কথাটা প্রথম ব্যবহার করেন ক্যালিফোর্নিয়ার এ্যাশলি ম্যান্টা। তিনি ২০১৩ সালে গাঁজা নামের ‘যাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন’ গাছের ওপর ভিত্তি করে নানা ধরণের সেক্স থেরাপি সেবা চালু করেছিলেন। তখনও গাঁজা যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ ছিল।
কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্রেরও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গাঁজার ব্যবহার বৈধ করা হয়েছে । নিষেধাজ্ঞা প্রথম তোলা হয় উরুগুয়েতে, আর যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাঁজার ব্যবহার বৈধ করার ব্যাপারটা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের লুটন শহরের বাসিন্দা এ্যাডাম এবং ডোনিয়া (ছদ্ম নাম)। তারা গত তিন বছর ধরেই ক্যানাসেক্সুয়াল – অর্থাৎ যারা গাঁজা-জাত সামগ্রীকে যৌন আনন্দ বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করছেন।
ডোনিয়া বলেন, “আমার শরীরের গঠন নিখুঁত নয়। কিন্তু গাঁজা ব্যবহার করলে আমার এসব চিন্তা মাথা থেকে চলে যায়, দেহ-মন রিল্যাক্সড হয়। আমি একটা উত্তাপ অনুভব করি, যৌনমিলনে অধিকতর আনন্দ অনুভব করি।
ইন্টারনেটে পাওয়া নির্দেশিকা দেখে তিনি নিজেই গাঁজা-মেশানো অলিভ অয়েল তৈরি করে নিয়েছেন।আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান বলছে, এসবের চাহিদা এত বাড়ছে যে তারা সরবরাহ করে কুলাতে পারছে না।
কিন্তু গাঁজার এধরণের ব্যবহার সম্পর্কে কোন জরিপ হয় নি, এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও প্রমাণিত নয়।বরং কিছু জরিপে দেখা গেছে উল্টোটা। একটি জরিপে দেখা গেছে, পুরুষরা গাঁজা ব্যবহার করলে তাদের যৌনমিলনের সক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আরেকটি জরিপ বলেছে, যারা প্রতিদিন গাঁজা খান তাদের যৌন সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
ব্রিটিশ যৌনস্বাস্থ্য এবং এইচআইভি সমিতির একজন কনসালট্যান্ট ড. মার্ক লটন বলছেন, যৌনমিলনের সময় এ্যালকোহল বা অন্য কোন ধরণের মাদকদ্রব্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে লোকের সতর্ক হওয়া উচিত।অবশ্য এ্যাশলি ম্যান্টা মন করেন, এটা ঠিক যে এ ব্যাপারে আরো গবেষণা দরকার, এবং এসব পদ্ধতি হয়তো সবার জন্য নয়।কিন্তু তিনি বলেন, তার নিজের যৌনজীবনে গাঁজা ব্যবহার করে তিনি ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন।