ফাইনালে লড়াইয়ের ভেতর ভিন্ন লড়াই
স্পোর্টস ডেস্ক
বিশ্বকাপে এমন ফাইনাল হতে পারে, চিন্তাটা শুরুর আগে করেছে এমন মানুষ সম্ভবত সারা বিশ্বে একজনও ছিলেন না। বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে আসা দুটি দলের মধ্যে ফ্রান্স হয়তো ফাইনাল খেলার যোগ্যতা নিয়েই এসেছিল রাশিয়ায়। ক্রোয়েশিয়া? তাদের চিন্তা ছিল যতদুর যাওয়া যায়; কিন্তু তাই বলে খোদ ক্রোয়াটরাও চিন্তা করতে পারেনি, তারা রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে আসবে।
কিন্তু বাস্তবতা উপহার দিয়েছে ভিন্ন কিছু। মানুষের চিন্তা আর কল্পনার জগতকে ওলট-পালট করে দিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে এখন মুখোমুখি ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া। আর মাত্র কয়েকঘণ্টা পরই তো মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বেজে যাবে বিশ্বকাপ ফাইনালের কিক অফের বাঁশি। গোলের জন্য একের পোস্ট অভিমুখে অন্যের আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণের দুন্ধুমার লড়াই শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়।
নিশ্চিত অর্থেই বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি এই লড়াইয়ের মাঝে থাকবে ছোট্ট ছোট্ট কিছু লড়াই, যেগুলো নির্ধারণ করে দেবে পুরো ম্যাচের গতিপথ। গোলপোস্ট থেকে শুরু করে ডিফেন্স, মাঝ মাঠ কিংবা আক্রমণ ভাগ- গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানগুলোতে ব্যক্তিগত লড়াই হয়ে যাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া ফাইনালের আগে জেনে নেয়া যাক, কোন কোন জায়গায় জমে উঠতে পারে এমন কিছু ব্যক্তিগত লড়াই।
এনগোলা কান্তে বনাম লুকা মদ্রিচ
লুকা মদ্রিচ। ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক। এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি সময় মাঠে ছিলেন এবং খেলেছেন। মিডফিল্ডের রাজা বলা হচ্ছে তাকে। রিয়াল মাদ্রিদে থাকতে মিডফিল্ড যেভাবে সামলাতেন, নিজের জাতীয় দল ক্রোয়েশিয়ার হয়েও সেভাবে সামলে যাচ্ছেন মিডফিল্ড। বলা হচ্ছে, লুকা মদ্রিচ না থাকলে ক্রোয়েশিয়া এতদুর আসতে পারতো না মোটেও।
ফাইনালে আজ লুকা মদ্রিচকে লড়াই করতে হবে ফ্রান্স মিডফিল্ডার এনগোলা কান্তের সঙ্গে। নিঃসন্দেহে লুকা মদ্রিচ এবং এনগোলা কান্তে হচ্ছেন এই বিশ্বকাপে ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডের প্রাণ। তারা দু’জন খেলা পরিচালনা না করলে পুরো দলই নিষ্প্রভ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সময়মত বলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া কিংবা ডিফেন্স করার জুড়ি নেই কান্তের।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে মদ্রিচ রয়েছেন দারুণ ছন্দে এবং সেরা ফর্মে। নিশ্চিত তিনি ফাঁক-ফোকর বের করে নেবেন এবং দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। সেখানেই তার সবচেয়ে বড় লড়াইটি হবে কান্তের সঙ্গে। কে বল দখলে নিতে পারবে, কাকে কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে- সেটাই দেখার বিষয় লুঝনিকিতে।
কাইলিয়ান এমবাপে বনাম ইভান স্ট্রিনিচ
প্যারিসের শহরতলী বন্ডিতে জন্ম নেয়া বিস্ময়বালক কাইলিয়ান এমবাপে। বিশ্বকাপে আসার আগেই ক্লাব ফুটবলে নিজের জাত ছিনিয়েছেন। পিএসজির হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তিনি জারি রেখেছেন বিশ্বকাপে এসেও। এমবাপের কারণেই ফ্রান্স দলটা নিয়ে আগে থেকে কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছে না যে তারা আসলে কী করবে। অসাধারণ স্কিলের সঙ্গে বিদ্যুৎ গতি- এমবাপেকে নিশ্চিত এই বিশ্বকাপ অন্য জায়গায় নিয়ে গেছে।
শুধু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জোড়া গোল করাই নয়, এমবাপে প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ভীতি তৈরি করে আসছেন। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেও যে একই ভূমিকায় থাকছেন তিনি, সেটা বলেই দেয়া যায়। এমবাপে যেন আতঙ্ক ছড়াতে না পারেন, সেই দায়িত্ব থাকবে কিন্তু ক্রোয়েশিয়ান ডিফেন্ডার ইভান স্ট্রিনিচের ওপর। ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্সে যেন কোনোভাবে চড়ে বসতে না পারেন এমবাপে, সেই দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করতে হবে স্ট্রিনিচকে। তবে স্ট্রিনিচের পরিবর্তে মাঠে নামতে পারেন ইয়োসিপ পিভারিচ।
বেঞ্জামিন পাভার্দ-ইভান পেরিসিচ
নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্রোয়েশিয়ার লেফট উইং দিয়ে খেলে যাচ্ছেন ইভান পেরিসিচ। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসলই হচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপে উঠে আসা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তোর গোলেই সমতায় ফিরেছিল ক্রোয়েশিয়া। ফাইনালেও ফ্রান্সের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন পেরিসিচ। তার শক্তি এবং সামর্থ্যের কাছে কুলিয়ে উঠতে পারবে না হয়তো ফ্রান্সের রক্ষণভাগ।
তবে পেরিসিচকে রুখতে তৈরি রয়েছেন ফ্রান্সের তরুণ ডিফেন্ডার বেঞ্জামিন পাভার্দ। পেরিসিচ চেষ্টা করবেন ফ্রান্সের রাইট ব্যাকের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে আক্রমণে উঠে আসতে। এ ক্ষেত্রে বেঞ্জামিন পাভার্দের কাজ হবে, পেরিসিচকে থামিয়ে ফ্রান্সকে বিপদমুক্ত করা এবং একই সঙ্গে বিশ্বকে দেখানো যে, ‘দেখো এই বয়সেও আমি কতটা দক্ষ!’