বাংলাদেশের বাজে ব্যাটিং সেটিই সম্ভব করেছে। এড়াতে পারেনি তারা ফলো অনও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদিও ফলো অন না করিয়ে নিজেরা আবার নামে ব্যাটিংয়ে। দিন শেষ করেছে তারা ১ উইকেটে ১৯ রান নিয়ে। এগিয়ে আছে তারা ২২৪ রানে, হাতে ৯ উইকেট।
হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছে জোড়ায় জোড়ায়। ২০ রানে প্রথমটি, দুই বল পর দ্বিতীয়টি। ৭৯ রানে তৃতীয় উইকেট, দুই বল পরই আরেকটি। ১১৭ রানে পঞ্চম উইকেট, পরের বলেই আরও একটি।
সপ্তম আর অষ্টম উইকেটও পড়েছিল পর পর দুই বলে। তবে জেসন হোল্ডার নো বল করায় বোল্ড হয়েও বেঁচে যান ব্যাটসম্যান। অবশ্য জোড়া ধাক্কা ঠিকই লেগেছে। পরের ওভারেই হারাতে হয়েছে উইকেট।চক্র পূরণ হয়েছে শেষে। একই রানে পড়েছে শেষ দুই উইকেট!
ভূতুড়ে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে রিভিউয়ের হতাশা। রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন লিটন দাস ও নুরুল হাসান সোহান। নেননি কেউই।
সর্বোচ্চ ৪৭ রান করা তামিম ইকবালই যেন ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্দশার প্রতীক। ইনিংসের প্রথম বলেই শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের ফুল লেংথ বল সামলাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। ভোগান্তির সেই শুরু।
ছিলেন না নিজের সেরা চেহারার ধারে কাছেও। ইনিংস জুড়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি থিতু। জীবন পেয়েছেন, এগিয়েছেন ধুঁকতে ধুঁকতে। আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে টিকে গেছেন। কয়েকবারই বল লেগেছে প্যাডে। ব্যাটের কানায় লেগে বল দুই স্লিপের মাঝ দিয়ে গেছে দুই দফায়। অল্পের জন্য রান আউট হওয়া থেকে বেঁচেছেন। তারপরও করতে পারেননি ফিফটি।
দারুণ দুটি বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন লিটন। কিন্তু ১২ রানে এলবিডব্লিউ হলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের ভেতরে ঢোকা বলে।
খালি চোখেই আউটটি জাগাচ্ছিল সংশয়। তামিমের সঙ্গে কথা বলে শেষ পর্যন্ত রিভিউ নিলেন না লিটন। রিপ্লেতে দেখা গেল, বল যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে!
সেই হতাশার রেশ থাকতেই আরেকটি জোর ধাক্কা। মুমিনুল হক ক্যাচ দিলেন গালিতে।টেস্টে এক সময়ের বড় ভরসার ব্যাটসম্যান এই সফরে তিন ইনিংসে করতে পারলেন ১ রান। টানা দুই ইনিংসে আউট শূন্য রানে। তিন ইনিংসেই আউট বাজে শটে।
ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে চারে তুলে এনেছিলেন সাকিব আল হাসান। ক্যারিয়ারে এর আগে একটি টেস্টেই ব্যাট করেছিলেন পাঁচের ওপরে, গত বছর নিউ জিল্যান্ড সফরে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে।
সেবার প্রথমবার চারে খেলে কঠিন কন্ডিশনে ফিফটি করেছিলেন। এবারও শুরুটা ভালো করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। চাপটা সরিয়ে দেন দারুণ কিছু শটে।
তামিমের সঙ্গে জুটি পেরিয়ে যায় পঞ্চাশ। কিন্তু সেই লড়াইয়ের সমাপ্তি সাকিবের আলগা শটে। জেসন হোল্ডারের বল টেনে আনলেন স্টাম্পে। ফিরলেন ৫ চারে ৩২ রানে। ভাঙল ৫৯ রানের জুটি।
ব্যাটিং অর্ডারে মুশফিকুর রহিমের আগে পাঁচে সুযোগ পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সুযোগ হারাতেও সময় নেননি। হোল্ডারের বলটি না খেললেন সামনের পায়ে, না পেছনে। এলবিডব্লিউ শূন্য রানে।
লড়াই করে হলেও তখনও টিকে ছিলেন তামিম। শুরুটা নড়বড়ে করলেও জমে উঠছিলেন মুশফিক। ইঙ্গিত ছিল ভালো কিছুর। আশার সমাপ্তি তামিমের বিদায়ে। কিমো পলের ডেলিভারিটি অবশ্য ছিল দারুণ।
পরের বলে এলবিডব্লিউ সোহান। আম্পায়ার আঙুল তোলা মাত্রই হাঁটা দেন। রিপ্লেতে দেখা যায়, ইমপ্যাক্ট ছিল বেশ বাইরে!
শেষ ভরসা হয়ে থাকা মুশফিকও ফিরেছেন বাজে শটে। শেষ দিকে চারটি চারে তাইজুল ইসলামের ১৮ একটু বাড়ায় দলের রান। শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদের বেলস উড়িয়ে হোল্ডার পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
ব্যাটিংয়ের হতাশাকে সঙ্গী করে আবার বোলিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দিনের শেষ ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটক বোল্ড করেন সাকিব।দিনের খেলা শেষে তবু বাংলাদেশের সবার চেহারায় রাজ্যের অন্ধকার। বোলিংয়ের আলো যে নিভিয়ে দিয়েছে ব্যাটিংয়ের কালো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৫৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৬.১ ওভারে ১৪৯ (তামিম ৪৭, লিটন ১২, মুমিনুল ০, সাকিব ৩২, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক ২৪, সোহান ০, মিরাজ ৩, তাইজুল ১৮, কামরুল ০*, আবু জায়েদ ০; গ্যাব্রিয়েল ২/১৯, পল ২/২৫, কামিন্স ১/৩৪, হোল্ডার ৫/৪৪, চেইস ০/২২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৯ ওভারে ১৯/১ (ব্র্যাথওয়েট ৮, স্মিথ ৮*, পল ০*; আবু জায়েদ ০/৮, মিরাজ ০/৮, রাব্বি ০/৩, সাকিব ১/০)।