‘আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো, গ্রামে নিয়ে যাব’
কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের বাড়ি ঝিনাইদহ। তার মা সালেহা বেগম ছেলের জন্য ঢাকায় এসেছেন। এর আগে তিনি কখনো ঢাকায় আসেননি। ছেলের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার সুযোগ তাঁর হলো না। এর আগেই চিনতে হলো ডিবি অফিস, ডিএমপি, শাহবাগ থানা, সিএমএম কোর্ট।
সালেহা বেগমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল মঙ্গলবার, শাহবাগের একটি খাবারের দোকানে বসে। শুরুতেই হাত জোড় করে বললেন, ‘আমার মণিকে তোমরা মাফ করে দাও। ভিক্ষা দাও। আমার মণিকে আমি ঢাকায় আর রাখব না গো। গ্রামে নিয়ে চলে যাব। শুধু মুক্তি দাও। সেও বাঁচুক। আমিও বাঁচি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার মণি তো কোনো অন্যায় করেনি। সে শুধু একটা চাকরি করতে চেয়েছিল। সে তো সরকারি চাকরিই করতে চেয়েছিল। সরকারকে ফেলতে যাবে কেন?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ খানকে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এক ঝলক দেখার জন্য সকাল থেকে সালেহা বেগম দাঁড়িয়ে ছিলেন ডিবি অফিসের ফটকে। দেখে মনে হয়েছে, ছেলে ভালো নেই। সর্বস্ব দিয়ে যে ছেলেকে মানুষ করেছেন, তাঁর যে এমন হাল হবে স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। তিন-তিনটি মামলার আসামি এখন রাশেদ খান। তিনি কি মুক্তি পাবেন? কখনো কি তাঁর কায়ক্লেশে চলা সংসারের দায়িত্ব একমাত্র এই ছেলেটি বুঝে নেবেন? এমন হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘোরে সালেহার। কূলকিনারা পান না। শুধু চান, ছেলে ফিরে আসুক।
প্রথম আলো তথ্য মতে, রাশেদের বাবা নবাই বিশ্বাস রাজমিস্ত্রি, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। রাশেদের দুটি বোন। একজন তাঁর বড়, অন্যটি ছোট। শ্রমজীবী দম্পতি দাঁতে দাঁত চেপে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করে গেছেন। রাশেদ খান এতকাল তাঁদের বিমুখ করেননি।
সালেহা বেগম বলছিলেন, ছেলে পঞ্চম, অষ্টম, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে সরকারি ও ব্যাংকের বৃত্তির টাকা পেয়েছেন। আর বাকিটা তাঁরা জুগিয়েছেন ঘাম ঝরিয়ে। ‘এমনও দিন গেছে, রাশেদের আব্বা হয়তো বাজার থেকে পাঁচ কেজি চাল কিনে এনেছে। পরে ছেলে ফোন করে বইখাতা কিনতে টাকা চেয়েছে। চাল ফিরিয়ে দিয়ে তিনি ছেলেকে টাকা পাঠিয়েছেন। শুধু পানি খেয়ে আমরা রাত পার করেছি। এমবিএ ভর্তির সময় ছাগল বিক্রি করেছি। ভেবেছিলাম, পড়াশোনা শেষ। কষ্টের দিনও শেষ। হলো না।’