বৃহস্পতিবার, ৩১শে মে, ২০১৮ ইং ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

সোনালি ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক

বিশেষ প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলের মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে ধানের সোনালি আভা। বৈশাখের দখিণা বাতাসে দোল খেতে খেতে দেশের প্রধান এ খাদ্যশস্য হাসি ফুটিয়েছে কৃষকদের মুখে; বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের ব্যস্ততা। মাঠের বাম্পার ফলন এখন গোলায় তুলতে ব্যস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষক। যদিও বাজারে কিছুটা মন্দাভাব, তারপরও কষ্টে সৃজিত ফলন আনন্দ-চিত্তেই ঘরে তুলছেন কৃষক।

জেলার বিভিন্ন স্থানে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে বোরোর বাম্পার ফলনের চিত্র। প্রকৃতি এ বছর দুহাত ভরে দিয়েছে কৃষকদের। আবহাওয়া ছিল অনুকূলে, ফলন হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো। পেকেছে মাঠের ধান তাই ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথেই শুরু হয় ব্যস্ততা। স্বর্ণ রঙে পাকা ধান কাটতে শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে কাস্তে হাতে মাঠে ছোটেন কৃষক। ধান কাটা আর আঁটিবাঁধা শেষে ভার করে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির উঠোনে অথবা সুবিধাজনক স্থানে। সেখানে মাড়াইয়ের পর রোদে শুকিয়ে তোলা হবে গোলায় ধান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর,  নাসিরনগর ও সরাইলসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা সরেজমিনে  দেখা গেছে, প্রতিটি কৃষক পরিবারেই এখন নতুন ধানের গন্ধ। মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে ধান কাটা উৎসব। বাড়িতে চলছে মাড়াইয়ের কাজ। আর এসব কাজে কৃষকদের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষাণীদেরও। শত ব্যস্ততার পরও ফলন ভালো হওয়ায় সকল ক্লান্তি ভুলে তাদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে খুশির ঝিলিক। এ চিত্র কেবল উপরোল্লেখিত এলাকাগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়। নতুন ধান গোলায় তোলার এ উৎসব-আয়োজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জেলার ৯টি উপজেলার প্রত্যেক কৃষকের ঘরে।

তবে কয়েকদিন আগে বয়ে যাওয়া কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড় পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়েছে কৃষকদের। অনেক স্থানেই ঝড়ে মাটির সঙ্গে লেপ্টে গেছে ধান ক্ষেত। এসব ধান কেটে বাড়ি নেওয়া কৃষকের জন্য একটু বেশিই বিড়ম্বনার। নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডাগ্রামের কৃষক শফিকুর রহমান বলেন, ‘কিশোর বয়সী ছেলে আর দুজন শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে ট্রাকে ধানের আঁটি তুলছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে শফিক বললেন, ‘বোরো ধানের ফলন এ বছর ভালোই হয়েছে। তবে বাজারে দাম কিছুটা কমে গেছে, অপরদিকে বেড়েছে শ্রমিকের দাম। শুধু তাই নয়, তাঁর মতে, ‘শ্রমিক খোঁজে পাওয়াটাই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আগে যেখানে তিন শ/ সাড়ে তিন শ টাকায় একজন শ্রমিক পাওয়া যেতো- সেখানে এখন ৫০০ টাকায় মিলছে না। তাই বাধ্য হয়েই নিজেকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়; সাথে নিয়ে এসেছি স্কুলপড়ুয়া ছেলেকেও। ‘
তার মতো আরো অনেক কৃষকের সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল শ্রমিক সংকটের কথা। কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর কিংবা গাইবান্দাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেকে আসা এসব শ্রমিকের চাহিদা প্রতিবছরই ইরি-বোরো মৌসুমে বেড়ে যায় । ফলে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় কৃষকদের। তখন পরিবারের অল্পবয়সী সদস্যরাও এগিয়ে আসে সহযোগিতা করতে।
কৃৃষকরা বলেন, ধানের বাজারদর আরেকটু বেশি হলেই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাওয়া বোরোর ফলনের ‘প্রাপ্তিটা’ হতো ‘কাঙ্খিত’। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও বাজারে প্রতিমণ ধান বিক্রি হতো ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায়। কিন্তু এখন ৬০০ টাকার বেশি বিক্রি করা যাচ্ছে না। ‘ ফলে মাঠের ফলন দেখে যতটা খুশি হয়েছিলেন, বাজারদরে ততটা খুশি হতে পাড়ছিনা।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অফিস সূএ বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করেছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা। ‘

তার মতে, ‘সরকারের তরফ থেকে প্রাপ্ত সকল প্রকার সহযোগিতা আর কৃষকদের পরিশ্রমের ফলেই এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
Print Friendly, PDF & Email