বৃহস্পতিবার, ৩১শে মে, ২০১৮ ইং ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

মাদ্রাসায় পড়ুয়া রেহানা ফাতেমা এখন….

ভারতের কেরালার নারী অধিকারকর্মী রেহানা ফাতেমা। কখনো তিনি টপলেস। কখনো যৌনতার অভিনয় করেন। কখনো তরমুজ হাতে নিয়ে নগ্ন হয়ে পোজ দেন। অথচ রেহানা ফাতিমার জন্ম একটি মুসলিম পরিবারে। পড়াশোনা করেছেন মাদ্রাসায়। তিনি নিজেই বলেন, আমি আগে হিজাব পরতাম। নামাজ পড়তাম পাঁচ ওয়াক্ত।

সম্প্রতি কেরালায় একটি কলেজের একজন শিক্ষক মেয়েদের স্তনকে তরমুজের সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করেছেন। এর প্রতিবাদ করেছেন রেহানা। ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে অনলাইনে যে পিটিশন করা হয়েছে, তাতে দ্রুততার সঙ্গে যোগ দেন রেহানা। তিনি উন্মুক্ত বক্ষে তরমুজ সহ পোজ দিয়েছেন। তাতে চারদিকে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ তাকে সমর্থন করেছেন। তার ওই পোস্ট শেয়ার হয়েছে।

৩১ বছল বয়সী রেহানা দুই সন্তানের মা। সরকারি চাকরিজীবি। মডেল। নারী অধিকার কর্মী। তিনি বলেন, নারীদের দেহ নিয়ে মানুষের কেন এত হইচই। একজন নারী তার দেহ দেখাতে পারবে না। এই যে প্রতিবন্ধকতা আমি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলি।

রেহানা যে এবারই নগ্ন হয়ে পোজ দিয়েছেন এমন নয়। তিনি ত্রিসুর পুলিকালিতে ওনাম নামের টাইগার ড্যান্সে অংশ নিয়েছেন ২০১৬ সালে। ওই অনুষ্ঠানটি শুধু পুরুষদের জন্য। সেখানে যোগ দেয়া একমাত্র নারী এই রেহানা। তিনি অংশ নিয়েছেন ২০১৪ সালের প্রেমবিরোধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ‘কিস অব লাভ’ প্রচারণায়।

রেহানা বলেন কেউই রাতারাতি বদলে যায়না, বিপ্লবী বনে যায় না। জীবনের নানা বিরুপ অভিজ্ঞতার কারণেই মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।

রেহানার জন্ম রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে হলেও ১২ বছর বয়সে তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। তখন তাদের পরিবারে সদস্য মাত্র তিনজন। তাও নারী। একজন হলেন রেহানা। অন্য দু জনের একজন তার মা ও বোন।

তার পিতার মৃত্যুর পর বিরুপ কিছু অভিজ্ঞতার কারণেই তিনি বদলে যান। রেহানা বলেন, তারা বাবার মৃত্যুর পর তাদের ঘরে আর কোনো পুরুষ ছিল না। ফলে আশে-পাশের অনেক পুরুষ তাদের বাড়িতে ঢুকতে চাইত। তারা মদ্যপ হয়ে আসতো। অন্ধকারে আসতো। ডাকাডাকি করতো। এ নিয়ে তখন অনেক শোর চিৎকার করেছেন রেহানা। কিন্তু সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসেন নি। আর এর ফলেই ধর্ম নিয়ে তার মোহমুক্তি ঘটে। এসব পরিস্থিতিই রেহানাকে পাল্টে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

একবার তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিলেন। তারই একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু তাতে রেহানার পোশাক নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। তাতে তিনি পরেছিলেন শর্টস, স্লিভলেস টি-শার্ট। সঙ্গে সঙ্গে তার চরিত্র নিয়েও কথা বলাবলি হলো।

রেহানা বলেন, ওই পিকনিকে আমার পার্টনার ও সন্তানরাও ছিল। আমার পার্টনার ছিল খালি গায়ে। অথচ পুরুষ হওয়ায় তাকে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু আমাকে হুমকিও দেয়া হলো। ফলে আমাকে চিন্তায় ফেলে দিল বিষয়টি। এর জবাবে তিনি নিজের বিকিনি পরা একটি ছবি পোস্ট করলেন। বললেন, শরীর আমার। কি পরবো সেটা একান্তই আমার বিষয়। এমন কি কিছু আদৌও পরবো কিনা তাও আমার অধিকার।

রেহানা প্রথম ‘একা’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সেখানে তিনি একজন উভলিঙ্গ ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেন। সিনেমাটিতে তিনি পুরোপুরি নগ্ন হয়ে অভিনয় করেছিলেন।

বাবার মৃত্যুর পর রেহানা তার বাবার সরকারি চাকরিটি পান। চাকরির পাশাপাষি পড়াশোনা করেন। এবং নানা সামাজিক ইস্যুতে প্রতিবাদ করেন ফেসবুকে।

রেহানা বর্তমানে সিনেমা নির্মাতা মনোজ এর সঙ্গে থাকেন। সঙ্গে আছে তাদের দুই মেয়ে। এবং মনোজের বাবা-মা।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

Print Friendly, PDF & Email