‘সুপার ম্যালেরিয়া’ আতঙ্ক, সতর্ক বাংলাদেশ
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ওষুধ প্রতিরোধী ‘সুপার ম্যালেরিয়া’ বিশ্বব্যাপী ভয়ানক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই সুপার ম্যালেরিয়া হচ্ছে ম্যালেরিয়া জীবাণুুর বিপজ্জনক সংস্করণ, যা ম্যালেরিয়া রোগ সারাতে বর্তমানে প্রচলিত প্রধান ওষুধ আর্টেমিসিনিনে নিরাময়যোগ্য নয়। স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নাল ‘দ্যা ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিস’-এ প্রকাশিত নিবন্ধের বরাত দিয়ে বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এ খবর দিয়েছে।
এদিকে সুপার ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিস কন্ট্রোল প্রোগ্রামের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা।
শনিবার সন্ধ্যায় তিনি সমকালকে বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সুপার ম্যালেরিয়া বিস্তারের খবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে রয়েছে। থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলে এই ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে এর বিস্তার না থাকলেও সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির-সংশ্লিষ্ট এলাকায় একটি ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ওই নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা আরও বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য তিন জেলা, কক্সবাজার, সিলেটসহ কয়েকটি অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে ওইসব এলাকায় আক্রান্ত ও মৃতের হার হ্রাস পেয়েছে। এর পরও সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি। ওইসব অঞ্চলের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আইসিডিডিআরবির সঙ্গে আলোচনা চলছে। খুব শিগগির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি।
ব্যাংককে অঙ্ফোর্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ইউনিটের একটি গবেষক দলের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যালেরিয়া অনিরাময়যোগ্য হয়ে পড়লে তা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। দলের প্রধান অধ্যাপক আরজেন ডনড্রপ সুপার ম্যালেরিয়াকে মারাত্মক হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে আমরা আশঙ্কা করছি- এটি বিস্তার লাভ করে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
রাশিয়ার সংবাদ মাধ্যম আরটি নিউজ জানায়, সুপার ম্যালেরিয়ার জীবাণুুবাহী মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই রোগ ২০০৮ সালে প্রথম কম্বোডিয়ায় ধরা পড়ে। পরে থাইল্যান্ডের কয়েকটি অঞ্চল ও লাওসে ধরা পড়ার পর এটি বর্তমানে দক্ষিণ ভিয়েতনামেও ছড়িয়ে পড়েছে। ল্যানসেটের নিবন্ধে গবেষকরা সুপার ম্যালেরিয়া যে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত ওষুধ আর্টেমিসিনিন প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, তার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
বিবিসি বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর ২১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। রক্তচোষা মশার মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায়। এটি শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় পিপারকুইনের সমন্বয়ে আর্টেমিসিনিন প্রথম পছন্দ। তবে সুপার ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে আর্টেমিসিনিনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় এটির জীবাণুরা পিপারকুইনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তারও প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। সুপার ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ওষুধে ব্যর্থ হওয়ার হার বাড়ছে বলে ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে। অধ্যাপক ডনড্রপ জানান, ভিয়েতনামের রোগীদের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই সুপার ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা ব্যর্থ হচ্ছে। আর কম্বোডিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে ব্যর্থতার হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। আফ্রিকায় ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার হার মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে। পৃথিবীতে যত ধরনের ম্যালেরিয়া আছে, তার ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে আফ্রিকায়।
অধ্যাপক ডনড্রপ জানান, ম্যালেরিয়া আবার চিকিৎসারোধী হয়ে ওঠার আগেই একে নির্মূল করতে হবে। আমরা অনেক মৃত্যু দেখেছি।
এ রোগের জীবাণু আফ্রিকায় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে- এমন আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। কারণ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তদের ৯২ শতাংশই আফ্রিকায়।