সোমবার, ১৯শে জুন, ২০১৭ ইং ৫ই আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ঘরে বসেই পেনশন

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ১৬, ২০১৭
news-image

---

সেপ্টেম্বর মাস থেকে অবসরপ্রাপ্ত সাড়ে ৬ লাখ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘরে বসেই পেনশনের টাকা পাবেন। পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে না রেখে অর্থ বিভাগের অনুকূলে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আলাদা একটি পেনশন অফিস করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সরকারের এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। পেনশন সুবিধাভোগীরা তাদের জন্য সহজ হয় এমন যে কোন ব্যাংকের, যে কোন শাখার হিসাব নম্বর দিতে পারবেন। যাদের ব্যাংক হিসাব নেই বা থাকলেও বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পেনশন পেতে চান, তাদের টাকা সেখানেই পাঠানো হবে।
অর্থাৎ ঘরে বসেই সব ধরনের আর্থিক সুবিধা পাবেন একজন পেনশনভোগী। এতে পেনশনভোগীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর শতভাগ পেনশন উত্তোলনকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নববর্ষের ভাতা দেয়ার বিধানের ক্ষেত্রে নতুন ব্যয় বেড়েছে। যদিও বাংলা নববর্ষের ভাতা ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়। প্রস্তাবিত অর্থবছরে সরকারী কর্র্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ৮২০ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, পেনশনার ডাটাবেজে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ২৯ হাজার ৫৯৯ জনের নাম নিবন্ধিত হয়েছে। তারা সবাই বেসামরিক সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বা তাদের পরিবারের পেনশন সুবিধাভোগী। পর্যায়ক্রমে দেশের সব পেনশনভোগীকে এ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মুসলিম চৌধুরী বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশনের টাকা যাতে ঘরে বসেই পেতে পারেন সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। মাসে মাসে পেনশনের টাকার জন্য এজি অফিস বা ব্যাংকে গিয়ে আর লাইন ধরতে হবে না।
প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব বা বিকাশ হিসাব নম্বরে টাকা পৌঁছে যাবে। এরপর যে কোন সময়, যে কোন স্থান থেকে তা তোলা যাবে। তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই যাতে পেনশনভোগীরা এ সুবিধা পেতে পারেন সে লক্ষ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়, বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার করে আধুনিক, যুগোপযোগী ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থা প্রবর্তনে বর্তমান সরকার প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। বিদ্যমান সরকারী পেনশন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রথম ধাপে শতভাগ পেনশন নগদায়নের বিধান রহিত করা হয়েছে। পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে রাখার পরিবর্তে অর্থ বিভাগের অনুকূলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নে আলাদা একটি পেনশন অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে।
জানা গেছে, অফিস অব দ্য কন্ট্রোলার জেনারেল অব এ্যাকাউন্টসের বা মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) অধীনে পেনশন অফিসটি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পেনশন ব্যবস্থা সহজ করার জন্য কয়েক বছর ধরে কাজ করছে সরকার। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বেশকিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এর আলোকে কল্যাণ তহবিল, সরকারী প্রভিডেন্ট ফান্ড, চাকরিজীবী অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার আগেই যাতে পান, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
পেনশনের জন্য যেসব দফতরের ছাড়পত্র নিতে হয়, সেগুলো আর পেনশনারকে সংগ্রহ করতে হবে না। কল্যাণ কর্মকর্তা নিজ দায়িত্বে তা সংগ্রহ করবেন। নির্ধারিত সময়ে সংগ্রহ করতে না পারলে পেনশনার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোন আপত্তি নেই বলে ধরে নেয়া হবে। এছাড়া বর্তমানে চাকরিজীবী স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী আজীবন পেনশন সুবিধা পান। কিন্তু চাকরিজীবী স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত এ সুবিধা পান। এ বৈষম্যও দূর করার কথা ভাবছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি খাতে ব্যয় হবে সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। বাকি ব্যয় ধরা হয়েছে দেশী-বিদেশী ঋণের সুদ, পেনশন গ্র্যাচুইটি, প্রণোদনাসহ আনুষঙ্গিক খাতে। চলতি অর্থবছরে এ ব্যয় ছিল ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা (সংশোধিত)। এ হিসাবে অনুন্নয়ন ব্যয় বাড়বে ৪০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।

এ জাতীয় আরও খবর