শুক্রবার, ৭ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৩শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

জেন্ডার গ্যাপ: বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভাল অবস্থানে

AmaderBrahmanbaria.COM
জুন ৫, ২০১৭

---

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জেন্ডার গ্যাপ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সকল দেশের তুলনায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। আর বৈশ্বিক হিসেবে, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট, ২০১৬ (ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম) অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৪টি দেশের মধ্যে ৭২তম। এই অবস্থান গত ২০০৬ সালে ছিল ১১৫টি দেশের মধ্যে ৯১তম।

জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন ২০১৭-১৮-এ এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গত ১ জুন বাংলাদেশের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা উপলক্ষে এই পুস্তক প্রকাশ করা হয়।

জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট, ২০১৬ অনুযায়ী, জেন্ডার গ্যাপ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২, ভারতের ৮৭, শ্রীলংকার ১০০, নেপালের ১১০, মালদ্বীপ ১১৫, ভুটান ১২১ ও পাকিস্তানের অবস্থান সর্বনিম্ন ১৪৩-এ রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে এক লাখ ১২ হাজার ১৯ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে ৪৩টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য পৃথক জেন্ডার বাজেট উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও ১৬টি বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সহস্্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সফলতা অর্জন করেছে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দারিদ্র্য হার হ্রাস, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতা আনয়ন, প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস, পাঁচ বছরের নীচে শিশু মৃত্যু হ্রাস, টিকাদানের কভারেজ বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে সফলতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ২০১৫ সালে গুরুত্বপূর্ণ ‘উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে। জাতিসংঘ মহিলা সংস্থা ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্লানেট ফিফটি ফিফটি চ্যাম্পিয়ন’ সম্মানে ভূষিত করেন এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম নারী ক্ষমতায়নে ব্যাপক অবদান রাখার জন্য তাঁকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে।

প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। এর মধ্যে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ এক লাখ ১২ হাজার ১৯ কোটি টাকা যা মোট বরাদ্দের ২৭.৯৯ শতাংশ এবং জিডিপি’র ৫.০৪ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪০টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের জন্য ৯২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার নারী উন্নয়ন বাজেট উপস্থাপন করেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, গতবারের মতো এ বছরও জেন্ডার বাজেটকে তিনটি অংশে ভাগ করে নারী উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর প্রথম অংশে নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে চারটি মন্ত্রণালয় ও পাঁচটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এগুলো হলো- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়। এ বছরের নারী উন্নয়ন বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে দুটি বিভাগ এবং শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে দুটি বিভাগকে জেন্ডার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

দ্বিতীয় অংশে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজার ও আয়বর্ধক কাজে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আটটি মন্ত্রণালয় ও একটি বিভাগের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জেন্ডার বাজেটের তৃতীয় অংশে সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে নারীর সুযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়। এতে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও ১০টি বিভাগের জন্য জেন্ডার বাজেটের প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক ও পরিবহন বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বছর জেন্ডার বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জায়গায় জননিরাপত্তা বিভাগ ও সুরক্ষা সেবা বিভাগ জেন্ডার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অর্থমন্ত্রী মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রথম ৪টি মন্ত্রণালয়ের জন্য জেন্ডার বাজেট প্রস্তাব করেন। ওই বছর নারী উন্নয়নে বরাদ্দ ছিলো ২৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ২০১০-১১ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে ১০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০টি মন্ত্রণালয়ে ৪২ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা, এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৫টি মন্ত্রণালয়ে ৫৪ হাজার ৩০২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪০টি মন্ত্রণালয়কে অন্তর্ভুক্ত করে জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন করা হয়। এই ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।