সোমবার, ১০ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৬শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আবারও বরখাস্ত মেয়র মান্নান

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৬, ২০১৭

---

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় আবার বরখাস্ত হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এমএ মান্নান। ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত। বিষয়টি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে বরখাস্ত করেছে।

নাশকতার একাধিক মামলায় আঠাশ মাস বরখাস্ত থাকার পর গত ১৮ জুন উচ্চ আদালতের নির্দেশে মান্নান মেয়রের পদ ফিরে পেয়েছিলেন মান্নান। তবে করপোরেশনের বেশিরভাগ কাউন্সিলর তার সঙ্গে বসতে রাজি হচ্ছেন না।

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের দরিদ্র ও ত্রাণ তহবিলের ৪৯ লাখ ১ হাজার ৮৪৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মান্নানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০১৬ সালের ১৩ জুন দুদকের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম বাদী হয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। মান্নান ছাড়াও সিটি করপোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়াকেও মামলায় আসামি করা হয়। দীর্ঘ তদন্তের পর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হলে আদালত তা গ্রহণ করেছে।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, এমএ মান্নান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে করপোরেশনের ত্রাণ ও দরিদ্র তহবিলে মোট ১ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার ১৩২ টাকা আয় দেখানো হয়। মান্নান ত্রাণ ও দরিদ্র তহবিলের আয় কোনও ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ‘ক্যাশ ইন হ্যান্ড’ হিসেবে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার কাছে সংরক্ষিত রাখেন। এর মধ্যে ৯০ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪৬ টাকা খরচ দেখানো হয়। এই খরচের মধ্যে ৪৯ লাখ এক হাজার ৮৪৮ টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভূয়া গ্রহীতা দেখিয়ে ৯৯৯টি ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করার প্রমাণ পায় দুদক।

মেয়র মান্নান এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া পরস্পর যোগসাজশে অনুদান এবং ব্যয় দেখিয়ে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়। দ-বিধির ৪০৯/১০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এই মামলা করা হয়।

গত বছরের ১৫ এপ্রিল রাতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকায় মান্নানকে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে আসামি করে জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর ও টঙ্গী থানায় আলাদা মামলা হয়।

এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যাত্রীবাহীবাসে পেট্রলবোমা হামলার মামলায় ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস এ বাসা থেকে মান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর গত বছরের ২ মার্চ তিনি জামিনে কারামুক্ত হন।

জয়দেবপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় মান্নানের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র ২০১৫ সালের ১২ মে গাজীপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে গ্রহণ করলে ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে মেয়র পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করে।

মান্নানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০টি মামলা রয়েছে। তার অবর্তমানে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এম এ মান্নান। এ সময় সৌদি আরবে হাজীদের বাড়িভাড়ার অন্তত ৫০০ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সাধারণত কাবা শরিফ ও মদিনা শরিফের কাছাকাছি হাজিদের জন্য বাড়িভাড়া করতে হয়। কিন্তু ১৯৯২ সালে কাছাকাছি বাড়িভাড়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হলেও তিন-চার কিলোমিটার দূরে বাড়িভাড়া করা হয়। এতে হাজীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওই ঘটনায় সৌদি আরব ও বাংলাদেশে হাজিরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। পরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে মান্নাকে সরিয়ে দেয়া হয়।

সূত্র : ঢাকাটাইমস

এ জাতীয় আরও খবর