বাবরি মসজিদ ইস্যু : বিজেপির তিন শীর্ষ নেতা অভিযুক্ত
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস ইস্যুতে দেশটির একটি বিশেষ আদালত ক্ষমতাসীন বিজেপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে অভিযুক্ত করেছেন।
১৬ শতাব্দীতে নির্মিত ওই মসজিদ ধ্বংসের জন্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি লাল কৃষ্ণ আদভানি, মুরলি মনোহর জোশি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র’- এর অভিযোগ এনেছেন আদালত।
১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য অশালীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে, যা তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে ভারতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। ওই দাঙ্গায় প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যায়।
হিন্দুদের দাবি, প্রভু রামের জন্মস্থানে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৬ শতকে এক মুসলিম শাসক একটি মন্দির ধ্বংস ধরে সেখানে মসজিদটি নির্মাণ করেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) বরাবরই বলে আসছে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ছিল পরিকল্পিত।
এপ্রিল মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য অভিযুক্ত তিন শীর্ষ রাজনীতিক অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হবেন। এরপর এ ইস্যুতে বিশেষ আদালত গঠন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে আরো বলেন, দুই বছরের মধ্যে এ বিচার শেষ হতে হবে এবং মামলা পরিচালিত হবে ‘ডে-টু-ডে ভিত্তিক’। আদালতের কাজ মুলতবি রাখা যাবে না।
মঙ্গলবার আদভানি, জোশি ও ভারতী বিশেষ আদালতে উপস্থিত হন। আদালত তাদের উদ্দেশে বলেন, বিচার চলার সময় কোনো অবস্থাতেই শারীরিকভাবে অনুপস্থিতি থাকতে পারবেন না তারা।
তবে জনপ্রতি ৫০ হাজার রুপি ব্যক্তিগত জামানত নিয়ে তিনজনকেই জামিন দিয়েছেন আদালত।
২০১১ সাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে এ ইস্যুতে মামলার শুনানি চলছে। এর আগে হাইকোর্ট এক রায়ে বিরোধপূর্ণ পবিত্র ভূমির দুই-তৃতীয়াংশ হিন্দুদের এবং বাকি অংশ মুসলিমদের অধিকারে রাখার রায় দিয়েছিলেন। এ রায় খারিজ না করে নতুন করে শুনানি শুরু করেন সুপ্রিম কোর্ট।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট ২০১০ সালে ওই ঐতিহাসিক রায়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন। এক. বাবরি মসজিদ প্রভু রামের জন্মস্থানে নির্মাণ করা হয়। দুই. একটি মন্দির ধ্বংস করে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় এবং তিন. ইসলামের বিধিবিধান মেনে মসজিদটি নির্মিত হয়নি। এ রায় ছিল হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিরোধপূর্ণ পবিত্র ভূমি নিয়ে প্রথম রায়।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর হিন্দুরা চাইছে সেখানে একটি মন্দির তৈরি করা হোক, বিপরীতে মুসলিমরা চাইছে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হোক। এ ইস্যুতে ভারতের রাজনীতি প্রায়ই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ বছরের শুরুর দিকে ভারতের প্রধান বিচারপতি জেএস খেহার হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, দুই সম্প্রদায় বসে এ বিবাদ মীমাংসা করে নিক। তিনি প্রস্তাব দেন, প্রয়োজনে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে রাজি আছেন তিনি।
এই মামলা ভারতের দীর্ঘ দিন চলা মামলাগুলোর মধ্যে একটি। মামলার অধিকাংশ বাদী-বিবাদী এরই মধ্যে মারা গেছেন।
তথ্যসূত : বিবিসি অনলাইন ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন