দেরি করে ঘুমানোর ফলেই ওজন কমছে না!
অনলাইন ডেস্ক : বেশিরভাগ মানুষের জীবনই নয়টা-পাঁচটার কর্মক্ষেত্রে আবদ্ধ। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা আবার উল্টো। তাদের কাজ শুরুই হয় রাত নেমে আসার পর। আবার ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথে শেষ হয় তাদের কাজ।
রাত জেগে কাজ করলে দেহ ঘড়ির স্বাভাবিকতায় ছন্দপতন হয়, তছনছ হয়ে যায় দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আর এর ফলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয় তা হয় দীর্ঘমেয়াদি। যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্যই পেয়েছেন। এক খবরে জানিয়েছে বিবিসি অনলাইন।
পুলিশ অফিসারদের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, তারা রাতে অথবা সন্ধ্যার শিফটে কাজ করলে তার ফলস্বরূপ কম ঘুমিয়ে থাকেন। তাদের ঘুম হয় ছয় ঘণ্টা বা তারও কম। আর এই ঘুমের মানটাও হয় খারাপ অর্থাৎ গভীর ঘুম হয় না মোটেই। স্লিপ জার্নালের আরেক গবেষণায় জানা যায়, নাইট শিফটে কাজ করলে শরীরে সেরোটোনিনের মাত্রা কম হয়, যার ফলে ভালো ঘুম হয় না।
গবেষকেরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, রাতের বেলা কাজ করার ফলে উচ্চরক্তচাপ, হূদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকির সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্যের স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকেরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখেছেন, রাত জেগে কাজের যে কুফল তা গভীরতর আণবিক স্তরে পরিলক্ষিত হয়। রাত জাগার ক্ষতির পরিমাণ গবেষকেদের কাছে আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি মানুষেরই পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। কেউ যদি টিভি দেখে বা কম্পিউটারে কাজ করে ঘুমাতে যায়, তার মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে। ফলে ভালো ঘুম হয় না। এতে করে সে ক্ষুধামান্দ্য, বিষণ্নতা, স্নায়ুবৈকল্য ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে পারে। অনেকে রাতে জাগার জন্য ঘন ঘন চা-কফি খান, এটিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
শিফটে কাজ করেন যারা, তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যাবে অনেক। বিশেষ করে পুরুষদের মাঝে এর মাত্রা অনেক বেশি হয়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২২৬,৬৫২ জন ব্যক্তির মাঝে যারা নাইট শিফটে কাজ করছিলেন তাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা থাকে অন্যদের তুলনায় ১.০৯ গুন। রাতে কাজ করলে ইনসুলিনের কাজ প্রভাবিত হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে।
আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই দিনে জেগে থাকা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ায় অভ্যস্ত। এই ব্যাপারটাকে পাল্টে দিয়ে একজন মানুষ যখন দিনে ঘুমান এবং রাতভর জেগে থাকেন, তখন কিছু সমস্যা হতে বাধ্য। এতে মুটিয়ে যাবার ঝুঁকি রয়ে যায় অনেক বেশি। মূলত ঘুমের অনিয়মের কারণেই এ সমস্যা দেখা যায়।
অকারণ রাতজাগার ‘বদ অভ্যাস’ পরিহার করতে সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। কারও যদি পাঁচটায় ঘুমানোর অভ্যাস থাকে, চাইলেই সে পরদিন ১২টায় ঘুমাতে পারবে না। ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। প্রথম দিন চারটা, তারপর রাত তিনটা, কিছু দিন পর দুইটা, এভাবে আস্তে আস্তে সময়মতো ঘুমানোর অভ্যাস রপ্ত করতে হবে।