রেলওয়ের কোপানলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
---
আমিরজাদা চৌধুরী,ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে : পূর্বাঞ্চল রেলপথের অনেক ষ্টেশনের চাইতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ষ্টেশনের আয় রোজগার বেশী। কিন্তু সে তুলনায় এখানকার যাত্রীদের প্রতি রেলওয়ের সুনজর নেই। বার বার তাদের কোপানালেই পড়তে হয় এখানকার যাত্রীদের। এমন অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। সম্প্রতি ৪টি আন্ত:নগর ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের আসন কমিয়ে অর্ধেকে নিয়ে আসা হয়েছে। যেখানে আসন বাড়ানো দরকার সেখানে উল্টো কমানো হলো। আর আসন কর্তনের খবরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এখানকার রেলযাত্রীদের মধ্যে। অন্যান্য ট্রেনেও যাত্রী অনুপাতে আসন নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যেসব গন্তব্যে বেশী যাত্রী যাতায়ত করে কোন কোন ট্রেনে সেখানে যাওয়ার আসনই বরাদ্দ রাখেনি রেলকর্তৃপক্ষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল ষ্টেশন সুত্র জানায়- গত ১৪ ই জানুয়ারী থেকে ঢাকাগামী মহানগর গোধুলী,তূর্না নিশীথা,চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ও তূর্না নিশীথায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসন কমিয়ে দেয়া হয়। ঢাকাগামী মহানগর গোধুলীতে শোভন শ্রেনীর আসন ১৬৫ এর স্থলে করা হয়েছে একশো,তূর্না নিশীথায় শোভন চেয়ার ৬০টির স্থলে ৪০টি করা হয়েছে। আর চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীতে এসি ১৬ টি আসন থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৬টি,শোভন চেয়ার একশোর স্থলে ৫০ আসন করা হয়েছে। এই ট্রেনে কুমিল্লার যাত্রীদের চাহিদা থাকলেও ২৫টি আসন থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১৫টি। লাকশাম যাতায়তে কোন আসনই দেয়া হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ফেনী আসন দেয়া হয়েছে ১০টি। চট্টগ্রামগামী তূর্না নিশীথা ট্রেনে শোভন চেয়ার ৭০ এর স্থলে করা হয়েছে ৫০টি।এসি আসন আগে ছিলো ৫টি,তাই আছে। রেলসুত্র জানায়, এ ৪টি ট্রেনে নতুন কোচ (সবুজ রংয়ের) সংযোজনের পরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসন কমানো হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম,ঢাকা-সিলেট,ঢাকা-নোয়াখালী পথে চলাচলকারী অন্যান্য আন্ত:নগর ট্রেনেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্যে পর্যাপ্ত আসন নেই। অথচ প্রেেত্যকটি ট্রেনে আসনের দ্বিগুন-তিনগুন বেশী যাত্রী দাড়িয়ে ভ্রমন করছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন আড়াই থেকে তিনহাজার যাত্রী এই ষ্টেশন থেকে বিভিন্ন ট্রেনে নানা গন্তব্যে ভ্রমন করে। এর বিপরীতে বিভিন্ন আন্ত:নগর ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্যে আসন আছে প্রায় এক হাজার। রাজস্ব আয় হয় প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কু -নজরে ক্ষুব্দ এখানকার যাত্রীরা। শাহজাহান আলম সাজু নামের এক যাত্রী বলেন- প্রতিদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে যাত্রী বাড়ছে। আর রেলওয়ে আসন কমাচ্ছে। সুযোগ-সুবিধে বঞ্চিত করছে আমাদের। তা না করে এখানকার যাত্রীদের জন্যে সুবিধে বাড়ালে রেলওয়েই লাভবান হতো। তাদের আয় রোজগার বাড়তো।
সকাল ১০ টার ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেসে শোভন শ্রেনীর আসন বরাদ্দ আছে ১৭০ টি।
কিন্তু এই ট্রেনটিতে অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াইশো যাত্রী দাড়িয়ে ভ্রমন করছে। সিলেট থেকে ঢাকামুখী জয়ন্তীকা এক্সপ্রেসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্যে আসন বরাদ্দ মাত্র ১০টি। অথচ এই ট্রেনে দাড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা যাচ্ছে এক-দেড়শো যাত্রী। চট্টলা এক্সপ্রেসে আসন রয়েছে ৭০টি,ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেসে শোভন শ্রেনীর আসন বরাদ্দ ১২৭টি,প্রথম কেভিন ৩টি ও প্রথম চেয়ার ৪টি,ঢাকাগামী পারাবত একপ্রেসে আসন রয়েছে এসি ১০টি,শোভন চেয়ার ৪০টি। সকালের উপকূলের ঘন্টা দেড়েক পর সিলেট থেকে আসা কালনী এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিক্রম করে। কিন্তু এই ট্রেনটির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ষ্টেশনে যাত্রবিরতী নেই। ষ্টেশনের কর্মকর্তারা বলছেন- এই ট্রেনটি যাত্রী বিরতী করলে উপকূল ও চট্টলার যাত্রী চাপ অনেক কমে যেত। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দেড় ঘন্টায় ঢাকা পৌছে। সেক্ষেত্রে যাত্রীরা দাড়িয়েও ভ্রমন করতে পারতো। সম্প্রতি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ট্রেনটির যাত্রা বিরতীর দাবী উঠেছে। এই চাহিদার বিষয়টি জেলা প্রশাসন থেকে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সুত্র জানায় । চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহের মধ্যে চলাচলকারী বিজয় এক্সপ্রেসেরও যাত্রা বিরতী নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ময়মনসিংহ যাতায়তেরও চাহিদা রয়েছে। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সিলেট আসন রয়েছে এসি ৫টি,শোভন চেয়ার ২০টি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুলাউড়া ৫টি,শ্রীমঙ্গল ৫টি,সিলেটগামী জয়ন্তীকায় আসন রয়েছে ১০টি,চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেসে সুলভ শ্রেনীর ৫০টি,ফাষ্টক্লাস কেভিন ৬টি,নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-নোয়াখালী আসন ৯টি,মাইজদীকোট ৩টি,সোনাইমুড়ি ৩টি,চৌমহনী ৫টি আসন রয়েছে। এই ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লা ও লাকশামের কোন আসন নেই। চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্যে আসন রয়েছে শোভন শ্রেনীর ১৩১টি,শোভন চেয়ার ২০টি,ফাষ্টক্লাস চেয়ার ৪টি। সব ট্রেনেই আসনের বেশী যাত্রী হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত রেলষ্টেশন মাষ্টার মো: শোয়েব বলেন-আসন কমিয়ে দেয়ায় যাত্রীরা বেশী পরিমান সিটের সুবিধে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ঠিকই। তবে কালনী এক্সপ্রেসে যদি ২টি নতুন বগি সংযোজন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্যে ৮০টি সীটের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে অন্যান্য ট্রেনে যাত্রী চাপ কমবে। কালনীর ষ্টপেজ হলে সিট না পেলেও যাত্রীরা দাড়িয়ে কম সময়ে ঢাকায় চলে যেতে পারবে।