g ভোট দিবে জ্বীন পেত্নী ভূত : নৌকা না করলেই গ্রেপ্তার, সর্বত্র আতঙ্ক | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ১৯শে আগস্ট, ২০১৭ ইং ৪ঠা ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

ভোট দিবে জ্বীন পেত্নী ভূত : নৌকা না করলেই গ্রেপ্তার, সর্বত্র আতঙ্ক

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ২১, ২০১৬

---

up electionসরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : গত ৭ এপ্রিল জেলা আ’লীগের সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকারের বক্তব্যকে পুঁজি করেই চলছে সরাইলের নির্বাচনী প্রচারনা। সরকার দলীয় প্রার্থী ও কর্মীরা সারাক্ষণ চাউর করছেন “ভোট দিবে জ্বীন পেত্নী ও ভূতে। নৌকা না করলে যে কোন সময় গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে ভোট। ক্ষমতায় থেকে আ’লীগ আবার ফেল করে কিভাবে?” এ ছাড়া রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রাণ নাশের হুমকি। এসব প্রচারণায় অনেকটা গুটিয়ে রয়েছে বিএনপি। কিছুটা চাপে আছে আ’লীগের বিদ্রোহী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। গত কয়েক দিনে ৩-৪ জন গ্রেপ্তারের পর ৯ ইউনিয়নেই বিরাজ করছে আতঙ্ক। রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত গ্রামের বাজার চায়ের দোকান রাস্তা ঘাটে নির্বাচনের আলোচনায় থাকতো মাতোয়ারা। আর এখন রাত ৯টার পরই গ্রেপ্তার আতঙ্কে অধিকাংশ এলাকা হয়ে পড়ে জনমানব শুন্য। বিরাজ করে সুনসান নিরবতা। সর্বত্র শুধু হ্যাঁ হুতাশ। ২৩ তারিখের নির্বাচন আদৌ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে কিনা। এ প্রশ্ন এখন প্রতিটি গ্রামে পাড়ায় ও মহল্লায়। গত ৩ দিনে সরজমিনে জানা যায়, রাত পোহালেই নির্বাচন। সরাইলের অধিকাংশ এলাকায় আ’লীগের বিদ্রোহী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা রয়েছে সুবিধা জনক অবস্থায়। এতে অনেকটাই টেনশন বেড়ে গেছে সরকার দলীয় প্রার্থী, দলটির স্থানীয় ও উপজেলার নেতাদের। তাই তারা তৃণমূলে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কখনো হাঁসছেন। কখনো না পাওয়ার সম্ভাবনার ক্ষোভে হচ্ছেন উত্তেজিত। কিছু আ”লীগ নেতা দিনে করছেন নৌকা। আবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন। অরুয়াইল ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হাকিম ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার মধ্যে ত্রিমূখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আ’লীগের প্রভাবশালী নেতার চাপে সেখানকার জাতীয় পার্টির নেতাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। আবদুল হাকিম বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আমার নেতা কর্মীদের হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। চুন্টা ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থী মোঃ শাহজাহান মিয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ হাবিবুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা । ভোটের মাঠে তাদের চেয়ে কোন অংশেই পিছিয়ে নেই জাপা’র প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর মিয়া। ইতিমধ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে শাহজাহান মিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রাণনাশের হুমকি ও তার সমর্থকদের গ্রেপ্তার মামলা মারধরের ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছেন হাবিবুর রহমান। সেখানে সকাল ১০টার মধ্যে ভোট শেষ করার বিষয়টিও চাউর রয়েছে। সেখানে কবির নামের দরিদ্র যুবলীগ নেতাকে প্রথমে অভিযোগ ছাড়া গ্রেপ্তার ও জামিনের পর অন্য উপজেলার দাঙ্গার একটি মামলায় শওন এরেষ্ট করায় গোটা চুন্টায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে এখানে কোন ধরনের সভা সমাবেশ ও মিছিল করছেন না বিএনপি প্রার্থী মোঃ জয়নাল উদ্দিন রাজু। সরাইল সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ১১ প্রার্থী। এখানে স্বতন্ত্র সহ চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন ভোটাররা। তবে এখানেও চলছে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান। গত শুক্রবার আরিফাইল গ্রামের বিএনপি’র কর্মী শওকত আলী (৫৫) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভয়ে গুটিয়ে যায় এখানকার বিএনপি। প্রার্থী আব্দুল জব্বার বলেন, আমার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। আমিই এখন গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। আর কর্মীরা তো ভয় পাচ্ছেই। শাহবাজপুর ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থী খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান উদ্দিন খালেদের মধ্যে মূল লড়াইয়ের কথা ভাবছেন। কিন্তু পিছিয়ে নেই বিদ্রোহী প্রার্থী রাজিব আহমেদ রাজ্জি ও বিএনপি প্রার্থী আমান মুন্সি। সম্প্রতি সেখান থেকে মহিউদ্দিন সরকার নামের এক লোককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফলে সেখানে বিএনপি সহ অন্যান্য দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। রাজ্জি তার কর্মীদের গ্রেপ্তারের হুমকির অভিযোগে নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। শাহজাদাপুর ইউনিয়নে সুবিধা জনক অবস্থানে নেই সরকার দলীয় প্রার্থী শহিদুজ্জামান। স্থানীয় লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন ও সাবেক চেয়ারম্যান জাপা’র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম খাদেমের মধ্যে মূল লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম খাদেম বলেন, সকাল ১০টার মধ্যে সীল মেরে ভোট শেষ করা হবে। আর আমাকে ও আমার সমর্থকদের উর্শিউড়া পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন আ’লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। জনৈক যুবলীগ নেতা জানান, এখানে নৌকা না করলেই পুলিশ গ্রেপ্তার করবে বলে সাফ জানিয়েছেন আ’লীগের স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা। মলাইশ গ্রামের এক সভায় নৌকার নির্বাচন না করলে কয়েক হাজার সমর্থককে দল থেকে বহিস্কারের ঘোষনা দিয়ে বেকায়দায় পড়েন উপজেলার প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা। এতে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল ওই গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন। আরেক নেতার নমনীয়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। নোয়াগাঁও ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থী শেখ মুছলেহ উদ্দিন হেলালের অবস্থা তেমন ভাল নেই। সেখানকার লোকজনের সাফ কথা হেলালকে ইউনিয়নের ৮০ ভাগ লোকই চিনে না। তাকে পাস করানো কঠিন। সেখানে নির্বাচনী কর্মকান্ডেও তেমন গতি নেই। তেরকান্দা গ্রামের যুবলীগ নেতা মোঃ হারুন মিয়া বলেন, হেলাল ভাই কাউকে ডাকেন না। উনি নাকি এমনিই পাস করবেন। তবে এ ইউনিয়নে বন্ধ নেই পুলিশের অভিযান। এখানে রাতের অন্ধকারে দূর্বৃত্তরা পুঁড়িয়ে দিয়েছে নৌকা। গত বুধবার গভীর রাতে আঁখিতারা বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে কোন ইউনিয়নেই স্বস্থিতে নেই অন্য দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুপক কুমার সাহা বলেন, এন্টি ইলেকশন এক্টিভিটিজে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যথাযথ অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কেবল তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা বলেন, এখানকার নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এ লক্ষেই উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে।

এ জাতীয় আরও খবর