ভক্তকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সাব্বিরের
জয় থেকে তখন মাত্র ৮ রান দূরে বাংলাদেশ। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে কিমো পলের লো ফুলটস ডেলিভারিতে ঘুরিয়ে ব্যাট চালিয়ে ডিপ অঞ্চলে শিমরন হেটমায়ারের তালুবন্দী হন সাব্বির রহমান। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে সাব্বিরের এমন আউট স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে পারেননি বাংলাদেশি ভক্ত-সমর্থকরা। তাই তারা ক্ষোভ-হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
এদিকে ফেসবুকে সমর্থকদের স্ট্যাটাস দৃষ্টিগোচর হতেই খেপে যান ‘টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট’খ্যাত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। একপর্যায়ে সাব্বির ইনবক্সে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ওই দুই ভক্তকে। তার গালিগালাজের শিকার হওয়া ওই দুই ভক্তের নাম শাহরিয়ার নীল ও আরাফাত ভুঁইয়া হৃদয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান আইপে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সাব্বিরকে হয়তো ফিনিশারের ভূমিকায় চেয়েছিল বাংলাদেশ। তাই তো প্রথম ম্যাচে চার নম্বরে ব্যাট করা সাব্বিরকে বুধবার নামানো হয় সাত নম্বরে। কিন্তু সাব্বির সেটা করতে পারেননি। প্রথম ম্যাচে ৩ রান করে আউট হওয়া সাব্বিরের ব্যাট থেকে এদিন এসেছে ১২ রান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচে হেরেছে ৩ রানে।
শাহরিয়ার নীলের ফেসবুক স্ট্যাটাস
সাব্বির আউট হওয়ার পর শাহরিয়ার নীল নামে এক ব্যবহারকারী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখেন, স্যার ডন সাব্বির রহমান ব্যাডম্যানের দিন দিন এত উন্নতি করাটা বেশ রহস্যময়।
অন্যদিকে আরাফাত ভুঁইয়া হৃদয় নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার পীথাগোরাসের প্রেমোপপাদ্য নামক আইডি থেকে সাব্বিরকে মেনশন করে লেখেন, ‘তুই নিজ দায়িত্বে দল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নে। তুই ক্রিকেটের জন্য যোগ্য না’।
পীথাগোরাসের প্রেমোপপাদ্য নামের আইডি থেকে দেওয়া আরাফাত ভুঁইয়া হৃদয়ের স্ট্যাটাস
স্ট্যাটাস দেখে দুজনকেই ফেসবুকে আক্রমণ করেন সাব্বির। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা ছাড়াও দেশে ফিরে তাদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন জাতীয় দলের ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান।
ফেসবুকে পাঠানো খুদে বার্তায় সাব্বির লিখেছেন, ‘ওই খা..র ছেলে, তোর বাপ কখনও ক্রিকেট খেলেছে? কাজ করিস ভলান্টিয়ারের আবার বড় বড় কথা, মা…দ! ফেসবুকটা তোর বাপে বানাইছে? তুই কি করিস না করিস, সব জানা হয়ে গেছে আমার। তোরে আমি দেশে এসে দেখতেছি, ওয়েট কর।’
সাব্বিরের কাছ থেকে এমন মেসেজ পাওয়ার পরই স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্ট করেন ওই দুই ব্যবহারকারী। এরপর সেগুলো ভাইরাল হতে খুব বেশি সময় নেয়নি। স্ক্রিনশট প্রকাশের পর শুরুতে সন্দেহ দেখা দেয়, যে অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের এমন মেসেজ পাঠানো হয়েছে, সেটা আসলেই সাব্বিরের কি না!
শাহরিয়ার নীলের পোস্ট করা স্ক্রিনশট
পরবর্তী সময়ে ফেসবুক লাইভে এসে ও একটি ভিডিও পোস্ট করে সেই শঙ্কা দূর করেন আরাফাত ভুঁইয়া হৃদয়। সেখানে দেখা যায়, সাব্বির রহমান রুম্মন নামে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকেই মেসেজটি পাঠানো হয়েছে। যে আইডিতে এ মুহূর্তে ৯০ হাজার ৪৪৯ জন ফলোয়ার রয়েছেন।
আরাফাত ভুঁইয়া হৃদয়ের পোস্ট করা স্ক্রিনশট
জাতীয় দলের একজন তারকা ক্রিকেটারের এমন আচরণ, ভক্তকে হুমকি এবং এমন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সবাই। একইসঙ্গে সাব্বিরকে কঠিন ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রয়োজন হলে সাব্বিরকে নিষিদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) অনুরোধ জানাচ্ছেন তারা।
ভক্ত-সমর্থকদের এমন দাবির কারণ অতীতে সাব্বিরের আচরণ। এমন ঘটনা তার জন্য এবারই প্রথম নয়। কিছুদিন আগেই ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ চলাকালীন ড্রেসিংরুমে সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন সাব্বির। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় গড়ায় মারামারি পর্যন্ত। এ জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেও মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে লাইভে এসে ক্ষমা চেয়ে সে যাত্রায় পার পেয়ে যান তিনি।
সাব্বির রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট
এর আগেও গেল বছরের ডিসেম্বরে রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ম্যাচ চলাকালে কিশোর ভক্তকে পিটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন সাব্বির। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি জরিমানা হিসেবে দেন ২০ লাখ টাকা। এখানেই শেষ নয়, বাদ পড়েন বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও।
এই ঘটনার আগেও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ওঠে সাব্বিরের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে টিম হোটেলে নারী অতিথিকে এনে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ১২ লাখ টাকা জরিমানা দেন তিনি।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সর্বশেষ আসরে সাব্বিরকে ম্যাচ ফি’র অর্ধেক জরিমানা করা হয়। সঙ্গে জুটেছে তিনটি ডিমেরিট পয়েন্ট। সে সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে মাঠে আম্পায়ারের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলা এ ব্যাটসম্যান।