সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর মা যখন নবম শ্রেণির ছাত্রী!
সপ্তম শ্রেণি পড়ছে মেয়ে আর বাবা বিয়ে করলেন একই স্কুলে পড়ুয়া নবম শ্রেণির এক মেয়েকে। নিবন্ধন ছাড়াই এই বিয়ের কাজটি শেষ করা হয়েছে হুজুর দিয়ে দোয়া পড়িয়ে। বাল্যবিয়ের পরদিনই ‘বিয়ের শর্ত’ মেনে মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে তাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয় বাবা। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলের বীরখামাটখালি গ্রামে।
অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক মিজানুর রহমান মিন্টু (৪৫) একজন পল্লী চিকিৎসক। মিন্টু উপজেলার বৈতাগৈর ইউনিয়নের বীরখামাটখালি গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন ছেলে। স্থানীয় বাজারে ‘চাঁদ মেডিকেল হল’ নামে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে তার। দেড় বছর আগে তার স্ত্রী মারা গিয়েছে। তার রয়েছে দুই মেয়ে।
স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে বিয়ে করার জন্য কনে খুঁজতে থাকেন মিন্টু। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের মো. ফারুক মিয়ার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে লিমা আক্তারের দিকে চোখ পড়ে তার। সে বীরখামাটখালী জেবি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে বিয়ের জন্য পরিবারের কাছে প্রস্তাব পাঠান মিন্টু।
প্রতিবেশীরা জানায়, মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং একই স্কুলে নিজের (বরের) মেয়েরা পড়ায় প্রথমে বিয়েতে রাজি ছিল না কনের পরিবার। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কনের বাবাকে টাকার লোভ দেখিয়ে এবং দুই মেয়েকে স্কুল ছাড়ার কথা বলে বিয়েতে রাজি করান মিন্টু।এর মধ্যে নববধূকে বাড়িতে রেখেই দুই মেয়েকে স্কুল ছাড়িয়ে নান্দাইল সদরে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে যান মিন্টু। সেখানে থেকেই লেখাপড়া করবে মেয়েরা।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে বর ও কনের পরিবারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরই মধ্যে বড় মেয়েকে নান্দাইল পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়েকে সদরের একটি কওমি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে মিজানুর রহমান মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার তো হয়েছে। এখন আর কী করা। আজ না হোক কাল তো হবেই।’ দুই মেয়েকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিলেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালো জায়গায় পড়াশোনার জন্য।’বাল্যবিয়ের শিকার মেয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি, তবে গত মঙ্গলবার সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (বরের মেয়ে) বদলি ছাড়পত্র দেওয়ার কথাটি শুনেছি।’
বাল্যবিয়ের শিকার মেয়ের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘বিয়ের আলোচনা চলতাছে। কথাবার্তা ঠিক অইলে অহনি বিয়া পড়াইতাম না।’ বরের বয়স কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরুষের বয়স ধরন যায় না’, এই বলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।নাম না বলার শর্তে প্রতিবেশীরা বলেন, গত মঙ্গলবার থেকেই লোকচক্ষুর আড়ালে বর-কনে বাড়ির একটি কক্ষে অবস্থান করছে।