ডেকে নিয়ে হত্যা, এক সপ্তাহ পর নারীর লাশ মিলল বিলে!
ভোলা জেলার লালমোহন থানার গজারিয়া গ্রামের মরন আলীর স্ত্রী পাঁচ সন্তানের জননী রাশেদা বেগম (৩০)। থাকতেন মোহাম্মদপুর এলাকার সোনা মিয়ার টেক বস্তিতে। অভাব অনটনের সংসারে কাগজ কুড়িয়ে কোন রকমে খেয়ে পড়ে দিন কাটত রাশেদা বেগমের।
দেখতে সুদরী হওয়ায় রাশেদার প্রতি নজর পড়ে সিএনজি চালক বিল্লাল হোসেনের। স্বামী মরন আলীকে ভয়ভীতি এবং মারধর করে পাঁচ সন্তানসহ আগের স্বামীর কাছ থেকে তালাক না নিয়েই রাশেদাকে বিয়ে করে বিল্লাল (৪৮) হোসেন।
এক বছরের সংসার জীবনে তাদের কোন সন্তান না হলেও উল্টো আগের ঘরের দুই ছেলে সন্তান গায়েব হয়ে যায়। সন্তান নিখোঁজের ঘটনায় মা রাশেদা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করলেও খোঁজ মেলেনি তার আদরের সন্তানদের। নিখোঁজ সন্তানদের ব্যাপারে স্ত্রী রাশেদা স্বামী বিল্লালের কাছে জানতে চাইলে এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার বাগবিতণ্ডা হয়। এমনকি বিল্লাল রাশেদাকে সন্তান এবং প্রতিবেশীদের সামনে মারধরও করেছে বেশ কয়েকবার।
নিখোঁজ সন্তানের ব্যাপারে স্ত্রী রাশেদা বেগমের তোড়জোর সেই সঙ্গে ঝগড়া ঝাটি থেকে তার স্ত্রীকে খুনের পরিকল্পনা করে স্বামী বিল্লাল হোসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী রাশেদাকে নিয়ে কাজের কথা বলে বাইরে বের হলে নিখোঁজ হয় রাশেদা। নিখোজের ছয় দিন পর অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ঘাটারচর গ্রামের টানপাড়া বিলের উত্তর পাশে এলাকাবাসী রাশেদার লাশ দেখতে পায়। পরে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দিলে পুলিশ অজ্ঞাত লাশ হিসেবে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এস আই বাদশা আলম একটি অপমৃত্য মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং- ৫৬/১৬)।
পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলার তদন্তে বেড়িয়ে আসে এই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য। রবিবার গণ্যমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মামলাটি প্রথমে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করলেও প্রায় চার মাস আগে পিবিআই ঢাকা জেলার এস আই মিজানুর রহমান মামলাটির তদন্ত ভার গ্রহণ করে। মামলাটি পিবিআই এর শিডিউলভুক্ত একটি চাঞ্চল্যকর মামলা হওয়ায় অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্তভার গ্রহণ করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তথ্য– উপাত্ত সংগ্রহ এবং প্রযুক্তিগত তথ্য নিয়ে কাজ শুরু করে পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ।
পরবর্তীতে প্রযুক্তিগত তথ্যের পর্যালোচনা এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য প্রমাণ নিশ্চিত হয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আছে মর্মে ভিকটিম রাশেদার স্বামী ভোলা জেলার লালমোহন থানার কচুখালী গ্রামের মৃত কালু মিয়া ফরাজীর ছেলে বিল্লাল হোসেনকে (৪৮) চট্টগ্রাম জেলার হালিশহর এলাকা থেকে গত ১৯ জুলাই (বৃহষ্পতিবার) পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর সহযোগীতায় গ্রেফতার করেন মামলার তদন্তকারী অফিসার।
গ্রেফতার আসামি বিল্লালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, সে একাধিক বিয়ে করেছে। ভিকটিম রাশেদাকে প্রথমে সে না চেনার ভান করলেও পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাশেদা তার কথিত স্ত্রী ছিল বলে জানায়।
ভিকটিম রাশেদার ছেলে পেশায় টোকাই শরীফ (১৪) জানায়, তার সামনে থেকে তার মাকে বিল্লাল হোসেন বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় এক সপ্তাহ পর একটা বিলে মায়ের লাশ পাওয়া যায়। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বিল্লাল হোসেন কে মোহাম্মদপুর এলাকায় আর দেখা যায়নি বলেও জানায় ভিকটিমের ছেলে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী অফিসার এস আই মিজানুর রহমান বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ভিকটিম রাশেদা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রাশেদার কথিত স্বামী বিল্লাল আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হওয়ায় আমরা তাকে গ্রেফতারের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং এই ঘটনায় আরো কারো সম্পৃক্ততা আছে কিনা সে ব্যাপারে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত আসামিকে চার দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভিকটিম রাশেদার দুই সন্তানকে পাচার এবং এই ঘটনার জের ধরেই রাশিদা খুন হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।’
পিবিআই ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান বারী নূর বলেন, ‘মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে এবং নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সাথে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না তা ব্যাপকভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া অপর পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’