বৃহস্পতিবার, ১২ই জুলাই, ২০১৮ ইং ২৮শে আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : এবারের আয়োজনে কিছু আক্ষেপ

বিনোদন ডেস্ক:
শেষ হয়ে গেল ২০১৬ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের আয়োজন। রোববার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলোর মধ্য থেকে সেরা কাজের জন্য ২৫টি বিভাগে মোট ৩১ জন বিজয়ীর হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ক্রেস্ট, মেডেল ও চেক তুলে দেন তিনি। এ সময় তার দুই পাশে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

এবারের আসরে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা ও ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত অভিনেতা ফারুক।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভাগ। প্রতিবার অনুষ্ঠান শেষে তা নিয়ে হয় আলোচনা। কেমন ছিলো এবারের আয়োজন? সেই আলোচনার টেবিলে এবার উঠে এলো বেশ কিছু অসঙ্গতির কথা। চলচ্চিত্রের মানুষদের অনেক আক্ষেপও ঝড়লো এবারের আয়োজনে।

অনুষ্ঠানটি এবারে নির্ধারিত সময়ে শুরু করতে পারেনি আয়োজকরা। প্রায় দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে। স্বভাবতই তা শেষ হয়েছেও দেরিতে। দীর্ঘ সময় অলসভাবে বসে থাকতে হয়েছে নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠানে পৌঁছানো অতিথিদের। পাশাপাশি যারা বিটিভিতে অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখবেন বলে অপেক্ষায় ছিলেন, তারাও সময় বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। তবে অনিচ্ছাকৃত বিলম্বের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। তিনি ধৈর্য ধারণ করে অনুষ্ঠান সফল করতে সাহায্য করায় অতিথিদের কৃতজ্ঞতা জানান।

আলোচনায় এসেছে, অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র তারকাদের জমকালো উপস্থিতি না থাকার ব্যাপারটি। এবারে আসেননি সময়ের সেরা তারকা শাকিব খান। ছিলেন না মৌসুমী, ওমর সানী, শাবনূর, পরীমনি, বাপ্পী, বিদ্যা সিনহা মিম, বুবলী, জয়া আহসান। চোখে পড়েনি নায়করাজ রাজ্জাক পরিবারের কাউকে, এটিএম শামসুজ্জামান, কবরী, ওয়াসিমসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের। দেখা যায়নি চলতি প্রজন্মের অনেক নায়ক ও নায়িকা, গায়ক-গায়িকাদের। চলচ্চিত্রের অনেক নন্দিত মানুষেরা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র পাননি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজকেরা এবারে আমন্ত্রণ পাননি। যেটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারের আয়োজনটি খুব একটা গোছানো ছিলো না। চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের আয়োজন হওয়া উচিত জাঁকজমকপূর্ণ। কিন্তু তারকাদের উপস্থিতি না থাকলে সেটা ম্লান মনে হয়। আমাদের চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি ফারুক ও ববিতাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে। এই দুজন মানুষ আমাদের আত্মার আত্মীয়। তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিনটিতে আরও অনেক চলচ্চিত্রের মানুষদের সেখানে মিস করেছি।’

তিনি আয়োজনে চলচ্চিত্রকে সঠিকভাবে উপস্থাপন নার করারও আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। জায়েদ বলেন, ‘যারা অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করেছেন তারা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন এটি চলচ্চিত্রের মানুষদের জন্য। কিন্তু এখানে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের দিয়ে ক্ল্যাসিক নাচ ও টিভি শিল্পীদের পরিবেশনা প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি। প্রায় আধা ঘণ্টা সময় দেয়া হয়েছে তাদের। অথচ এই সময়টাতে চলচ্চিত্রের উপর তথ্যচিত্র দেখানো যেত। ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য, নায়করাজ, জসীম, সালমান শাহ, জাফর ইকবাল, দিতিসহ যাদের আমরা হারিয়েছি তাদের উপর আলোকপাত করা যেত। কিন্তু সেটি হয়নি। চোখে দৃষ্টিকটু লেগেছে চলচ্চিত্রের অনুষ্ঠানে বিটিভির ব্যাজ পড়া প্রচুর লোকদের আনাগোনা। আমাদের বিশ্বাস, পরেরবারের আয়োজনে এইসব বিষয়গুলো নজরে আনবেন কর্তৃপক্ষ।’

অভিনেতা জায়েদ খান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়কে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তার মতে, চলচ্চিত্রের অনুষ্ঠান চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে, তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে পারলে ত্রুটি কমে যায়।

এছাড়াও গতকালের আয়োজনে অতিথিদের ভুগতে হয়েছে খাবারের জন্যও। বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলেছে অনুষ্ঠান। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অনুষ্ঠানস্থলে থাকতে হয়েছে অতিথিদের। এখানে ছিলো অনেক শিশু, ছিলেন অনেক বয়স্ক মানুষও। এই দীর্ঘ সময় খাবার জন্য পানিও পাওয়া যায়নি। অনেকেই পানির পিপাসায় ভুগছিলেন। লম্বা সময়ের এই আয়োজনে অন্তত পানির ব্যবস্থা থাকা উচিত।

তবে সবকিছুর পরও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ীদের আনন্দ, উচ্ছ্বাস মুছে দিয়েছে সব অসন্তুষ্টির অভিমান। রাজনৈতিক দর্শনেও এবারের আয়োজনটি ছিলো চমৎকার, মনে রাখার মতো। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী দল বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তাকে ২০১৬ সালের সেরা গীতিকার হিসেবে নির্বাচিত করে বর্তমান সরকার শিল্পচর্চায় উদারতার প্রমাণ দিয়েছে। নন্দিত এই গীতিকারের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরস্কার তুলে দেয়া ও কুশল বিনিময়ের দৃশ্যটি অনেকদিন মনে রেখে দেবেন বাংলা চলচ্চিত্রের মানুষ ও দর্শক।

এক নজরে এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ীদের তালিকা –

আজীবন সম্মাননা : যৌথভাবে চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি ববিতা ও ফারুক
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : অজ্ঞাতনামা
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : ঘ্রাণ
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : জন্মসাথী
শ্রেষ্ঠ পরিচালক : অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আয়নাবাজি
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র : চঞ্চল চৌধুরী, আয়নাবাজি
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র : যৌথভাবে তিশা, অস্তিত্ব ও কুসুম শিকদার, শঙ্খচিল
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রাভিনেতা : যৌথভাবে আলীরাজ, পুড়ে যায় মন ও ফজলুর রহমান বাবু, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রাভিনেত্রী : তানিয়া আহমেদ, কৃষ্ণপক্ষ
শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা : শহীদুজ্জামান সেলিম, অজ্ঞাতনামা
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি, শঙ্খচিল
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক : ইমন সাহা, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে
শ্রেষ্ঠ গায়ক : ওয়াকিল আহমেদ, ছবি- দর্পণ বিসর্জন, গান- অমৃত মেঘের বারি
শ্রেষ্ঠ গায়িকা : মেহের আফরোজ শাওন, ছবি- কৃষ্ণপক্ষ, গান- যদি মন কাঁদে
শ্রেষ্ঠ গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ছবি- মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, গান- বিধিরে ও বিধি
শ্রেষ্ঠ সুরকার : ইমন সাহা, গান- বিধিরে ও বিধি
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার : তৌকীর আহমেদ, অজ্ঞাতনামা
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : রুবাইয়াত হোসেন, আন্ডার কনস্ট্রাকশন
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম, আয়নাবাজি
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক : ইকবাল আহসানুল কবির, আয়নাবাজি
শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক : উত্তম গুহ, শঙ্খচিল
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : রাশেদ জামান, আয়নাবাজি
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক : রিপন নাথ, আয়নাবাজি
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা : যৌথভাবে সাত্তার, নিয়তি ও ফারজানা সান, আয়নাবাজি
শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যান : মানিক, আন্ডার কনস্ট্রাকশন