অ্যালার্জি নিরাময়ে ভ্যাকসিনের গুরুত্ব
অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস: অনেকেরই ধারণা, অ্যালার্জির কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ওষুধ দিয়ে উপসর্গ কিছুদিন দমিয়ে রাখা যায় এবং ওষুধ বন্ধ করলেই আবার শুরু হয় উপসর্গ। প্রথমেই জানা প্রয়োজন, রোগটি অ্যালার্জিজনিত কিনা। অ্যালার্জিজনিত রোগের তিনটি চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, অ্যালার্জি জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলা; দ্বিতীয়ত, ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা এবং তৃতীয়ত, অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ রোগীর অ্যালার্জি ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি সম্পর্কে ধারণা কম। তাই ওষুধ, বিশেষ করে সালবিউটামল বা অ্যামাইনোফাইলিন জাতীয় ওষুধ বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় (যদিও স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, যেমন- ইনহেলার, নেসাল স্প্রে, ইনজেকশন বা ট্যাবলেট আকারে অ্যালার্জি রোগের উপসর্গগুলো দ্রতি উপশম করে কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় অনেক রোগীই এ ওষুধ বেশিদিন ব্যবহার করেন না)। আবার সালবুটামল বা অ্যামাইনোফাইলিন জাতীয় ওষুধ সেবনে শরীর কাঁপানো, বমি বমি ভাব ও ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ায় এটা দীর্ঘদিন ব্যবহার করেন না এবং অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ নেওয়ার পর ঘুম ঘুম ভাব, এমনকি দৈনিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ একটানা খেতে চান না, মাঝে মধ্যে খান। তাই রোগের উপসর্গগুলো থেকেই যায়। অ্যালার্জি ভ্যাকসিন চিকিৎসায় তেমন কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং যে অ্যালার্জেনের মাধ্যমে রোগী আক্রান্ত হয়, সেই অ্যালার্জেনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
অ্যালার্জি ভ্যাকসিন : অ্যালার্জেন ভ্যাকসিন বা ইমুনোথেরাপি এমন এক পদ্ধতি, যেখানে স্বল্পমাত্রা থেকে পর্যায়ক্রমে উচ্চতর মাত্রায় অ্যালার্জেন এক্ট্রাক্ট (যে অ্যালার্জেনের মাধ্যমে রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়) অ্যালার্জিক ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যাতে পরবর্তীকালে অ্যালার্জেনের সংবেদনশীলতা কমে যায়।
যেভাবে কাজ করে :. রক্তের আইজিই (যা অ্যালার্জির জন্য মূলত দায়ী), তা ক্রমে কমিয়ে দেয়। রক্তে আইজিজির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে। মাস্ট সেল ,যা হিস্টামিন নিঃসরণ করে তা কমিয়ে দেয়।
যেসব ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন কার্যকর : অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, হাইমেনোপটেরা ভেনম, যাতে এনাফাইলোক্সিস বা অ্যালার্জিক বিক্রিয়া দেখা দেয়; কিছু কিছু ছত্রাক, যেমনÑ ক্লডাস্পেরিয়াম ও অলটরেনেরিয়ারের মাধ্যমে অ্যালার্জিজনিত রোগ হলে।
যে বয়সে ইমুনোথেরাপি শুরু করা ভালো : অ্যালার্জি রোগের উপসর্গের প্রথম দিন থেকেই ইমুনোথেরাপি শুরু করা সম্ভব। কোনো কোনো ইমুনোথেরাপিস্ট মনে করেন, দু-এক বছর বয়স থেকে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। তবে মাইটি অ্যালার্জির ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ইমুনোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ইমুনোথেরাপির সফলতা প্রমাণিত। তবে অল্প বয়সে ইমুনোথেরাপি রোগমুক্তির ক্ষেত্রে একটি প্রধান নিয়ামক।
ইমুনোথেরাপির জন্য আপনি উপযুক্ত কিনা : যেসব অ্যালার্জেন অ্যালার্জি রোগের কারণ, তা নিরূপণ পরবর্তীকালে ইমুনোথেরাপির জন্য নির্ধারণ করা হয়। তবে ভিন্ন ধরনের তিনটির অধিক অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে ইমুনোথেরাপি সাধারণত কার্যকর হয় না। ইমুনোথেরাপি শুরুর আগে মারাত্মকভাবে রোগাক্রান্ত রোগীদের পর্যাপ্ত ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার পরই ইমুনোথেরাপি শুরু করা সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগগুলো, যেমনÑ নন-অ্যালার্জিক, সাইনোসাইটিস ও নেসাল পলিপ রোগীদের ক্ষেত্রে ইমুনথেরাপির কোনো ভ‚মিকা নেই।
যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না : গুরুতর ইমুনোলোজিক্যাল ও ইমুনোডেফিসিয়েন্সি রোগে যারা ভুগছেন; ক্যানসার; ভীষণ মানসিক ভারসাম্যহীনতা রোগে ভুগছেন, এমন রোগী; বিটার বøকার দিয়ে চিকিৎসা করা হলে; রোগী সহযোগিতা না করলে; বড় ধরনের হৃদরোগ থাকলে; দুবছরের নিচের শিশু; গর্ভবতী অবস্থায় ভ্যাকসিন শুরু করা ঠিক নয়। তবে আগে থেকে চলতে থাকলে চালিয়ে যাওয়া যায়। গুরুতর অ্যাজমা, যা ওষুধে নিয়ন্ত্রিত করা যায় না।
রোগের শুরুতে চিকিৎসার সুবিধা : ইমুনোথেরাপি ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ কমানোর চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হওয়ার পথ বাধার সৃষ্টি করে। অ্যালার্জিজনিত সহজ রোগ থেকে জটিল রোগ হওয়ার পথ বাধা দেয় অর্থাৎ যেসব রোগী অ্যালার্জিজনিত সর্দিতে ভোগেন, তাদের যাতে অ্যাজমা না হয় সেই পথ বন্ধ করে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগের অতিসংবেদনশীলতা কম থাকায় ইমুনোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম থাকে।
যত দিন দিতে হয় : যদিও ইমুনোথেরাপি কত দিন দিতে হবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট কথা নেই, তবে যারা ইমুনোথেরাপির সুফল পান, তাদের তিন থেকে পাঁচ বছর চালিয়ে যেতে হবে।
লেখক : অ্যালার্জি ও অ্যাজমা রোগ বিশেষজ্ঞ