শুক্রবার, ২২শে জুন, ২০১৮ ইং ৮ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘বাড়ি গেলে সৎ বাবা মারে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি অনেক পোলাপান দৌঁড়াচ্ছে। ওদের দেখে আমিও দৌঁড় দিই। গিয়া দেখি একদল লোক নতুন জামা-কাপড় দিচ্ছে। আমি লাইনে খাঁড়াইছি। কিছুক্ষণ পর আমাকে তারা একটি নতুন জামা দেয়। নতুন ওই জামা গায়ে দিয়া মসজিদের সামনে থেকে বখশিস ওঠাই। বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে মধুমিতা হলে গিয়ে সিনেমা দেখি। সিনেমা দেখে আর খেলাধুলা করে ঈদের দিনটা কাইট্যা গেছে।’ এভাবেই নিজের ঈদ উদযাপনের বর্ণনা দেয় পথশিশু মো. অপূর্ব। রোববার কমলাপুর রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অপূর্বের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

ঈদের দিনের বর্ণনা দিয়ে অপূর্ব বলে, ‘ঈদের দিনে অনেক মজা করলাম। বিকেলে মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলে ৫০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে সিনেমা দেখেছি। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে খেলাধুলা করছি। আর হোটেলে গিয়ে খাবার কিনে খাইছি।’ খবর সারাবাংলা ডটনেট’র।

কমলাপুরে থাকো কেন এ প্রশ্নের জবাবে মো. অপূর্ব জানায়, তার বাবার নাম রকিব, মায়ের নাম স্মৃতি। বাড়ি দিনাজপুর রেল স্টেশনের পাশে।

সে বলে, ‘নারায়ণগঞ্জের নানীর কাছে থাকতাম। কিন্তু মামার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দুই বছর আগে নানীর বাসা থেকে রাগ করে চলে আসি। এরপর থেকে কমলাপুরেই বসবাস।’

দিন-রাত এ স্টেশনেই কাটে অপূর্বসহ তার বন্ধু আরিফ, সাগর ও সুজনের সময়। প্রতি ঈদেই সিনেমা দেখে আর খেলাধুলা করে ঈদ উদযাপন করে তারা।

অপূর্বের থাকা-খাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে সে জানায়, ট্রেন এলে যাত্রীদের ‘বোঝা মাইরা’ (মালামাল বহন করে) যা আয় করি তা দিয়ে হোটেলে গিয়ে খাই। আর রাতে প্ল্যাটফর্মে ঘুমাই। সারাদিন ‘বোঝা মারলে’ এক দেড়শ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে যায়।

ড্যান্ডি বা অন্য কোনো নেশা কর কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জানায়, সে কোন নেশা করে না। তবে দিনে দুই তিনটা হলিউড সিগারেট খায়।

‘বাবা-মা, ভাই-বোনকে দেখতে ইচ্ছা করে কিনা জানতে চাইলে সে বলে, ‘দেখতে ইচ্ছা করে। অনেক সময় মন চায় কিন্তু বাড়ি গেলে সৎ বাবা আমাকে মারে এ কারণে যাই না।’

বড় হয়ে ট্রেনের ড্রাইভার হতে ইচ্ছা করে জানিয়ে অপূর্ব বলে, ‘ট্রেনের ড্রাইভার হলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রেন চালিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াতে চাই।’ ট্রেনে করে চট্টগ্রাম, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছে ১২ বছরের অপূর্ব। এছাড়া ঢাকার লালবাগ কেল্লা, সায়েদাবাদ, গুলিস্তানসহ এসব এলাকার সব জায়গাতেই গিয়েছে বলেও সে জানায়।

রাজধানীতে অপূর্বের মতো অসংখ্য শিশুর ঈদ পথেই কেটে গেছে। জোটেনি বিভিন্ন রকম ঈদের সেমাই, মিষ্টিসহ নানা রকম সুস্বাদু খাবার। তারপরও ঈদ আসে, কেটে যায় তাদের ঈদ।

Print Friendly, PDF & Email