রবিবার, ১৭ই জুন, ২০১৮ ইং ৩রা আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

শেষ মুহূর্তে উপচে পড়া ভীড়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে রাজধানীর কমলাপুর, সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী ও সদরঘাটে।

শুক্রবার (১৫ জুন) সকাল থেকেই বাড়তে থাকে জনতার ঢল। সবার একটাই তাড়া বাড়ি যেতে হবে। যেকোনো মূল্যে হোক, সবারই যে ঘরে ফিরতে হবে।

গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, গন্তব্যের বাসগুলো নির্ধারিত সময়ে না ছাড়ায় ভিড় বাড়ছে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের।

কাউন্টারগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, দৌলতদিয়া ঘাটের পরে সাভারের নবীনগরে যানজটের কারণে কোনো বাসই নির্ধারিত সময়ে গাবতলী এসে পৌঁছাতে পারছে না। সে কারণে আমাদের গাড়িগুলো ছাড়তে দেরি হচ্ছে।

এদিকে লোকাল বাস সার্ভিসের যাত্রীদের গাবতলী বাস টার্মিনালে এসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। বাসস্ট্যান্ডে আসার পরেই পদ্মা লাইনসহ অন্য সব বাসে উঠার সুযোগ পাচ্ছেন। লোকাল বাসগুলোতে যাত্রীদের কাছ থেকে ১শ টাকার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩শ-৪শ পর্যন্ত। তবে ছাদে যাওয়ার জন্য গুনতে হচ্ছে ১শ টাকা ভাড়া।

অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে পদ্মা লাইন বাসের সুপারভাইজার আজগর আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবগাড়ি এখন গাবতলী থেকে যাত্রী নিয়ে গেলেও পাটুরিয়া থেকে খালি ছেড়ে আসছে। আসার সময় যাত্রী পাওয়া গেলে ভাড়া কমানো যেতো।

শেষ মুহূর্তে ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়ের ফাঁদে পড়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। দিনের প্রথম ট্রেন ধূমকেতু সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেও কমলাপুরে এসে পৌঁছায়নি। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে সকাল ৭টা ৪০মিনিটে। তিস্তা সকাল সাড়ে ৭টায় স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায় ৮টা ১০ মিনিটে। মহানগর প্রভাতী ৭টা ৪৫মিনিট ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ে সকাল ৮টা ২৮মিনিটে। মহুয়া এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্টেশনেই দাঁড়িয়ে ছিল।

সকাল ৮টায় কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার কথা নীলসাগর এক্সপ্রেসের। কিন্তু নীলসাগর এখনও কমলাপুরে এসে পৌঁছায়নি। এখন এ ট্রেনটির ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া হয়েছে দুপুর সাড়ে ১২টায়।

নীলসাগর এক্সপ্রেসযোগে চিলাহাটি যাবেন মিতু। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলে এখনও ট্রেন কমলাপুরে আসেনি। কখন আসবে জানি না। টিকিট কাটতে ভোগান্তিতে পড়েছিলাম, এবার ট্রেনের অপেক্ষা।

মহানগর প্রভাতীর অ্যাটেন্ডেন্ট ফয়সাল বলেন, লাইন ক্লিয়ার না থাকায় আমাদের ছাড়তে দেরি হচ্ছে। লাইন ক্লিয়ার হলেই আমরা ট্রেন ছাড়বো।

এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন মাস্টার মো. সাখাওয়াত জোসেন খান বলেন, ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় ধীরগতিতে চলছে। এ কারণে ট্রেন স্টেশনে আসতে ও ছাড়তে একটু দেরি হচ্ছে। তাছাড়া ট্রেনের ছাদেও যাত্রীরা উঠছেন। তাদের কারণেও ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন রুটে সব মিলিয়ে ৬৯টি ট্রেন ছাড়ার কথা রয়েছে শুক্রবার। এর মধ্যে ৩২টি ট্রেন আন্তঃনগর, ৫টি স্পেশাল, বাকিগুলো মেইল ট্রেন।

৫টি স্পেশাল ট্রেন সকালে ঢাকা টু মোহনগঞ্জ ও ঢাকা থেকে লালমনিরহাট, রাতে ঢাকা টু রাজশাহী, ঢাকা টু পার্বতীপুর এবং ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে আজ সকালে ঢাকার সদরঘাটে ছিল হাজারো মানুষের ভিড়; যাদের অনেকে বাড়িতে যেতে লঞ্চ ধরার আশায় ঘাটেই রাত কাটিয়েছেন। তবে দুদিন আগেও ঢাকার সদরঘাটে ভিড় আগের মতো দেখা যায়নি। লঞ্চকর্মীরা বলছিলেন, বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর ভিড় বাড়বে। তাই ঘটেছে।

শুক্রবার সকালে পন্টুনে পটুয়াখালী, বরগুনার আমতলী, নোয়াখালীর হাতিয়া ও ভোলার বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা যায়। রাত ১২টা থেকে স্ত্রী ‍ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে সদরঘাটে রয়েছেন বলে জানান ভোলার আনিসুর রহমান।

দিনমজুর আনিস বলেন, ‘এখন সকালেও তো লঞ্চ পাচ্ছি না।’ ভোলার দুটি লঞ্চ ছাড়লেও ভিড়ের মধ্যে শিশুদের নিয়ে উঠতে পারেননি আনিস। আনিসের মতো হাজার হাজার যাত্রীকে পন্টুনে দেখা যায়।

বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী পন্টুনে রাতভর অপেক্ষা করেছিল।

এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক মো. জালাল শেখ বলেন, সদরঘাটে দুই শতাধিক লঞ্চ রয়েছে। এসব লঞ্চে দুই লাখের মতো যাত্রী পরিবহন সম্ভব। কিন্তু কাল (বৃহস্পতিবার) বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত চার লাখের উপরে যাত্রী আসেন সদরঘাটে।

Print Friendly, PDF & Email