মঙ্গলবার, ১৯শে জুন, ২০১৮ ইং ৫ই আষাঢ়, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

‘অন্য ঈদের চেয়ে এবার বিএনপি কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় বেশি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় অন্য ঈদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি বলে জানিয়েছেন বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।

চার মাসের অধিক সময় ধরে সেখানে এক প্রকার বন্দি জীবনের মধ্যে আছেন তিনি একথা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘প্রতিবার ঈদে যে ধরনের আনন্দ আমাদের উদ্বেলিত করে, আনন্দে আমরা যেমন মুখরিত থাকি, এবার আমরা সেই আনন্দ বোধ করছি না।’

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ভবনের নিচের ফটকে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। কার্যালয়ের সামনের সড়ক একদম ফাঁকাই বলা চলে। তিন তলার নির্দিষ্ট চেয়ারে লুঙ্গি এবং শার্ট পরিধান করে আছেন রুহুল কবীর রিজভী।

তখন কথা হয় তার সঙ্গে। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদ সার্বজনীনভাবেই বিশ্ব মুসলমানের একটা সবচেয়ে বড় খুশির দিন, আনন্দের দিন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান যে দুঃসময়, এই দুঃসময়ে বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী শক্তির জন্য। এই আনন্দের দিনেও আমাদের মন ভারাক্রান্ত আমরা বেদনার্ত। যাকে ঘিরে আমাদের আনন্দ আবর্তিত হয় আমাদের সেই প্রিয় নেত্রীকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তার এই বন্দিত্বে দেশের কোটি কোটি মানুষ যেমন বেদনার্ত, তারা যেমন ক্ষুব্ধ, আমরাও একইভাবে বেদনার্ত। ফলে প্রতিবার যে ধরনের আনন্দ আমাদের উদ্বেলিত করে, আনন্দে আমরা যেমন মুখরিত থাকি, এইবার আমরা সেই আনন্দ বোধ করছি না।’

তিনি বলেন, ‘কারণ নিশ্চয়ই আপনারা জানেন আমাদের প্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে এবং খুব মানবেতরভাবে থাকে সেখানে থাকতে হচ্ছে। তার জীবন কাটাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কারো মনেই আনন্দ নেই, আমরা খুশি হতে পারছি না। তারপর যেহেতু বিশ্বের মুসলিমদের এটি একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। তারপরও আমাদের দলের পক্ষ থেকে পার্টির চেয়ারপারসন তিনি কারাগারে থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি দোয়া চেয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাদের শুভেচ্ছার কথা আমরা জানিয়েছি। যেহেতু একটা আনন্দের দিন, সেহেতু তারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আনন্দ ভাগ করে নেই। ব্যক্তিগত আনন্দের বিষয় থাকে না একটা উৎসবে। উৎসব যেহেতু সার্বজনীন, আমরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছি। পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছাবোধ করছি, কিন্তু আমাদের মাঝে যদি আমাদের প্রিয় নেত্রী থাকতেন তাহলে আমাদের খুশি আনন্দের আবর্তনটা হতো একটা ভিন্ন মাত্রায়। সেই যে ভিন্ন মাত্রাটা, ডিফারেন্ট যে ডাইমেনশনটা, সেই ডাইমেনশনটা এবার আমাদের নেই। স্বাভাবিকভাবেই এটা আমাদের মনকে ভারাক্রান্ত করছে এবং বেদনার্ত আছি এই খুশির দিনে।’

ঈদের দিনে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে দলের এই মুখপাত্র বলেন, ‘কার্যালয়ের পরিস্থিতি আমি বলবো অন্যদিনের চেয়ে আজকে খুবই মুখর ছিল। আজকে নেতাকর্মীরা প্রচুর পরিমাণে এসেছেন এবং আমি যে প্রায় চার মাস সাড়ে চারমাস ধরে এখানে এক ধরনের বন্দি জীবন কাটাচ্ছি- এটার জন্য সংহতি জানাচ্ছেন। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ঈদের আগেও অনেক নেতাকর্মী আমাদের শুভনুধ্যায়ী তাদের ঈদ গিফট দিয়েছেন। পাঞ্জাবি দিয়েছেন আমাকে। এগুলো তারা করেছেন তাদের দিক থেকে। রমযান মাসে এমনিতে নেতাকর্মীরা কম থাকেন। বিভিন্ন ইফতার পার্টি, সারাদিন যেহেতু সিয়াম সাধনার বিষয় থাকে, নেতাকর্মীদের ভিড় তুলনামূলক কম। কিন্তু আজকে ঈদের দিনে আমি বলবো অন্যান্য ঈদের দিনের চাইতে আজকে অনেক বেশি লোকসমাগম হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সবাই শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন। কেমন আছি সেটা দেখতে এসেছেন। আমাদের কয়েকজন সিনিয়র নেতা এসেছেন। আমাদের মিড লেভেলের নেতাকর্মীরা প্রচুর পরিমাণে এসেছেন এবং এখনও পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছেন যে, তাদের মধ্যেই আছি। তাদেরকে সাথে নিয়েই আছি। এটা একটা ব্যতিক্রম বলবে যে, অন্যান্য বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লোক সমাগম কম হয়, কারণ ম্যাডাম যেখানে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সেখানে বিপুল লোক সমাগম হয়। সেখানেই আমাদের থাকতে হয়। তারপর আমরা শহীদ জিয়ার মাজারে যাই। তারপর আমরা প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর যে কনিষ্ঠপুত্র তার কবরে আমরা যাই, এই কর্মসূচিগুলো থাকে। তারপর যে যার বাসায় চলে যাই। দলীয় কার্যালয়ে আসলে ঈদের দিন কম আসা হয়। মূলত আসাই হয় না। কর্মচারীরা অনেকেই বাড়িতে চলে যায়। এই কার্যালয় ঈদের দিন ফাঁকাই থাকে। খুব গুরুত্বপূর্ণ যদি কোনো ঘটনা না ঘটে তাহলে আসা হয় না।’

রিজভী আহমেদ বলেন, ‘কিন্তু এবারে আমার উপস্থিতির কারণে অনেকেই যেমন এখানে কর্মচারীরাও আছেন, নেতাকর্মীর ভিড়ও হয়েছে প্রচণ্ড। এটা আমাকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করেছে। আমাকে উৎসাহিত করেছে যে, আনন্দের দিনে, খুশির দিনে যারা একটু কষ্টে থাকে, তাদের প্রতি সহমর্মিতা আছে, তাদের প্রতি যে ভালোবাসা আছে নেতাকর্মীদের। সেটার আমি আজ প্রমাণ পেয়েছি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকা কর্মচারী এবং অন্যান্যদের ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘এখানেই তাদের ঈদের দিন কেটেছে। আমি যা খাচ্ছি, তারাও সেটা খাচ্ছে। তারা যেহেতু একটু বাইরে বের হতে পারে তারা সকালে গিয়ে নামাজ পড়েছে। ঈদের নামাজ তারা পড়ে এসেছে। তবে এটাও বলবো যে, সবারই ওই যে অন্যান্য যে ধরনের আনন্দ বা উৎসবের যে ফেস্টিভ মুড থাকে, সেই উৎসব মনোভাবটা কারো নেই। সবাই বিষণ্ন, দেখতে পাচ্ছেন কর্মচারীরা যারা এখানে আছেন সবাই সিম্পলভাবে আছেন, কিন্তু ওই স্বতঃস্ফূর্তটা তাদের মধ্যে নেই।’

রিজভী আহমেদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিলো তখন তার কক্ষে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে কথা হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা মো. আবু আব্বাস আলী, সরদার আমিরুল ইসলাম সাগর এবং মৎস্যজীবী দল নেতা মো. আরিফুর রহমান তুষারের সঙ্গে।

তারা জানান, ‘ঈদের দিনে রিজভী ভাইকে শুভেচ্ছা জানাতে ও তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে এসেছি।’

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের স্টাফ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল বেলা নয়াপল্টন জামে মসজিদে গিয়ে আমরা ঈদের নামাজ আদায় করেছি।’

ঈদে ছুটি নেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যরা ছুটিতে থাকলেও আলহাজ্ব মো. দলিল উদ্দিন, মো. রেজাউল করিম ও আমরা আছি।’

Print Friendly, PDF & Email