‘ঈদে কেনাকাটা করতে গেলে বোরকা পরে যাই’
মৌসুমি হামিদ। এ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ২০১০ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় রানারআপ হয়েছিলেন তিনি। রানারআপ হওয়ার দুদিন পর একটি অনুষ্ঠানে অক্ষয় কুমারকে কোট পরিয়ে আলোচনায় আসেন এই তারকা অভিনেত্রী। ফেরদৌস হাসান রানা পরিচালিত ‘মার ছক্কা’ দিয়ে প্রথম ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় শুরু করেন মৌসুমি। নাটকটিতে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন অভিনেতা অপূর্ব। আসন্ন ঈদুল ফিতর, বর্তমান ব্যস্ততা ও নিজের ভালো লাগা-মন্দ লাগা নিয়ে মুখোমুখি হলেন আমাদের সময় ডটকম’র। লিখেছেন মহিব আল হাসান।
শৈশবের ঈদ : অনেকদিন আগের কথা তখনকার পেক্ষাপট আলাদা ছিল। সেসময় বাবা মা, চাচাতো ভাই বোন ও কাজিনরা মিলে একসাথে ঈদ করতাম। ছোট্ট বেলায় সবাই একসঙ্গে ঈদ করতাম। সেই সময়টায় মনের মধ্যে একপ্রকার ঈদের আমেজ থাকতো ঈদের দিন থেকে ঈদের কয়েকদিন পর্যন্ত। বলতে গেলে ‘আলাদা’ মজা ছিল। এখন যেটা আর হয় না।
বিশেষ স্মৃতি : ছোটবেলায় ঈদের স্মৃতি বা মজার বিষয় হলো আমরা ঈদের আগেরদিন গ্রামের সকল কাজিনরা সবাই মিলে চাঁদা তুলতাম। চাঁদার টাকা দিয়ে রঙিন কাগজ কিনতাম। ময়দা দিয়ে আঠা বানানো। এরপর যেটা করতাম, রঙ্গিন কাগজ কেটে সুতা টেনে কাগজগুলো নকশা করে ঈদগাঁহ মাঠ সাজাতাম। অন্যরকম অনুভূতি ছিল সেসময়।
ঈদ কেনাকাটা করতে গিয়ে এমন কোন মুহুর্তের মুখোমুখি হতে হয়েছিল যেটা এখনো মাঝে মধ্যে নাড়া দেয় আপনাকে?
আসলে অনেক ছোটবেলার ঘটনা এখন আর সেভাবে মনে পড়ছে না। তবে পোশাক কেনাকাটা নিয়ে যেটা সবসময় হতো সেটা এমন ছিল যে, আমার ঈদের পোশাক লুকিয়ে রাখতাম যেটা অন্য বাড়ির কেউ না দেখে। ঈদের দিন নতুন পোশাক পড়ে বের হতাম, এটাই ছিল আমার ঈদ আনন্দের অন্যরকম অনুভূতি।
ঈদ কেনাকাটা করতে গিয়ে পরিবারের মধ্যে বাবা-মা ভাই-বোনদের কাছে আবদার ছিল কী?
বাবা মা কিংবা ভাই-বোনদের কাছে তেমন কোন আবদার ছিল না। কারণ আমি পরিবারের মধ্যে সবার ছোট ছিলাম। এজন্য আমার পছন্দমত জিনিসগুলো সবাই কিনে দিতো।
ঈদের দিন খুব সকালে সেসময় কী করতেন ? রান্না, ঘোরাঘুরি কোনটি বেশি ছিল?
গ্রামের দিকে ঈদ খুব সকালে শুরু হয় আর খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়। আমাদের বাড়িটা দ্বোতলা। সেখানে আমার চার চাচাসহ আট ভাই ও আমরা থাকতাম। দেখা যেত পরিবারে ভাই-বোনদের মধ্যে আমি একমাত্র মেয়ে। তাই আমি চাচাতো ভাইদের সাথে ঈদের দিন সকাল সকাল গল্প-আড্ডা দিয়ে সময় পার করতাম। আবার ঈদের দিনে ফুফুর বাসায় সবাই মিলে ঘুরতে যেতাম।
সালামির গল্প : পরিবারে আমি একমাত্র মেয়ে থাকায় অনেকের কাছে অনেক গিফট পেতাম। দেখা যেত আমার ফুফুরা এলে আমার জন্য অনেক গিফট নিয়ে আসতো। গিফট বা সালামির জন্য আমাকে কখনো কারো কাছে কিছু চাইতে হয় নি।
এখন আর কেউ পা ছুঁইয়ে সালাম করেনা। বিষয়টি বিলুপ্তির পথে। আপনি কী পা ছুঁইয়ে মুরব্বীদের সালাম করতেন?
হ্যাঁ আমি সালাম করতাম। ঈদের দিন মুরব্বীদের অবশ্যই সালাম করতাম। এখনো ঈদে আমি সালাম করি।
নতুন পোশাক পরে আয়নার সামনে নিশ্চয় নিজেকে দেখতেন? তারপর কাকে দেখাতেন?
নতুন পোশাক পরে আমি অবশ্যই আয়নার সামনে দাঁড়াতাম। দাঁড়ানোর কারণ হচ্ছে ড্রেসটা ঠিক হচ্ছে কি না, নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে এ বিষয়গুলো বেশি খেয়াল করাতাম।
এখন তো আপনি সেলেব্রেটি, ব্যস্ততায় কী গ্রামে যাওয়া হয়?
আমি প্রতিবার দেশের বাড়ীতে ঈদ করতে যাই। পরিবারের সকলের সাথে আমি ঈদ করতে বেশি পছন্দ করি। এখন যেটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে এমন, সকলে আমার কাছে ঈদ করতে চলে আসে।
কেনাকাটা করতে গিয়ে সাধারন মানুষ ও আপনার ভক্তদের কিভাবে সামলিয়ে নেন?
এই বিষয়টি এড়ানোর জন্য কেনাকাটা করতে গেলে বোরকা পরে যাই। এই জন্য এই বিষয়টা আমার উপর প্রভাব ফেলে না।
বিশেষ কোনো মানুষকে সময় দেন? সম্ভব হয় নাকি শুটিংয়েই সবকিছু ম্লান হয়ে যায়?
২০১২ সালের ঈদে একবার প্রিয় মানুষের সাথে ঈদ করেছিলাম এরপর আর করা হয় নি। এখন আর সময় দেওয়া হয় না। যে সময়টা দেই সেটা বাবা মা তাদের সাথেই।
নগরের ঈদ উৎসব, গ্রামের আমেজ মত কিনা?
গ্রামের ঈদ আর শহরের ঈদ পার্থক্য হচ্ছে গ্রামে ঈদ শুরুটা যত তাড়াতাড়ি শেষটাও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। শহরে ঈদের আমেজ লেগেই থাকে। গ্রামে সন্ধ্যা নামলেই তা শেষ।
কোথায় ঈদ করতে ভালো লাগে আপনার? খোলামাঠে সেই ছোট সবুজ গাঁয়ে নাকি ইট-কাঠ পাথরের শহরে?
আমার গ্রামেই ঈদ করতে ভালো লাগে। কারণ গ্রামের সবুজ আবহাওয়া গায়ে লাগে, না দেখা মুখগুলোর সাথে দেখা হয়, পরিবার-কাজিনরা সবাই মিলে ঈদ করতে পারি। আর এজন্য আমি ঈদ বা যে কোনো উৎসব গ্রামেই পালন করতে বেশি পছন্দ করি।
এবারের ঈদে কী কীনলেন?
এবারের ঈদে নিজের জন্য কিছুই কিনিনি। বরং পরিবারের জন্য কিনে পাঠিয়ে দিয়েছি। কারণ আমার শুটিংয়ের জন্য পোশাক বানানো হয় প্রতিমাসে। এজন্য আলাদাভাবে এ ঈদে কেনাকাটা করিনি।
সাধারন মানুষের ঈদ এবং শোবিজের ঈদে পার্থক্য কোথায়?
সাধারণ মানুষের ঈদটা ভিন্নধরণের হয়। যেমন ঈদের সাতদিন আগে থেকে তাদের ঈদটা শুরু হয়। জামা-কাপড় কেনা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগে থেকেই কিনে ফেলে তারা। অপরদিকে, শোবিজের মানুষের মধ্যে বড় ধরণের পার্থক্য থাকে। আমাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঈদের আগের দিন পর্যন্ত শুটিং থাকে। এজন্য সাধারণ মানুষের মত ওই সময়টা আমরা পাইনা। শুটিং শেষ করে বাসায় এসে সারাদিন ঘুমিয়ে পড়ি আর বিকেলে কিছু সময় ঘুরার জন্য বের হই।