মৃতকে পুনর্জীবিত করার বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ!
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্রায়োনিকস হল একদিন পুনর্জীবিত করার আশায় সদ্য মৃত ব্যক্তিকে বা সদ্য মৃত ব্যক্তির ব্রেইনকে অতি নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার পদ্ধতি। এটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ও গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি চীনে প্রথমবারের মতো এক নারীকে ক্রায়োজেনিক্যালি হিমায়িত করা হয়েছে। ঝান ওয়েনলিয়ান ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৪৯ বছর বয়সে মারা যান এবং তার স্বামী গুই জানমিন স্বেচ্ছায় তাকে ক্রায়োনিক প্রক্রিয়ার জন্য দিয়ে দেন।
ঝান ওয়েনলিয়ান তার দেহকে সমাজের বা মানুষের কল্যাণার্থে বিজ্ঞানকে দান করতে চেয়েছিলেন। তার স্বামীর ইচ্ছাও তা-ই ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিডিয়া দ্য মিররকে জানমিন বলেন, তিনি প্রাথমিকভাবে তার স্ত্রীর দেহকে ক্রায়োনিকস প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন যাকে ‘জীবন রক্ষা প্রকল্প’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় ওয়েনলিয়ানের দেহকে ২,০০০ লিটার তরল নাইট্রোজেনের মধ্যে রাখা হয়েছে। জিনানে জিনফেংগ বায়োলজিক্যাল গ্রুপ দ্বারা এ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। এ প্রক্রিয়া জিনফেংগ বায়োলজিক্যাল গ্রুপ, কিলু হসপিটাল শ্যানডংগ ইউনিভার্সিটি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক ক্রায়োনিকস কোম্পানি অ্যালকর লাইফ এক্সটেনশন ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকদের একটি যৌথ প্রয়াস।
অনেকেই সমস্ত বিশ্বাস নিয়ে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করলেও প্রশ্ন থেকেই যায়: বৈজ্ঞানিকভাবে এ ধরনের একটি প্রকল্প কিভাবে সম্ভব? এটি কি শুধুই মানুষের জীববিদ্যা আরো ভালোভাবে বুঝার গবেষণা হতে যাচ্ছে? নাকি ক্রায়োনিকস একদিন সত্যিই কার্যকর হবে বা বাস্তবে রূপ নেবে?
ক্রায়োনিকসের ক্ষেত্রে সময়কে বিবেচনায় রাখতে হয়। হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে মৃত দেহকে অবিলম্বে ক্রায়োজেনিক্যালি হিমায়িত করা হয়। ক্রায়োনিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ‘ফ্রিজিং’ একটি বিভ্রান্তিকর শব্দ, কারণ প্রকৃতপক্ষে ক্রায়োনিক ফ্রিজিংয়ে বিশেষভাবে বরফের স্ফটিক গঠনকে বর্জন করার চেষ্টা করা হয় যা শরীরের টিস্যুর কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ফ্রিজিংয়ের পরিবর্তে ‘র্যাপিড কুলিং’ এ প্রক্রিয়ার জন্য আরো বেশি সঠিক ব্যবস্থা। সাধারণত গ্লিসারল এবং প্রোপান্ডিয়লের মতো সংরক্ষকের রাসায়নিক ককটেলের সঙ্গে অ্যান্টিফ্রিজ এজেন্টসের (জমাটবিরোধী পদার্থ) ব্যবহার হয় শরীরকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় রাখার জন্য যেখানে এটি ক্ষয়প্রাপ্ত হবে না, এমনকি ধারণা হয় করা হয় যে খুব দীর্ঘসময় কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হলেও শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
সেখানে দেহকে নির্দিষ্ট বা বিশেষ যত্ন প্রদান করা হয়। মৃত্যু একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং একসময় তা বিপরীত হতে পারে ধারণাটি পোষণ করা হয়।
ক্রায়োনিক সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে, একদিন মৃত দেহ থেকে অবশতা বা জড়তা দূর হবে এবং তাদেরকে একটি সেলুলার লেভেলে খুব বেশি দেহাঙ্গের পরিবর্তন বা ক্রোমোজোমের পরিবর্তন বা জিনগত পরিবর্তন ছাড়াই জীবনসঞ্চার করা যাবে।
গবেষকদের একজন বলেন, আমি নতুন এবং উর্ধ্বমুখী প্রযুক্তিতে আস্থা রাখছি, তাই আমি মনে করি তাকে (ওয়েনলিয়ানকে) সম্পূর্ণরূপে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে।
আমাদের বর্তমান জ্ঞান ও প্রযু্ক্তির দ্বারা মৃত্যু থেকে প্রত্যাবর্তন এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে সম্ভব নয়। আমাদের কাছাকাছি পুনর্জাগরণ হচ্ছে, ক্লিনিক্যাল মৃত্যুর পরের মুহূর্ত যেখানে রোগীকে কার্ডিয়াক ডিফ্রিবিলেশনের মতো কোনো কিছু দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। যদিও সংক্ষিপ্ত সময়ের এই সংকটপূর্ণ কাজে ক্রায়োনিকসের ব্যাপারটি চলে আসে এবং সঙ্গে এ বিশ্বাস রাখা হয় যে মৃত্যু একটি ধোঁয়াটে বিষয়।
এখনো মৃত দেহকে পুনর্জীবিত করতে না পারার মানে এই নয় যে, ক্রায়োনিকসের ক্ষেত্রটি অপ্রয়োজনীয় বা অগুরুত্বপূর্ণ। চীনের এ ঘটনাটি ক্রায়োনিকস ক্ষেত্রে গবেষণায় নিয়োজিত সকলের জন্য এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার মতোই এবং এটা তাদের জন্য সুসংবাদ যারা ক্রায়োনিকস থেকে সুবিধা পেতে চান।
আমরা এখনো মৃত্যুর বিপরীত করতে সমর্থ হইনি, কিন্তু মনে হয় না এটি কল্পনাপ্রসূত সম্ভাবনা ক্ষেত্রের বাইরে। চলমান বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং প্রযুক্তি কোনো একদিন হয়তো পুনরুজ্জীবনের এ ক্রায়োনিকস প্রক্রিয়াকে সফল করে তুলবে।
আমাদের জীবদ্দশায় এটি সম্ভব হোক কিংবা নাই হোক, বিজ্ঞানের এই সাম্প্রতিকতম উন্নয়ন অবশ্যই আকর্ষণীয় একটি দিক।
তথ্যসূত্র : সায়েন্স অ্যালার্ট