দেশের তিন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুরবস্থায় লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষ
---
অতি বর্ষণ ও উজান নেমে আসা ঢলে দেশের তিন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন নদ নদীর পানি বৃদ্ধি এতে চরম দুরবস্থায় পড়েছে তিন জেলার লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষ। এদিকে বন্যার পানিতে ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত, পাট ক্ষেত ও আখ ক্ষেত তলিয়ে গেছে অনেক জায়গায়। তাছাড়াও বিভিন্ন জেলায় স্কুল, কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়,
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি রেজাউল করিম জানান, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অভ্যান্তরিন করোতোয়া, ইছমিতি, ফুরজোড়, হুড়াসাগরসহ বিভিন্ন নদীতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায় গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রানীগ্রাম চরমালশাপাড়া, চরমিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে বন্যায় ৫৮৭৭ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধান, পাট, সব্জিও আমন বীজ তলা রয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসাস ইমাম জানান এখন পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে কোন ঝুঁকি নেই । তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ঝুকি আসতে পারে সে ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
সরিষাবাড়ী(জামালপুর) প্রতিনিধি ফারুক হোসেন জানান, ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতি আরোও অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। হু হু করে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার সাতপোয়া, পোগলদিঘা, আওনা, পিংনা, ভাটারা ও কামরাবাদ ইউনিয়নে চরাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে শতাধিক বাড়ি ঘরে বন্যার পানি উঠায় মানবেতর জীবন যাপন করছে বন্যা কবলিত মানুষ। এ ছাড়া ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, পশ্চিম নলসন্ধা, দক্ষিণ নলসন্ধা, পশ্চিম মীরকুটিয়া, ঘুঞ্চা, আওনা, দক্ষিণ মালি পাড়া, উত্তর মালিপাড়া, নিউগিরটেংগর, মানিক পটল, কুবলি বাড়ি, চর জামিরা, চর হরিপুর, চর হরিপুর দক্ষিণ পাড়া, ডাকাতিয়া মেন্দা, বালিয়া মেন্দা ও আব্দুল মালেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলে বীজতলা ৩৫ হেক্টর, সবজি ২০ হেক্টর ও ৫৫০ হেক্টর জমির পাট সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি এম এস সাগর জানান, কুড়িগ্রামে দুধকুমর গঙ্গাধর ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বেড়েছে তিস্তা ও দুধকুমারসহ অন্যান্য নদীর পানি।
টানা পাঁচ দিন ধরে বন্যায় নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ৩শতাধিক গ্রামে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২লক্ষাধিক মানুষ। বানভাসী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাধ-উচু জায়গা আশ্রয় নিতে শুরু করেছে ও দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। বন্ধ রয়েছে জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে বন্যার পানিতে জেলায় ৭৭১হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে উঠতি আউশ ৭৪হেক্টর, বীজতলা ১১৩হেক্টর, সবজি ৩৪৪হেক্টর, পাট ২০০হেক্টর এবং আখ ৪২হেক্টর।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৫৮সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।