২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আজ থেকে কার্যকর
---
আজ শনিবার (১ জুলাই) থেকে কার্যকর হলো ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। এ বছর বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদে ২৯ জুন সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে নতুন অর্থবছরের এ বাজেট। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১ জুন এ বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন।
এবারের বাজেটে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ছিল নতুন ভ্যাট আইন। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু দেশব্যাপী ব্যাবসায়ীদের আপত্তির মুখে এ আইনটি আগামী দুই বছরের জন্য স্থগিত করা সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একই সঙ্গে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে বাংক আমানতের ওপর এক লাখ টাকার ওপর ৮শ’ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাবে দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। অর্থমন্ত্রীর এই দুই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে সরকারের মন্ত্রীরাও সমালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজেটের সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সর্বশেষে গত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভ্যাট আইন আগামী ২ বছরের জন্য স্থগিত এবং ব্যাংক আমানতের ওপর শুল্কহার কমানোর জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এমনকি তিনি ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্কহারের প্রথম তিনটি স্তর ঠিক করে দেন।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ মতো নতুন ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক আমানতের ওপর এ শুল্ক পরোপুরি মওকুফ, এক লাখ এক টাকা থেকে ৫ লাখ টাকার জন্য আবগারি শুল্কহার হবে ১৫০ টাকা, ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার জন্য আবগারী শুল্ক হার ৫শ’ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ২ হাজার ৫শ’ টাকা, এক কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক হার ১২ হাজার টাকা এবং আর ৫ কোটি টাকার ওপরে ব্যাংক আমনতের আবগারি শুল্ক হার ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। এর মধ্য দিয়েই ওই দিন জাতীয় সংসদে অর্থবিল -২০১৭ পাস হয়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য সংযুক্ত তহবিল থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিলও পাস করা হয়। পাস হওয়া বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের টার্গেট ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এ ছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে কর রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। করবহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির লক্ষ্য ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন ইতিমধ্যে আভাস দিয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। নতুন অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
নতুন এই বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা জোগান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রেখেছেন অর্থমন্ত্রী।
এটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা নবম বাজেট। এর আগে তিনি এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে আরও দুটি বাজেট দিয়েছিলেন।