বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে হচ্ছে ওয়ানস্টপ সার্ভিস
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভার্চুয়াল ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালুর পর দেশে বিদেশী বিনিয়োগ অনেক বাড়ার আশা করছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এই সার্ভিসটির মাধ্যমে ‘এক ছাতার’ নিচে বিদেশী কোম্পানিগুলো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সব ধরনের আইনি সহায়তা ও সুযোগ সুবিধা পাবে বলেও জানিয়েছে বিডা।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন ওয়েবভিত্তিক সিস্টেমের অধীনে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ চালুর পর বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে।’
এই সেবা চালু হলে একটি মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি আবেদন করার ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
বিডা প্রধান আরো জানান, ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিসে’র পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে দেশী বা বিদেশী যে কোনো বিনিয়োগকারীর জন্য ব্যবসা শুরু করতে ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেতে একটিমাত্র আবেদন করলেই চলবে।
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিসে’র অধীনে একটি কোম্পানিকে বিদ্যুৎ পেতে ২৮ দিন সময় লাগে এবং নির্মাণ কাজের অনুমতি পেতে সময় লাগে মাত্র ৬০ দিন। যেখানে আগে এই দুটি সার্ভিস পেতে সময় লাগতো যথাক্রমে ৪০০ ও ২৬৯ দিন।’
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এমন নজিরও আছে, বিদ্যুৎ পেতে কোম্পানিগুলোকে দুই বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতো; এবং ব্যবসা শুরু করতে আবেদনের পর থেকে তাদেরকে চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো।
বিডা প্রধান বলেন, ‘যে কোনো বিনিয়োগকারীর জন্য দ্রুত গতিতে সব ধরনের অনুমোদন ও সেবা পাওয়া একটি জটিল প্রক্রিয়া। কিন্তু যেহেতু আমরা ‘এক ছাতা’র নীচে কোনরকম ভোগান্তি ছাড়াই আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের দ্রুত গতিতে সেবা দিতে প্রস্তুত; সেহেতু আমাদের সব ব্যবসায়িক পরিবেশ শিগগিরই অনেক উন্নত হবে।’
‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ একটি মাত্র ওয়েবভিত্তিক ভার্চুয়াল সার্ভিস হবে বলে উল্লেখ করে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে বিনিয়োগকারীদের স্বশরীরে আবেদন করে সব ধরনের অনুমোদন ও সেবা পেতে, সেবা প্রদানকারীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হতো। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীরা অনলাইনে একটি ‘একক ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনে’র মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন এবং অনলাইনেই আবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার’টি আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিশ্ব ব্যংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)’র আর্থিক সহায়তায় রাজধানীর আগারগাঁও-এ অবস্থিত বিডা’র নতুন কার্যালয়ে স্থাপন করা হবে।
‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ বাস্তবায়নে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস অ্যাক্ট’ নামে একটি নতুন আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আইনটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়েছে এবং বর্তমানে জাতীয় সংসদে পাশের অপেক্ষায় আছে। আমরা আশা করছি চলতি বাজেট অধিবেশনেই আইনটি সংসদে পাস হবে।’
খসড়া আইনে সংশ্লিষ্ট অফিসকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ছাড়পত্র দেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই আইনের সব রীতিনীতি তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হওয়ার পর পরই আমরা ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার’টি চালু করতে পারবো।’
বিদেশী বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে, ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-র বোর্ড সভায় একটি আইন প্রণয়নের প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই বেজা’র ৪র্থ বোর্ড সভায় আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর আগে পর্যন্ত সরকারি অফিস থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নানান জটিলতার কারণে দেশে কোনো বিদেশী বিনিয়োগকারী ছিল না বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
উল্লেখ্য, বেসরকারিকরণ কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ডকে একত্রিত করে গতবছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রতিষ্ঠা করা হয়।