‘আমি আর বিয়ে করমু না’
---
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘আমি আর বিয়ে করমু না স্যার, বিয়ে করতে গিয়ে আমারে অনেক মারধর খাইতে হইছে। অনেক আশা নিয়ে পাত্রী দেখতে গেছিলাম কিন্তু এমন হইবে তা ভাবতে পারি নাই।’
আবদুল আজিজ বিয়ে করবেন বলে পাত্রী দেখতে গিয়েছিলেন। আর এরপরই শিকার হয়েছেন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আজিজ। সঙ্গে মোহাম্মদ আরমান নামে এক ব্যক্তিকে নিয়ে ‘পাত্রীপক্ষে’র দেওয়া ঠিকানায় যান। ‘পাত্রীপক্ষ’ ওই দুজনকে আটক করে মারধর করে। পরে স্বজনদের ফোন করে টাকা পাঠাতে বলে। আজিজ ও আরমান বুঝতে পারেন তাঁরা পড়েছেন প্রতারক চক্রের খপ্পরে।
তবে বিশেষ ক্ষতি হওয়ার আগেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকার কোনাপাড়ার একটি ফ্ল্যাট থেকে আজিজ ও আরমানকে উদ্ধার করে।একই সঙ্গে আটক করা হয় নয় ব্যক্তিকে। ডিবি জানিয়েছেন আটক ওই নয় ব্যক্তি একটি প্রতারক চক্রের সদস্য।
গতকাল বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশানার আবদুল বাতেন।
যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, মঙ্গলবার রাতে ডেমরা থানা এলাকার কোনাপাড়ার বাণী গার্মেন্টস আয়েশা বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ওই ব্যক্তিদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা নিজেদের পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত। এ সময় পুলিশ দুজন ‘ভিকটিম’কে উদ্ধার করেছে। ওই দুজনই আজিজ ও আরমান।
আটক ব্যক্তিদের নাম হচ্ছে, মো. আবদুল হালিম, মো. রনি, মো. মোবারক হোসেন, মোছা. রোজিনা, মো. সেলিম ওরফে ঘটক, মঞ্জু, রফিক, মোস্তফা ও হান্নান মাতব্বর।
আবদুল বাতেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছে, তারা নিজেদের পুলিশ, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং মারধর করে মুক্তিপণ আদায় করত।
যুগ্ম কমিশনার জানান, কৌশল হিসেবে ওই নয় ব্যক্তি বিভিন্ন পত্রিকায় ‘পাত্র চাই’ মর্মে বিজ্ঞাপন দিত। এসব বিজ্ঞাপন দেখে কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সেই ব্যক্তিকে বা পাত্রকে নিয়ে নির্দিষ্ট একটি ঠিকানায় আসতে বলত পাত্রী দেখার জন্য। এরপর যখন পাত্রী দেখার জন্য পাত্র বা সেই ব্যক্তিরা আসত, ঠিক তখনই তাদের একটি ঘরের ভেতরে নিয়ে হাতে হাতকড়া লাগাত। এরপর অন্য নারীদের দিয়ে ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে জোর করে ছবি তোলানো হয়। চক্রের কিছু সদস্য আবার নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, এসব ছবি মিডিয়ায় প্রচার করে দেওয়া হবে। এমন নানা রকম ভয় দেখিয়ে এবং মারধর করে ওই ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে থেকে ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে বা অন্য উপায়ে তাঁরা মুক্তিপনের জন্য টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ ছাড়া, এই চক্রের সদস্যরা ব্যবসার কথা বলে এবং বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে একই কৌশলে নির্দিষ্ট কোনো বাসায় বা অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করে।
যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, আটক করার সময় ওই নয় ব্যক্তির কাছে থেকে একটি ওয়াকিটকি, দুই জোড়া হ্যান্ডকাফ এবং কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ডেমরা থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে উপস্থিত ছিলেন আবদুল আজিজ ও মোহাম্মদ আরমান।
আবদুল আজিজ জানান, মোহাম্মদ আরমান ঘটকের মাধ্যমে একজন পাত্রীর সন্ধান জানতে পারেন। তিনি নিজে ছোটখাটো কাজ করেন, তাই সে রকম মধ্যবিত্ত ঘরের কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। পাত্রীকে দেখতে আরমানের সঙ্গে যান তিনি।
পাত্রী দেখানোর কথা বলে আজিজ ও আরমানকে প্রথমে কালীগঞ্জে যেতে বলা হয়। এরপর উভয়কে কোনাপাড়া এলাকায় নিয়ে আসা হয়। একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ বসতে বলা হয়।
কিছুক্ষণ পর ঘরের ভেতরে দুজন মেয়ে আসে। তারা ওই দুজনের সঙ্গে বিভিন্নভাবে ছবি তোলার চেষ্টা করে। অন্যরা আজিজ ও আরমানকে ভয় দেখায়। দুজনকেই মারধর শুরু করে। স্বজনদের কাছে থেকে টাকা আনতে বলে।
আবদুল আজিজ আরো জানান, তাঁরা ভয় পেয়ে টাকা দিতে রাজি হন। আবদুল আজিজ ১৫ হাজার ও আরমান ১০ হাজার টাকা দেবে বলে জানান।
তবে গতকাল রাতেই ডিবির অভিযানে আজিজ ও আরমান উদ্ধার হন আর আটক হয় প্রতারকচক্রের নয় সদস্য।
আরমান জানান, আটক নয় সদস্যের একজন সেলিমকে চিনতেন তিনি। সেলিম একটি মেয়ের জন্য পাত্র চাইছিল। আর এ কারণে আজিজকে নিয়ে পাত্রী দেখতে এসেছিল আরমান।
আরমান বলেন, ‘পুলিশ স্যারেরা না গেলে আমাদের কী হতো তা আল্লাহ জানে।’