ময়মনসিংহের হারুন হত্যা : ফালুর ভাইসহ ২৭ জনের যাবজ্জীবন
ময়মনসিংহের হারুন-অর রশীদ হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর ভাই নূর উদ্দিন আহম্মদসহ ২৭ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল- ২ এর বিচারক মমতাজ বেগম এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বিএরপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালুর ভাই নূর উদ্দিন আহম্মদ, আশরাফুল হক ওরফে আশরাফুল আলম, ওমর ফারুক, লিংকন, জালাল, সৈয়দ শামিম হোসেন, রহিম আহম্মদ, শামছুল ইসলাম, আবুল হোসেন, ফারুক আহম্মেদ, আকবর হোসেন, এরফানুর রহমান খান, সোলায়মান, জাহিদ, সাফায়াত উদ্দিন চৌধুরী আব্দুর রশিদ, গোলাম রব, শিশির চৌধুরী, অ্যাপোলো হোসেন, আসলাম, ইলিয়াস হোসেন, হিরু মোহাম্মদ, লিয়াকত আলী, কাঞ্চন মিয়া, শেখ আশরাফ হোসেন, আনিছুর রহমান ও আবু তাহের।
আসামিদের মধ্যে আশরাফুল হক, আব্দুর রশিদ ও নূর উদ্দিন আহম্মদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে ফ্রিডম পার্টির কিছু সদস্যের হামলায় পথচারী হারুন নিহত হন। ওই ঘটনায় সে দিনই নিহতের বোন-জামাই বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় তদন্ত শেষে বজলুল হুদাকে (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া ফ্রিডম পার্টির নেতা মেজর (অব.) বজলুল হুদা) প্রধান আসামি হিসেবে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। মামলাটি বিচারের জন্য ময়মনসিংহ আদালত থেকে ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠান হয়।
মামলা দায়েরের ২৬ বছর পর আদালত মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
হারুন হত্যা মামলার বাদীর এজাহার, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এবং আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ময়মনসিংহের পূরবী সিনেমা হল মোড়সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে ফ্রিডম পার্টির নেতা মেজর জয়নাল, মেজর বজলুর হুদা ও আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন গাড়ি থেকে নামে। চা খাওয়ার সময় ভিড় হলে লোকজনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গুলি চালায় ফ্রিডম পার্টির নেতা-কর্মীরা। এতে ঘটনাস্থলে আহত হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান স্থানীয় সেহড়া এলাকার যুবক হারুন (২৫)। একই সময় গুলিতে পথচারী জহুর আলী, মাহবুবুল, রামচন্দ্র, শামীম ও লিটন গুলিবিদ্ধ হয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। গুলি বর্ষণের পর প্রাইভেটকারযোগে ঢাকার উদ্দেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় বজলুল হুদাসহ ফ্রিডম পার্টির ৩০ নেতা-কর্মী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল ও ভালুকায় আটক হয়।
ওই ঘটনায় নিহত হারুনের বোন-জামাই মোশাররফ হোসেন বাবলু পরের দিন (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯০) কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মামলাটির চার্জশিট দেওয়া হয় ১৯৯০ সালের ১০ জুলাই।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ১১ অক্টোবর থেকে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয় ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে। এ আদালতেই প্রায় ১৯ বছর মামলাটির বিচারকাজ চলে। কিন্তু বিচার চলাকালে দেখা যায়, মামলার তদন্তে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ফলে আদালত মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ইসমাইল হোসেন আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় বিভিন্ন সময়ে ২৭ জন সাক্ষী দেন।