মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর
---
হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান তার সহযোগী জঙ্গি শরীফ শাহেদুল বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
বুধবার রাত ১০ টা ১ মিনিটে কাশিমপুর কারাগারে হান্নান, বিপুল এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রিপনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কাশিমপুরে সাকু ও রাজু এবং সিলেট কারাগারে ফারুক জল্লাদ এই ফাঁসি কার্যকর করেন। কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের ইমাম মাওলানা হেলাল উদ্দিন হান্নান ও বিপুলকে তওবা পড়ান। আর রিপনকে তওবা পড়ান সিলেটের আবু তোরাব জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুফতি বেলাল উদ্দিন।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ছগির মিয়া জানান, জল্লাদ ফারুকের নেতৃত্বে ১০ জন জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়। এছাড়া কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান জানান, কাশিমপুরে জল্লাদ রাজুর নেতৃত্বে ৭ জল্লাদকে প্রস্তুত রাখা হয়। এরা হলেন- হায়দার, সালাউদ্দিন, রুমান, ওয়াসিম, ইকবাল, আবিদ মুন্সী ও সাকু ব্যাপারি।
এর আগে দুই কারাগারের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সন্ধ্যার পরপরই কারাগারের আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। সতর্কাবস্থায় ছিল সাদা পোশাকের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। কোন হুমকি না থাকলেও তাদের সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি তিনজনের গ্রামের বাড়িতেও বসানো হয় পুলিশী প্রহরা। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দুপুরে কারা চিকিৎসক মিজানুর রহমান মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুলকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। এছাড়া সন্ধ্যার পর আরেক দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সন্ধ্যায় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জন কারাগারে পৌঁছান। রাত ৮টার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।এর আগে ৭টা ৪০ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল ইকবাল হোসেন। সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স দুটি কারাগারে প্রবেশ করে।
এদিকে মুফতি হান্নানের বড় ভাই আলি উজ্জামান মুন্সি, তার স্ত্রী জাকিয়া পারভিন রুমা, বড় মেয়ে নিশি খানম ও ছোট মেয়ে নাজরিন খানম বেলা ২টার দিকে মুফতি হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। এসময় হান্নান তার ভাইকে তার সন্তানদের লালন পালনের জন্য অনুরোধ জানান।
অপরদিকে দেলোয়ার হোসেন রিপনের সঙ্গে দেখা করতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে যায় তার পরিবার। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে শিশু, নারী ও পুরুষসহ রিপনের পরিবারের মোট ২৫ সদস্য তিনটি গাড়িতে করে কারাগারে পৌঁছান।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল মাজার প্রাঙ্গণে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন। এছাড়া হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া। এ ঘটনায় আহত হন আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন।
এ মামলার রায়ে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান, সাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলওয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয়া হয়। এই রায় আপিলেও বহাল থাকে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। তাদের আবেদন গত ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়ে যায়। এরপর প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন দন্ডপ্রাপ্তরা। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাদের আবেদন খারিজ করে দেন।