g সরাইলে কমিটি করে রাতভর জুয়া : প্রশাসন নিরব! | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সোমবার, ২১শে আগস্ট, ২০১৭ ইং ৬ই ভাদ্র, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সরাইলে কমিটি করে রাতভর জুয়া : প্রশাসন নিরব!

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ১০, ২০১৭

---

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংঘঠন বা খেলাধূলা পরিচালনার জন্য কমিটি ঘটনের বিষয়টি সবারই জানা। কিন্তু জুয়া খেলা পরিচালনার জন্য কমিটি গঠনের বিষয়টি বৈসাদৃশ্য, অবাস্তব ও অদ্ভুদ। তাও আবার ওই কমিটির সদস্য শুধু জুয়ারীরা নয়। কমিটিতে রয়েছে পুলিশের ৩-৪ জন সোর্সও। কমিটির কাজ শুধু জুয়া পরিচালনা নয়। খেলার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরনও তাদের দায়িত্ব। থানা ও ডিবি পুলিশসহ টোটাল প্রশাসন এবং কথিত সাংবাদিকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলার দায়িত্বও দেয়া হয়েছে ওই কমিটির কিছু সদস্যকে। সরাইল সদরের নাথ পাড়ায় এমন একটি কমিটির তত্বাবধানে গত ৩ সপ্তাহ ধরে চলছে জুয়া। বাবায় মারছে ঘুটি। আর পোলায় তুলছে টাকা। এভাবেই চলছে রাতভর জুয়া। থানা ও উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় এ জুয়া চললেও রহস্যজনক কারনে সবাই নির্বিকার। সেখানকার অধিকাংশ পরিবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হওয়ায় দাঁত কামড়ে সহ্য করছেন জুয়ারীদের তান্ডব। স্থানীয় লোকজন ও একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি মাদকের সাথে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জুয়া খেলার প্রবণতা। সমগ্র উপজেলায় ওরস গান সহ যে কোন উৎসবকে কেন্দ্র করে জুয়ারীরা হয়ে ওঠে মাতোয়ারা। প্রথম দিকে সাময়িক বাঁধার সৃষ্টি করে পুলিশ। মূহুর্তের মধ্যে রফায়দফায় সব হয়ে যায় ম্যানেজ। আর উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে জুয়ার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করে আসছে বাবুল মিয়া নামের এক ব্যক্তি। জুয়ারীদের কাছ থেকে টাকা তুলে আনার দায়িত্ব তারই। তাই যেকোন উৎসবে জুয়ারীদের আগে হাজির থাকেন বাবুল মিয়া। কতক্ষণ ঘুরে ফিরে পুলিশের কথা বলে টাকা নিয়ে চম্পট দেয় সে। থানায় ও পুলিশের সাথে সারাক্ষণ রয়েছে বাবুলের উঠাবসা। মাঠে ময়দানে পুলিশের সাথে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। তাকে অধিকাংশ মানুষ থানার ক্যাশিয়ার বলে ডাকেন। মাসিক বেতন না থাকলেও দামী মটরবাইক হাঁকান বাবুল। আর সেখানকার জুয়া পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ওই বাবুল মিয়া ও তার ছেলে হারুন মিয়া। এছাড়া আরজু মিয়া সহ আরো ৬-৭ জন। তারা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় জুয়া পরিচালনা করে থাকেন। প্রতিদিন রাত ৯টার পর বাবুল মিয়ারা ১নং ওয়ার্ডের নাথপাড়ায় ইছাগ আলীর পুকুরের উত্তর পূর্ব কোনায় বসে প্রকাশ্যে শুরু করে জুয়া। চলে ভোর পর্যন্ত। সারারাত পর্যায়ক্রমে কয়েক’শ লোক ৪-৫ লাখ টাকার জুয়া খেলে থাকে। নাথ পাড়ার জুয়া প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ১৩ মার্চ সোমবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় জোর আলোচনা হয়। প্রয়োজনীয় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন থানার প্রতিনিধি পুলিশ পরিদর্শক মোঃ কামরুজ্জামান। কিন্তু কোন সুফল আসেনি আদৌ। বরং দাপুটে চলছে জুয়া। সম্প্রতি রাত ১০টায় সরজমিনে দেখা যায়, জুয়ার বোর্ডের চারিদিকে জ্বলছে বিশেষ লাইট। দাঁড়িয়ে বসে আছে বিভিন্ন বয়সের ৩০-৪০ জন লোক। বাবুল ঘুটি মারছেন। দেদার পড়ছে টাকা। আর উল্টোপাশে বসে টাকা তুলছেন বাবুলের ছেলে হারুন মিয়াসহ ৩-৪ জন। কমিটির অন্য সদস্যরা খেলার চারিদিকে ঘুরছে। রাত যত গভীর হচ্ছে, ততই বাড়ছে খেলোয়াড়। আর উচ্চ কন্ঠে জুয়ারীরা বলছে- “মোটা ধরেন, মোটা নেন। ধরলেই লাভ। অল্প সময়ে অধিক লাভ। আর নাই। সোনার ঘুটি মার হরতন আর মডক।” ইত্যাদি শ্লোগানে মুখরিত সেখানকার জুয়ার আসর। জুয়ারীদের কিছু লোকই টাকা ধরেই পেয়ে যায়। এ দৃশ্য দেখে আগন্তোক লোকজন উজ্জীবিত হয়। লোভ সামলাতে না পেরে তাড়াহুড়া করে জুয়ার ঘরে টাকা ফেলতে থাকেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে পকেট ফাঁকা। চেহারা কালো ও মাথায় হাত দিয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরলেও মুচকি হাসেন জুয়ারীরা। উপজেলা ও থানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে জুয়ার এ তান্ডব নিয়মিত চললেও অজানা কারনে একদম নিরব প্রশাসন। একাধিক জুয়ারী জানায়, প্রশাসনের ৩-৪ স্তরে মাইনে দিয়ে ম্যানেজ করেই আমরা খেলা চালিয়ে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ শাহ আলম মিয়া বলেন, সেখানে প্রত্যেক রাতে টুকটাক জুয়া খেলা হয়। কথা বলে দেখছি বন্ধ করা যায় কিনা। সীমানা সংলগ্ন খালের পূর্ব পাড়ের বাসিন্ধা ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ হাবু মিয়া ক্ষোভের সাথে বলেন, সেখানে বেশ কিছু দিন ধরে প্রকাশ্যে জুয়া খেলা দেখছি। বিগত ১০-১২ বছর ধরে একটি চক্র কিভাবে খেলে যাচ্ছে বুঝি না। আমার এখান থেকে কয়েকবার পিটিয়ে তাড়িয়েছি। সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, আমি যতদূর জানি বাবুলকে সম্প্রতি থানা থেকে বের তরে দেওয়া হয়েছে। তার সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। নাথ পাড়ার জুয়ার বিষয়ে আমাদের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মহোদয়ের সাথে কথা বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

 

এ জাতীয় আরও খবর