সরাইলে ৩ মাদকাসক্তকে আটকের ৪ ঘন্টা পর ছাড় : বাণিজ্যের অভিযোগ
সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : সরাইলে ৩ মাদকাসক্তকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তাদের কাছ থেকে ৩-৪ পুরিয়া গাঁজা ও সেবনের যাবতীয় যন্ত্রপাতিও উদ্ধার করে। পরে নিয়ে আসা হয় থানায়। সাধারন লোকজন স্বস্থ্যির নিঃশ্বাস ফেলে। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যে পাল্টে যায় পুলিশের সুর। প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির দোহায় দিয়ে ওই ৩ মাদকাসক্তকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। রাত ১১টার দিকে থানার পিকআপ ভ্যানে করে তাদেরকে নামিয়ে দেয়া হয় কালিকচ্ছ বাজারে। তবে এ ঘটনায় ৩০ হাজার টাকা বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারন লোকজন। গত শনিবার রাতে উপজেলার কালিকচ্ছ বাজার থেকে আটকের পর সরাইল থানায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরা যে মাদকাসক্ত এর সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন এদের বয়স ৬০ বছর। তাই কিছুটা ছাড় দিয়েছি।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে কালিকচ্ছ বাজারের আমির মার্কেটের ৪র্থ তলা নিজ অফিসে বসে গাঁজা সেবন করছিলেন দূর্গাচরন দাস। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এস আই ইসমাইলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। অভিযানকালে হাতেনাতে আটক করা হয় দূর্গাচরন দাস, জজ মিয়া ও মনির কে। সেই সাথে তাদের কাছ থেকে ৩-৪ পুরিয়া গাঁজাও উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় ছুঁড়ি কলকিসহ গাঁজা সেবনের যাবতীয় সরঞ্জাম। রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় থানায়। গাঁজাসহ দূর্গা জজ মিয়া আটকের খবরে কালিকচ্ছ বাজার ও আশপাশের এলাকার লোকজন স্বস্থ্যির নিঃশ্বাস ফেলে। দূর্গা আটকের খবর পেয়ে বরাবরের মত দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক দলের নেতা। ছুটে আসেন থানায়। প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির দোহায় দিয়ে মাদকাসক্তদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জোর তদবির চলে। আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে থাকে পুলিশের সুর। কয়েক ঘন্টা পর পাল্টে যায় পুরো চিত্র। জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা বলেই ফেললেন-“দূর্গাকে আটক করলেই ছাড়িয়ে নিতে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা ফোন করতে থাকেন।” মাদকাসক্তদের আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুঠোফোনে বলেন, তাদের কাছে ৩-৪ পুরিয়া গাঁজা পাওয়া গেছে। বয়সও ৬০-এর উপরে। এমপি ও ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়। রাত পোনে ১১টার দিকে দূর্গাসহ ৩ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তাদেরকে থানার পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে কালিকচ্ছ বাজারে রাত সোয়া ১১টার দিকে নামিয়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ৩০ হাজার টাকা বাণিজ্যের বিষয়টি চাউর হচ্ছে কালিকচ্ছ সহ গোটা সরাইলে। সরাইল উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি ও কালিকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত-২ নং ওয়ার্ডের একাধারে পাঁচবারের নির্বাচিত মহিলা ইউপি সদস্য রোকেয়া বেগম ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করে বলেন, শতশত মানুষের সামনে দূর্গা ও জজ মিয়াকে সেবনকালে গাঁজাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সেখানে বসে তারা নিয়মিতই চামাইরা মদ ও গাঁজা সেবন করে। গ্রেপ্তারের পর আমি ওসি’র সাথে মুঠোফোনে কথা বলেছি। তিনি আমাকে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। পরে প্রভাবশালী নেতার তদবিরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। মাদক প্রতিরোধে যখন সরকার সোচ্ছার। সারা দেশে যখন মাদক ব্যবসায়ি ও সেবনকারীদের আইনের আওতায় নেয়ার জন্য জোর অভিযান চলছে। ঠিক তখনই সরাইল থানা পুলিশ গাঁজাসহ মাদকাসক্তদের হাতেনাতে ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিল। এ বিষয়ে সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ কামরুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, এরা মাদকাসক্ত। তবে তাদের নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট একটি বিরোধের কারনে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। বিরোধ নিস্পত্তি করে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।