শনিবার, ৮ই এপ্রিল, ২০১৭ ইং ২৫শে চৈত্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ

সৈকতে আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের নির্মাণ আগামী মার্চেই

AmaderBrahmanbaria.COM
এপ্রিল ৫, ২০১৭

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের গর্ব হিসেবে পরিচিত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝিনুক আদলে আন্তর্জাতিক মানের রেলস্টেশন। দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে এই রেলস্টেশন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটন আকর্ষণ করার জন্য এ আইকনিক ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৪০ কিলোমিটার নতুন রেললাইনে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারসহ ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে এ প্রকল্পে। এর মধ্যে কক্সবাজার বাস টার্মিনালের বিপরীত পাশে কয়েকশ একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হবে আন্তর্জাতিক মানের এই রেল স্টেশন। সমুদ্র সৈকত থেকে ৩০০ মিটার দূরেই এ রেল স্টেশন নির্মাণ করা হবে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর একটি। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামী মার্চ মাসের শুরুতেই এর কাজ পুরোদমে শুরু হবে। জায়গা অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হলে শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজার তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে জড়ো হবে। এ প্রকল্পে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা হচ্ছে কক্সবাজার রেলওয়ে টার্মিনাল। ঝিনুকের আদলে মনোরম স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন হবে টার্মিনালটি।

ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের (টিএআর) সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করতে বর্তমান সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। নতুন এ পরিকল্পনায় রামু হবে জংশন। সেখান থেকে একটি লাইন চলে যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে। আরেকটি লাইন পূর্ব দিকে মিয়ানমারের কাছে গুনধুম যাবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হবে বাংলাদেশের রেলপথ। এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত।

২০২০-২২ সালের মধ্যেই সব কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রথম দফায় দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার রেললাইনের কাজ শুরু হবে। তখন ঢাকা থেকে সরাসরি রেলগাড়ি আসবে সমুদ্র সৈকতের শহরে। আর সৈকতের স্টেশনটি হবে ঝিনুকের আদলে। যাতে এটিকে সমুদ্র সৈকতের স্টেশন বলে সহজেই চেনা যায়। বিশাল ঝিনুক আকৃতির কক্সবাজার স্টেশনে ঝিনুকের ভেতরেই হবে প্লাটফর্ম এবং যাত্রী আসা-যাওয়া ও বসার লাউঞ্জ।

পুরো প্রকল্পটিকে সরকারের ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরেই। আর এর মনিটরিং চলছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই। হাতি চলাচলের ৬টি পথ রেখে দ্রুত নির্মাণ হচ্ছে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেলপথ। ইতিমধ্যে এক হাজার ৩৯০ একর জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়াগত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে দরপত্রের কাজও শেষ হবে এবং আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ১৪০ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণকাজ শুরু হবে। এর মধ্যে ১০১ কিলোমিটার মূল লাইন ও ৩৯ কিলোমিটার লুপ লাইন রয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর ইসলাম বলেন, প্রকল্প নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে। ইতিমধ্যে দরপত্র বাছাই শেষে সম্মতির জন্য এডিবির কাছে পাঠানো হয়েছে। আর কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। এডিবির সম্মতির পর ‘প্রাইস বিডিং’ করা হবে।

কক্সবাজার-রামু-দোহাজারী ঘুরে দেখা গেছে, রেললাইনের ‘রুট এলাইনমেন্ট’ পিলার দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। চলছে জমি অধিগ্রহণ কাজ। উঁচু নিচু টিলা, বনভূমি ও সমতল সবুজ প্রান্তর পেরিয়ে রেললাইনটি শেষ হবে সমুদ্রতীরের একেবারে কাছে। এজন্য পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র নেয়া হয়েছে। এ পথে ১৪০ কিলোমিটার নতুন ‘সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ’ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। বনভূমির যেসব স্থানে বন্যপ্রাণী ও হাতির বিচরণ এলাকা, সেসব স্থান চিহ্নিত করে ‘প্যাসেজ’ নির্মাণ করে দেবে রেলওয়ে।

এই স্টেশনস্থল এখনও ধানি জমি। জমিটি রেলওয়ে চিহ্নিত করে রেখেছে। স্থানীয়ভাবে এ জায়গাটির নাম চৌধুরীপাড়া। রামু থেকে চৌধুরীপাড়ায় কক্সবাজার স্টেশনে আসতে রেললাইন দুবার সড়ক ক্রসিং করবে। একবার লিংক রোড মোড় ও আরেকবার বাইপাস মোড় অতিক্রম করেই কক্সবাজার শহরে আসবে রেললাইন। আবার রামু থেকে দোহাজারী যেতে হাতির বিচরণ এলাকা অতিক্রম করতে হবে। প্যাসেজ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে হাতি। এছাড়া এই রেলপথ নির্মাণ করা হলে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ হবে। এতে দেশি-বিদেশি পর্যটক বৃদ্ধিসহ কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে বলে স্থানীয়রা জানান।

প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ দুটি ভাগে বিভক্ত করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রথম ভাগে দোহজারী থেকে চকোরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণ, রেলের সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজ করা হবে। যাতে ব্যয় হবে তিন হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ভাগে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং কক্সবাজারে আইকনিক ইন্টারমডাল টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে যাতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবি সহায়তা দেবে ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই টার্মিনালকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বর্তমান সরকার।

টার্মিনালের চারপাশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন, বিপণি বিতান, বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। অগ্রাধিকার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ।