ব্রাহ্মণবাড়িয়া তিতাস পাড়ের মৃৎ শিল্প ধ্বংসের পথে
---
তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিন প্রাচীন একটি শিল্প রয়েছে আর তাই হচ্ছে (মৃৎ শিল্প)মাটির শিল্প। তিতাস নদীর পাড়ে ঘেষেঁ গড়ে উঠেছিল এই বৃহৎ কুমার পল্লীটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিমরাইল কান্দি এলাকাটি ছিল তারা কুমার পাড়া বা পালপাড়া খ্যাত ।একসময় কুমার পাড়ায় পোড়া মাটির মিষ্টি গন্ধে পুরো এলাকার বাতাস হয়ে থাকত অনেকটা ভারী। কিন্তু সরকারী ভাবে পৃষ্ঠ পোশকতা আর বাজারে কাচাঁ মালের উর্ধ্ব গতির কারণে মৃৎ শিল্পটি একরকম ধ্বংসের উপকৃম হয়ে দাড়িঁয়েছে। বিগত ১০/১২ বছর আগে ও তিতাস নদীর পাড়ে কুমার পল্লীতে ৬০/৭০ টি পাল পরিবার (কুমার) ছিলো। আর এখন সরকারি ভাবে পৃষ্ঠ পোশকতা অভাব আর বাজারে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিনে তৈরী প্লাষ্টিক সামগ্রি বের হওয়া দিনে দিনে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য সে মাটির হাড়িঁ-পাতিল তৈরী মৃৎ শিল্পটি অনেকটাই হাড়িঁয়ে যেতে বসেছে। অভাব, অনটন আর নানা অসুবিধার কারণে বাপ-দাদার এই কর্মকে ছেরে অনেকেই অন্য পেশায় দিকে ঝুকঁছে । বর্তমানে সেখানে দশ/বারটি পরিবার আছে যারা জীবনের তাগিদে আর পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করে এই পেশাকে ধরে রেখেছে। বাকিরা এই পেশা পরিবর্তন করে ফেলে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায় ।অনেকেই আবার নতুন জীবিকার সন্ধানে ভিটা মাটি বিক্রি করে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। সে কারণে দিনে দিনে শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কথা হয় কুমার পল্লীতে বসবাস করা দিনেস পাল ও রঞ্জন পালের সাথে তারা বলেন, বাপ-দাদা তথা চৌদ্দ পুরুষের এই শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। বাজারে কাচাঁ মালের বাড়তি দাম আর আর সংসারের অভাব -অনটনের কারণে আমরা এই পেশা থেকে সরে যাচ্ছি। কেউ আমাদের কোন খবর নেন না। শুনিছি সরকারি ভাবে প্রাচীনতম অনেক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কত ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃর্ক্ত এই মৃৎ শিল্পকে পেশাকে সাহার্য্য সহযোগিতা করে টিকিয়ে রাখতে কেউ এগিয়ে আসেনা। সরজমিনে ঘুরে অন্য আরো কয়েকজন মৃৎ শিল্পীর সাথে কথা বলে জানা যায়, যেখানে কুমারদের তৈরী মাটির রান্নার হাড়ি পাতিল, ঢাকনা, কলস,পুতুল,ভাশি, ডাবর, ধুপদানি, প্রদীপ, থালা, সরা, পটে আকা লক্ষীর সরা,তাগাড়ি,জল ঘট,জলেরপট, খেলনা, কড়াই, ফুলের টব, পিঠা বানানোর সাজ, চুলা, পানির কলসি, দইয়ের হাড়ি, ঢাকনা, ধূপ দানি ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা তৈরী করতেন,তৈরীকৃত পণ্য ভোর হলেই মাথায় নিয়ে চলে যেতেন লোকালয়ের বিভিন্ন পাড়ায়-মহল্লায়। কিন্তু সেখানে আজ চাহিদা কম থাকায়, ক্ষুদা আর অভাবের তাড়নায় ছুটতে হয়েছে তাদেরকে অন্য পেশায়। পেশা পরিবর্তন করে অনেকে দিনমজুর মজুর, বাদাম ,বুট, ভ্যান চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করছে, ভিন্ন পেশা বেছে নিচ্ছে অনেকে। তিতাস নদীর পাড়ে শিমরাইলকান্দির কুমার পাড়ায় বেকারত্ব প্রকটতর রূপ ধারণ করে অভিশাপ হয়ে দাড়িঁয়েছে।
কিযে নিদারুন দু:খ -কষ্টের মাঝে দিয়ে তারা দিন কাটায় সেটা কাছ থেকে না নিজের চোখেঁ না দেখলে বোঝা যাবে না। মৃত্তিকার প্রিয় এই জন্মভূমিতে তাদের দাবী, কুমার শিল্পকে সরকারি ভাবে সাহার্য্য -সহযোগিতা করে টিকিয়ে রেখে তাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য বাহী মৃৎ শিল্প খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া কুমার পল্লীকে আগের অবস্হায় ফিরিয়ে আনবে এটাই অবহেলীত মানুষগুলোর প্রত্যাশা।