রোহিঙ্গাদেরকে ধর্ষণ-গণহত্যা পরিকল্পিত : জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা করে রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। তাদের ধর্ষণ ও গণহত্যা করা হয়েছে।শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মায়ানমার সেনাবাহিনী ও পুলিশ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। নারী-শিশুরাও রক্ষা পায়নি তাদের হাত থেকে। নারীরা বর্বর ধর্ষণের শিকার হয়। ৯০ হাজার রোহিঙ্গা বাড়ি-ঘর ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
রোহিঙ্গাদের উপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারের অভিযোগ ওঠায় সেখানে তদন্তকারী দল পাঠায় জাতিসংঘ৷ ২২০ জন শরণার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা৷ শরণার্থীদের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচারের তথ্য পেয়েছেন তারা৷
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার জেইড রাদ আল হুসেন বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের উপর যে নিষ্ঠুর অত্যাচার করা হয়েছে, তা মেনে নেয়া যায় না৷ এলাকা খালি করতে সরকারি বাহিনীর যে অভিযান, তাতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ কী ভাবে অত্যাচার চালিয়েছে সেনাবাহিনী? তার বিবরণ যেন হার মানিয়ে যাচ্ছে নাত্সি সময়ের নির্যাতনকেও৷
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, দুধ খাওয়ার জন্য একটি শিশু কাঁদছিল৷ কান্না থামাতে না পেরে তাকে ছুরি মারে এক সেনা সদস্য৷ মায়ের সামনেই শিশুকে মেরে ফেলে৷ তারপর ওই মহিলাকে পাঁচ সেনা সদস্য মিলে ধর্ষণ করে৷
হুসেনের প্রশ্ন, কতটা ঘৃণা থাকলে এমন ভাবে একটি শিশুকে খুন করা যায়? আর একজন দেখেছেন, ছ’বছর বা তার থেকে কম বয়সের তিন শিশুকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে৷ যারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের আরও নির্মম ভাবে খুন করেছে মায়ানমার সেনাবাহিনী৷ খুন-ধর্ষণের ক্ষেত্রে শিশু থেকে প্রবীণ, কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি। একেবারে ছক কষে সন্ত্রাস দমনের নামে অভিযান চালানো হয়েছে৷ এতেও ক্ষান্ত হয়নি সেনাবাহিনী৷ যাতে রোহিঙ্গারা না খেতে পেয়ে মারা যায়, সেই লক্ষ্যে খাবারদাবার নষ্ট করা হয়েছে৷ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে ফসল৷ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে খাদ্যদ্রব্যের অন্যান্য উত্স৷ প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিত্সার সরঞ্জামও পর্যান্ত পরিমাণে মিলছে না সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়৷
তদন্তকারীরা যাঁদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন৷ ৪৩ শতাংশকে ধর্ষণ করা হয়েছে৷
হুসেনের প্রশ্ন, এটা সরকারি বাহিনীর কী ধরনের অভিযান? জাতীয় নিরাপত্তার কোনো স্বার্থে মায়ানমার সরকার এই ঘটনা ঘটিয়েছে?
অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কক্সবাজারের শরণার্থীরা৷ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আবেদন জানিয়েছেন তারা৷
উত্তরাংশের রাখাইন প্রদেশে ১০ লক্ষ রোহিঙ্গার বাস৷ তারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ বৌদ্ধ সংখ্যাগুরুর দেশে এই হিংসা কেন, প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে৷ যদিও মায়ানমার সরকার সেনার অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
তাদের মতে, এটা সন্ত্রাস দমন অভিযান৷ সীমিত ক্ষমতার অধিকারী হলেও সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন মায়ানমারের অবিসংবাদী নেত্রী অং সান সু কি৷
তার সরকার এই অভিযোগের তদন্ত করেছে৷ সরকারের দাবি, সেনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত৷ দেশের সংখ্যালঘুরা সুরক্ষিত রয়েছেন৷ প্রশ্ন উঠেছে নোবেল বিজয়ী সু কি -র ভূমিকা নিয়ে- যিনি অধিকারের দাবিতে দীর্ঘকাল আন্দোলন করেছেন, তিনি কেন সেনার অত্যাচার দেখেও নীরব?
জাতিসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক মহল সেনাবাহিনীকে দেয়া মায়ানমার সরকারের ক্লিনচিট খারিজ করে দিয়েছে৷ হুসেনের বক্তব্য, ‘মায়ানমার শুধু অভিযোগ খারিজের রাস্তা ছেড়ে দ্রুত নিরপেক্ষ ভাবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখুক, সে দেশে কতটা মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে৷ নিজেদের দেশের মানুষদের প্রতি তারা কতটা অত্যাচার চালিয়েছে৷
এদিকে হাতিয়ায় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা৷