g সরাইলে ওরসের নামে চলছে জুয়ার মহোৎসব | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ২৭শে জুলাই, ২০১৭ ইং ১২ই শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সরাইলে ওরসের নামে চলছে জুয়ার মহোৎসব

AmaderBrahmanbaria.COM
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭

---

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : সরাইলে ওরসের নামে সর্বত্রই চলছে জুয়ার মহোৎসব। ওরসের দিন তারিখ জেনে জুয়ারীরা প্রথমে কমিটির সাথে করে রফাদফা। পরে প্রশাসন। ভাগের পাওনা বুঝে নিয়ে যখন হয়ে যায় সকলেই নীরব। এরপরই দিনে রাতে জুয়া হয়ে যায় সরব। কোথাও গুটি। কোথাও চরকা। কোথাও তাস। উড়ছে টাকা। ধরছে জুয়ারীরা। মিনিটে হচ্ছে পকেটভারী। পরক্ষণেই ফাঁকা। বাড়ছে ছিনতাই ও ছিচকা চুরি। সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ভিটঘর গ্রামে ইসহাক কাজীর বাড়িতে ওরসের নামে গত তিনদিন ধরে চলছে জুয়ার মহোৎসব।

শুক্রবার ভোরে শেষ হয়েছে ওই গ্রামের জুয়ার স¤্রাট মতি মিয়া ও হারুন মিয়ার মিশন। লোভের ফাঁদে পড়ে স্থানীয় অনেক যুবকের পকেট খালি হয়েছে। আর কামাই করে নিয়েছেন জুয়ার স¤্রাটরা। ভিটঘর গ্রামের একাধিক জনপ্রতিনিধি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এ গ্রামের প্রয়াত ইসহাক কাজীর ছেলে দারুশাহ’র তত্বাবধানে প্রতিবছরই একাধারে তিনদিন চলে ওরস। গত ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে সেখানে শুরু হয়েছে ওরস। এ উপলক্ষ্যে ওই বাড়িতে আসছে ভক্তবৃন্দরা। আর পসরা সাজিয়ে বসেছে নানা রকমের দোকানপাট। দিনের চেয়ে রাতে লোক সমাগম থাকে বেশী। সুযোগে ওই গ্রামের জুয়ার স¤্রাট খ্যাত মতি মিয়া ও হারুন মিয়ার নেতৃত্বে মঙ্গলবার থেকেই বিরামহীন ভাবে চলছে জুয়া। প্রতিদিনই বসছে ৭-৮টি জুয়ার ঘর। উপজেলার অন্যান্য এলাকার তালিকাভূক্ত জুয়ারীদেরও সরব উপস্থিতি ছিল সেখানে। সরাইল থানার সোর্স খ্যাত বাবুল মিয়া ১টি মটর সাইকেলে নিয়মিতই হাজির হন সেখানে। জুয়ারীদের সাথে কানাকানি করে টাকা নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ার কথা জানান একাধিক জুয়ারী। কথিত সাংবাদিক সেজে ও জুয়ারীদের কাছ থেকে টাকা আনার বিষয়টি চাউর হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সেখানে জুয়ার মহোৎসব চলার খবর পান ইউএনও। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোবারক মিয়াকে দ্রুত জুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। মোবারক মেম্বারের হস্তক্ষেপে ওই সময়ের জন্য জুয়া বন্ধ হয়ে যায়। ইউপি সদস্য মোবারক মিয়া ওই গ্রামের মতি মিয়ার নেতৃত্বে সেখানে জুয়া চলার কথা স্বীকার করে আক্ষেপের সাথে বলেন, আমি কখনো জুয়ার সাথে আপোষ করিনি। আমার সাথে আর ২/৩ জন কাজ করলে এ গ্রামে জুয়া থাকবে না। কি বলব? অনেক ধরনের লোক এসে জুয়ারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। পুলিশের সাথে ঘুরাফেরা করে এমন কিছু লোককেও জুয়ারীদের সাথে ঘুরতে দেখেছি। এছাড়া বাবুল নামের সোর্সকেও তো মটরসাইকেলে করে এখানে আসতে দেখি। জুয়ারীদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, সকলকে টাকা দিয়েই ভাই আমরা জুয়া চালায়। প্রসঙ্গতঃ গত ২৮ জানুয়ারী শনিবার রাতে উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে বকুল শাহ’র ওরসে অভিযান চালায় সরাইল থানা পুলিশ। অভিযানকালে প্রকাশ্যে জুয়ার আসরে খেলা পরিচালনার সময় হাতে নাতে গ্রেপ্তার করা হয় সরাইলের জুয়ার স¤্রাট খ্যাত মোঃ আবদুল আওয়াল (৭৫), তার ছেলে মোঃ মোস্তফা (৩২) ও জুয়ারি মোঃ আক্তার হোসেন (৩৫) নামের জুয়ারিসহ ৩ জনকে।

আওয়ালের বাড়ি সরাইল সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা গ্রামের গড়ের পাড় এলাকায়। আর মোস্তফার বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা গ্রামের গাঙ্কুল হাঁটি। পরের দিন দুপুরে পিতা পুত্রসহ ৩ জুয়ারিকে হাজির করা হয় ভ্রাম্যমান আদালতে। আদালত তাদের ৩ জনের প্রত্যককে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে জেলহাজতে প্রেরনের নির্দেশ দেন। কিন্তু উপজেলা সদরে প্রকাশ্যে চিৎকার করে আওয়ালের পরিবারের সদস্যরা ও অন্য জুয়ারীরা বলতে থাকেন ‘ আওয়ালকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে পুলিশকে অনেক টাকা দিলাম, তারপরও জেল দিল এটা কেমন আচরণ!’ অভিযুক্ত বাবুল মিয়া মুঠোফোনে ভিটঘর জুয়ার আসর থেকে টাকা আনার কথা অস্বীকার করে বলেন, ভাই আমি এখন এ গুলো ছেড়ে দিয়েছি। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ রুপক কুমার সাহা বলেন, থানার সাথে জুয়ারীদের কোন সম্পর্ক নাই। টাকা নিয়ে জুয়া খেলার সুযোগ দেওয়ার কোন সিস্টেম আমার এখানে নেই।

এ জাতীয় আরও খবর