টাকা নিয়ে মেরে ফেলা হল শরীফকে : বন্দুক যুদ্ধে নিহতের দাবী করেছে পুলিশ
---
আমিরজাদা চৌধুরী : সোমবার দুপুরে সদর হাসপাতাল ডোমঘর এলাকায় কয়েকজন নারী-পুরুষের আর্ত চিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। কাছে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের জটলা। একজন মহিলা মাটিতে লুটিয়ে চিৎকার করছেন। অন্যরা সান্তনা দিচ্ছেন। প্রশ্ন করতেই বলল, পুলিশ আমার মেয়ের জামাইকে মেয়ে ফেলেছে। মধ্য বয়সী ওই মহিলার নাম জাহানারা বেগম। বার বার চিৎকার করে বলছিল, পুলিশ আমার ধারে ২ লাখ টাকা চাইছে। এরপর ২০ হাজার টাকা দেই। আমার কাছে তো এত টেহা নাই। ২০ হাজার টাকা নিয়েও ফেরত দেয়। সকালে খাবার নিয়ে থানায় গেলে পুুলিশ বলে, সিনেমা শেষ, কাহিনী শেষ। খাবার নিয়ে বাড়িতে যান। আরেক ব্যক্তি ডোম ঘরের পাশেই চিৎকার করছিল। আমি তাদের বিচার চাই। বার বার বলছিল-টাকাটা আমিই দিছি। ফোনে ফোনে পুলিশের সাথে কথা হয়। আশুগঞ্জ উজান ভাটি হোটেলে আসি। যাওনের পর আমার চাচাতো ভাই স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতাকে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। ২ লাখ টাকা দাবী করে। আমি গরীব মানুষ। দারোগাকে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা দেই। রিপোর্টটা নর্মাল ও মামলার একটি কপি দিতেও বলি। আমাকে আশ্বস্ত করে। রাতে আশুগঞ্জ ডে নাইট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা বাবদ ২৬৪ টাকা আমার কাছ থেকে গ্রহন করে। গভীর রাতে বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়ি। রাত পৌনে ২টায় দারোগা আমাকে ফোন করে গোল চত্বর এলাকায় আসতে বলে। টাকাগুলো ফেরত দেয়। বলেন, ওসি সাহেব গরম। কথা বলা যাবে না। টাকা নেন গা। অসুবিধা আছে। তাকে মেরে টাকাগুলো ফেরত দিয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই। রবিবার রাতে আশুগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত শরীফ (২৮) এর শ্বশুর চরচারতলা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মহরম সদর হাসপাতাল মর্গ এলাকায় এসব কথা বলার সময় অনেকের চোখ ভিজে যাই। নিহতের স্ত্রী ৩ সন্তানের জননী কোহিনুর বেগম জানান, গত রবিবার বিকেল ৫টায় উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামের রহিসের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে থানায় নিয়ে ব্যাপক মারধর করে উপজেলার ডে নাইট হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়।
তবে আশুগঞ্জ থানা পুলিশের দাবী, নিহত শরীফ এলাকার চিহ্নিত ডাকাত। রাত প্রায় ৩টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় এ বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের এএসআইসহ ৪জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, কার্তুজ, কার্তুজের খোসা ও তিনটি রাম দা উদ্ধার করেছে। নিহত শরীফ উপজেলার চরচারতলা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী , সোমবার ভোর রাতে শরীফকে নিয়ে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় ডাকাত ধরার অভিযানে গেলে শরীফের সহযোগীরা পুলিশের উপর ২৫/৩০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ৮ রাউন্ড পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে গুলি বিদ্ধ হয়ে মারা যায় শরীফ। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিনের দাবি, নিহত শরীফ ডাকাতদলের সদস্য। তার বিরুদ্ধে আশুগঞ্জ থানায় ডাকাতি ও বিস্ফোরক আইনে আটটি মামলা রয়েছে। গুলিবিনিময়ের সময় পুলিশের ৪সদস্য আহত হয়। গুরুতর আহত পুলিশের এএসআই মোঃ সারফিন মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। তবে সে কিভাবে আহত হয়েছেন তিনি এর সদুত্তর দিতে পারেননি। আহত কনস্টেবল আবদুল মান্নান, ফারুক মিয়া ও লিয়াকত মিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হয়। ওসি আরও জানান, শরীফের সহযোগীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদেরকে আটক করা সম্ভব হয়নি। আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন অর্থ লেনদেন ও অর্থ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।