জঙ্গি হামলা ও তৎপরতা রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ৫৩ শিক্ষার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যারা ১০ দিনের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে অনুপস্থিত রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যে এই তালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়। এরই মধ্যে ৫৩ শিক্ষার্থীর ঠিকানায় কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হারুন উর রাশিদ আসকারী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হবে। ওই দিনই নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাজির হয়ে অনুপস্থিত থাকার যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে হবে তাদের। তাতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারা দেশে নিখোঁজদের তালিকা তৈরির কাজে হাত দেয়। এ দুটি ঘটনায় জড়িতদের অনেকেই উচ্চবিত্ত পরিবারের এবং দেশ-বিদেশের নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন। এঁরা হামলার বেশ কিছু সময় আগ থেকেই পরিবার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) যেসব পরিবারের সন্তান নিখোঁজ রয়েছে তাদের অভিভাবকদের থানায় অভিযোগ করতে বলে। এরপর বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব প্রথম দফায় গত ২০ জুলাই তাদের ফেসবুক পেজে ২৬১ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করে। এর পাঁচদিন পর সংশোধন করে ৬৮ জনের নামের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ সময় বলা হয়, প্রথম তালিকা প্রকাশের পর অনেক নিখোঁজ ব্যক্তি তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন বলে তথ্যে পাওয়া যায়। র্যাবের এ তালিকা হালনাগাদের কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া।
সবশেষ তৃতীয় দফায় গত ৯ আগস্ট র্যাব নিখোঁজ ৭০ জনের তালিকা প্রকাশ করে।
একই সময়ে র্যাবের পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০ দিন ধরে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ আগস্ট ‘নিখোঁজ’ শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি আসে বলে আজ বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ড. আমানুর আমান।
সহকারী রেজিস্ট্রার বলেন, চিঠিতে জানানো হয়, ১০ দিন ধরে যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমে অনুপস্থিত আছেন, তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি যখন আসে তখন উপাচার্য অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সভা করে গত ২৮ আগস্ট।
সেই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। এর মধ্যেই ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মাত্র পাঁচটি বিভাগ তাদের অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা দিয়েছে। বাকিরা সেই তালিকা এখনো দেয়নি।
ড. আমানুর আমান বলেন, তালিকা পাওয়ার পর পরই তাদের নামে কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুপস্থিত ৫৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে আছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের ছয়জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১১ জন, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ১৩ জন, মার্কেটিং বিভাগের পাঁচজন, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগের ১৮ জন।
যেসব বিভাগ এখনো তালিকা জমা দেয়নি, তারা ঈদুল আজহার ছুটি শেষে দিয়ে দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সহকারী রেজিস্ট্রার।