নিউজ ডেস্ক : ঈদে বাসভাড়া না বাড়াতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশনা এবারও গায়ে মাখেননি পরিবহন মালিকরা। ঈদের প্রায় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই কোথাও দ্বিগুণ, কোথাও তার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ঘরমুখো মানুষদের থেকে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ততো ভাড়ার পরিমানও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। অনেকেই পরিবহন খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
সরেজমিন রাজধানীর সায়দাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাসস্টান্ড ঘুরে দেখা গেছে, সকল রুটের সকল পরিবহনেই ১৫ দিন আগের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে আড়াইগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বাসের দুই পাশের সিটের মাঝখানে চলাচলের জায়গাটিতে মোড়া বসিয়ে সেটিও বিক্রি করা হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। এ বিষয়ে একাধিক বাস সহকারী জানান, ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর ছাদও বিক্রি হবে। ছাদে অন্তত ২০ জন মানুষ তারা তুলবেন।
শনিবার সকালে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য পরিবার নিয়ে মহাখালী বাসস্টান্ডে গিয়েছিলেন শফিক আহমেদ। নিরালা পরিবহনের টিকিট কাটতে গেলে জনপ্রতি ১৬০ টাকার ভাড়া চাওয়া হয় ৪০০ টাকা। দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, ”ভাই, সামান্য বাড়াইছি। ঈদের সময়। বাড়ি যাবেন, আমাদের ঈদ করার জন্য কিছু দিয়ে যাবেন না?”
শফিক আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি ঈদে যোগাযোগ মন্ত্রীকে (সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী) টিভিতে হুঁশিয়ারি দিতে শোনা যায়। কিন্তু ওই হুঁশিয়ারি পর্যন্তই। কে শোনে কার কথা! ভাড়া ঠিকই বাড়ে।
টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সকল বাসেই প্রায় একই হারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়, ভাড়া বৃদ্ধিতে তাদের কোন হাত নেই। তাদেরকে যে দামে টিকিট বিক্রি করতে বলা হয় তারা সেটাই করেন। তবে বাসের হেলপার, কণ্ডাক্টররা নিজ দায়িত্বে মোড়া বসিয়ে কিছু রোজগার করেন।
এদিকে গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা, মংলা, বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ দক্ষিণবঙ্গের সকল রুটে বাসভাড়া দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। খুলনাগামী সুন্দরবন পরিবহনের এক যাত্রী মাসুম রাসেল জানান, অন্যান্য সময় ভাড়া ৩৫০ টাকা। আজ (শুক্রবার) ভাড়া চেয়েছিল ৮০০ টাকা। তারা নাকি ৯০০ টাকায়ও টিকিট বিক্রি করছেন। পরে আমি নিয়মিত যাত্রী বলে আমাকে নাকি ৭০০ টাকায় দিয়েছে। রাসেল আরও জানান, দু’দিন আগে তার ভাগ্নি পর্যটক পরিবহনে মংলা গেছে। তার কাছ থেকে ৩৫০ টাকার ভাড়া ৬০০ টাকা রেখেছে। একই অবস্থা এখানকার সকল পরিবহনের।
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সরকারও মনে হচ্ছে পরিবহন মালিকদের কাছে জিম্মি। না হলে প্রতিবার একই ঘটনা হচ্ছে, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে মন্ত্রীরা বৈঠক করছেন, নানা হুঁশিয়ারি, পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না।
এদিকে শনিবার সকালে গাবতলী বাসস্টান্ডে গিয়ে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভীড়। রাজবাড়ীর যাত্রী হাফিজুর রহমান বলেন, বাসভাড়া অত্যাধিক। রাজবাড়ী পর্যন্ত ২৫০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ৩৫০ টাকা। আর গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত ৮০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১৫০-২০০।
জিসান নামে এক ব্যক্তি ঢাকা থেকে লালমনিরহাট যাওয়ার জন্য শনিবারের (১০ সেপ্টেম্বর) টিকিট কেটেছেন। তিনি জানান, ৫০০ টাকার টিকিট তার কাছ থেকে ৮২০ টাকা রেখেছে। ফেরার সময় এই টিকিটের দাম আবার ১২০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।