স্পোর্টস ডেস্ক : ঈদ মানে আনন্দ। সেই আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেছে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েদের। এবারের ঈদ একটু অন্য রকম হয়েই ধরা দিচ্ছে মৌসুমী-সানজিদাদের।
আবাসিক ক্যাম্পের জন্য এই মেয়েরা গত ঈদে ঢাকায় ছিল। বাবা-মাকে ছাড়া বাফুফে ভবনে ঈদটা মোটেও ভালো কাটেনি সেবার। কিন্তু এবার প্রায় তিন মাস পর ৬ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফিরেছে মেয়েরা। এলাকাবাসী সংবর্ধনা দিচ্ছে। সোনার মেয়েদের এক নজর দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছে সবার বাড়িতে। এরই মধ্যে প্রত্যেক ফুটবলারকে এক লাখ করে অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ফুটবল ফেডারেশনও ১৭ সেপ্টেম্বর সংবর্ধনা দেবে কৃষ্ণা-সানজিদাদের। সেখানেও হয়তো পুরস্কারের ঘোষণা থাকবে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ আনন্দেই কাটবে এই মেয়েদের।
রংপুরের মেয়ে মিসরাত জাহান মৌসুমী বাবা-মায়ের সঙ্গে সাভারে থাকে। বাবা আবদুল কাদের রাজমিস্ত্রি। ভোর হলেই বেরিয়ে যেতে হয় কাজের খোঁজে। ‘দিন আনি দিন খাই’—এই নিয়মেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন আবদুল কাদের। মেয়েকে ফুটবল খেলতে পাঠিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি। এখন সেই মেয়েকে দেখলে প্রতিবেশীরা প্রশংসার ফুলঝুরি ফোটান। মৌসুমীর ভাই মোরশেদ আলম সাভার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার একটি দরজির দোকানের কাটিং মাস্টার। বেশি পারিশ্রমিকের আশায় ‘ওভারটাইম’ করেন মোরশেদ। বোনের এমন সাফল্যের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে ভাইকেও, ‘মৌসুমী এত ভালো খেলেছে, সবার মুখে ওর প্রশংসা। পত্রিকায় ওর ছবি ছাপা হলে লোকজন কিনে এনে আমার হাতে দিতে। বলতো, তোমার বোনের খেলা দেখেছি। কী যে ভালো লাগে তখন!’
রংপুরে গ্রামের বাড়ি রামজীবনে বেড়াতে গেছে মৌসুমী। সেখান থেকে আজ মুঠোফোনে বলছিল, ‘এবারের ঈদটা আমার সবচেয়ে স্মরণীয়। রংপুরে আসার পর পরিচিত-অপরিচিত সবাই আমার খেলার প্রশংসা করছে। বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে দেওয়া গোলটা সবার চোখে আটকে আছে। ওই গোলের প্রশংসা করছে সবাই।’ ঈদের কেনাকাটা এখনো করেনি মৌসুমী। তবে ঈদের আগের দিন নতুন জামাকাপড় কিনবে, ‘ভাইয়া মার্কেটে যাওয়ার সময় পাচ্ছেন না, ঈদের আগের রাতে জামা কিনবেন।’
মৌসুমীদের পাশের গ্রাম জয়রামের মেয়ে সুলতানা আক্তারের দিনগুলিও আনন্দেই কাটছে। ঈদের কেনাকাটা করতে আজ সদরে যাওয়ার কথা তার।
ঢাকা থেকে ফেরার পর সুলতানার জীবনটাই যেন বদলে গেছে, ‘আমাকে দেখলেই লোকে এখন ডেকে কথা বলে। খেলার প্রশংসা করে। অথচ শুরুতে খেলতে গেলে প্রতিবেশীরা বলতো, মেয়েদের ফুটবল খেলে কি হবে?’ এই গ্রামের আরেক মেয়ে ইশরাত জাহান রত্নার জন্যও ঈদটা বেশি আনন্দের। বাবা বাদশা মিয়া ভ্যানগাড়িতে করে সবজি বিক্রি করেন। মেয়ে ফুটবল খেলে এবার এক লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার পাচ্ছে শুনে ভীষণ উচ্ছ্বসিত বাদশা মিয়া, ‘মেয়ে এত দূর যেতে পারবে তা অনেকে বিশ্বাস করত না। এলাকার সবাই এখন ওকে নিয়ে গর্ব করে।’
ডিফেন্ডার নার্গিস খাতুনের বাবা রাজশাহী বাগমারা বাজারের কীটনাশক ঔষধ ব্যবসায়ী। মেয়েকে নিয়ে তাঁরও গর্বের সীমা নেই, ‘বন্ধুরা খেলা দেখে এসে বলত, তোমার মেয়ে এত ভালো ফুটবল খেলে! কথাগুলো শুনলেই গর্বে বুকটা ভরে ওঠে।’
ছোটবেলায় বিলের পানি শুকিয়ে গেলে সেখানে টুকটাক ফুটবল খেলতেন আকবর আলী। কিন্তু তাঁর মেয়ে এখন ফুটবল খেলে দেশ মাতাচ্ছে, ভাবতেই অন্য রকম আনন্দ পান। নার্গিসও ভীষণ উচ্ছ্বসিত, ‘দলে রাজশাহী বিভাগের একমাত্র মেয়ে আমি। আমাকে দেখতে দূর থেকে লোকজন বাড়িতে আসে। সবাই বলে আমাকে আরও দূরে যেতে হবে।’
মা ও দুলাভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে এরই মধ্যে ঈদের কেনাকাটা সেরেছেন। থ্রি–পিসের সঙ্গে কিনেছেন মেহেদি ও রঙিন চুড়ি। তবে জামাকাপড় আর চুড়ি পরে বসে থাকার সময় নেই নার্গিসদের। ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শুরু অনুশীলন ক্যাম্প। আবারও যে জার্সি পরে নেমে পড়তে হবে মাঠে।