নিউজ ডেস্ক : দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আবার সামনে চলে এলো ঈদ-উল-আযহা। তাই আজ আপনাদের সামনে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা ও প্রাসঙ্গিক কয়েকটি বিষয় তুলে ধরব।
এতদিনে নিশ্চয়ই ঈদ-এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, ঈদ -উল- আযহা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে রোযার ঈদের গুরুত্ব কি কম? আসলে তা নয়। ঈদ-উল-ফিতর হচ্ছে- দীর্ঘ ১মাস তাকওয়া অর্জনের অন্যতম নেয়ামত রোজা আদায়ের পর ঈদ উৎসব পালন করা। আর কুরবানীর ঈদ আনন্দের হলেও একটু ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ত্যাগের নিদর্শন। আসুন সংক্ষেপে এই ঈদের ইতিহাস, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো জেনে নেই।
আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও ত্যাগের অন্যতম নিদর্শন পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। আরবী জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হয়। তবে ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত কুরবানী দেয়া যায়। এই দিনে হযরত ইব্রাহমি (আঃ) মহান আল্লাহর নির্দেশে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের জন্য তার প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি ইব্রাহীম (আঃ) এর আনুগত্য ও ভালোবাসা দেখে হযরত ইসমাইল আঃ এর স্থলে দুম্বা কুরবানী করিয়ে দেন। আর সেই থেকে কুরবানীর এই নিয়ম প্রচলিত।
কুরবানীর পশু কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ধর্মীয় নির্দেশ মত পশু কিনবেন। অর্থাৎ- রং, শারীরিক গঠন (যেন কানা, খোঁড়া বা রুগ্ন এবং গাভী না হয়)। নিজের সাধ্যের মধ্যে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কুরবানীর পশু কিনবেন। বেশি দামে পশু কিনে নাম ছড়ানোর উদ্দেশ্যে হলে কুরবানী কবুল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
কুরবানী করার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমনঃ পশু জবাই করার সময় পশুকে বাঁধার জন্য ভাল ও শক্ত দড়ি বা রশি, জবাই করার জন্য ধারালো ও বড় ছুরি, পশুর চামড়া ভাল ভাবে ছাড়ানোর জন্য ছোট-বড় ছোরা, গোশত কাটার জন্য কাঠের গুড়ি, চাপাতি ও গোশত কাটার স্থানের জন্য বড় পলিথিন কিংবা খেজুরের পাতার মাদুর, ইত্যাদি আগেই সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে রাখুন।
কুরবানীর হাটে যেতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আমরা অনেকেই ছোট ছেলে- মেয়েদের গরুর হাটে নিয়ে যাই। নিরাপত্তার সার্থে এই বিষয়টি এড়িযে যেতে চেষ্টা করাই ভল।
নগদ টাকা সাথে না নিলেই ভালো। সম্ভব হলে এটিএম অথবা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন। টাকা লেনদেনে খুব সতর্ক থাকবেন বিশেষ করে জাল নোট থেকে সতর্ক থাকবেন। কুরবানীর হাটে জালনোট ছড়ানোর একটা বড় সমস্যা দেখা দেয়।
পশু ক্রয়ের পর ভালভাবে পশুর যত্ন নিতে হবে। মানুষের চলাচলে সমস্যা হতে পারে এমন যায়গায় কুরবাণীর পশু না রাখাই ভাল।
কুরবানীর পূর্বে পশুকে ভালো ভাবে গোসল করিয়ে বা ধুয়ে নিবেন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন- রশি, বালতি ইত্যাদি আগে থেকেই হাতের নাগালে রাখবেন।
কুরবাণীর গোশত শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী বণ্টন করবেন অর্থাৎ ৩/২ ভাগ দরিদ্র ও আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করবেন। মনে রাখবেন, শরীয়তের নিয়মের বাইরে কিছু করলে কুরবাণী কবুল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন।
কুরবানীর কাজ শেষ হলে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে দিন যেন রাস্তায় কোন রক্ত বা ময়লা আবর্জনা পড়ে না থাকে। এত করে আপনি, আপনার প্রতিবেশী এবং পথচারীরা বিভিন্ন রোগ সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। সম্ভব হলে ব্লিচিং পাউডার চিটিয়ে দিতে পারেন।
কুরবানীর পশুর চামড়া কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দান করতে পারেন অথবা উহার মূল্য দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন।
পরিশেষে সবার ঈদ ভালো কাটুক এবং আনন্দময় হয়ে উঠুক এটাই প্রত্যাশা। আর যারা ঈদের উদ্দেশ্যে গ্রামে যাবেন বা নিয়মিত কর্মস্থল ত্যাগ করে বাড়ি যাবেন তারা, নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।