শনিবার, ২রা জুন, ২০১৮ ইং ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

রাজনীতিতে আগ্রহ বাড়ছে তারকাদের

22511-herবিনোদন ডেস্ক : শুধু নিজের অভিনয় বা গান দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করাই নয়, দেশীয় শোবিজ তারকাদের অনেকেই এখন রাজনীতির মাঠে সরব রয়েছেন। মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই তারকাদের এই রাজনীতিতে অংশ নেওয়া। আর তাদের সরাসরি রাজনীতিতে আসার এ প্রবণতাকে দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদরা ইতিবাচকভাবেই দেখছেন।দেশীয় টিভি তারকাদের মধ্যে রাজনীতিতে সফল মুখ আসাদুজ্জামান নূরকে তার পরের প্রজন্মের অনেকেই অনুসরণ করছেন। প্রয়াত নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী সৃষ্টি ‘বাকের ভাই’ খ্যাত এই অভিনেতা এখন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী। একসময় তিনি পেশাদার শিল্পী হবার পাশাপাশি রাজপথের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। নীলফামারী থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কণ্ঠশিল্পী মমতাজকে রাজপথের আন্দোলনে পাওয়া না গেলেও তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী বলে বর্তমান সরকার তাকে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেছেন।এক সময়ের সাড়া জাগানো টিভি ও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী তারানা হালিম বর্তমান সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। এই পদে আসীন হয়ে এরইমধ্যে তিনি নিজের বিভিন্ন কাজের জন্য আলোচিত হয়েছেন। অতীতে তাকে নিজ দল আওয়ামী লীগের হয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য খ্যাতিমান অভিনেতা পরিচালক এটিএম শামসুজ্জামান।

তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে রাজপথের সভায় তার বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তার পাশাপাশি ড. ইনামূল হকও একইরকম ভূমিকা রেখেছেন। আওয়ামী লীগের অনুসারী রাজনীতি সক্রিয় তারকাদের মধ্যে আরও রয়েছেন অভিনেতা পরিচালক রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী, চিত্রনায়ক ফারুক, মাহমুদ কলি ও কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা প্রমুখ। সিনিয়রদের পাশাপাশি এখন জুনিয়র তারকারাও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এগিয়ে আসছেন। কিছুদিন আগে ময়মনসিংহ-৩ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়নপত্র কিনে আলোচিত হয়েছেন টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। তার সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আরো ২০ জন। তবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নাজিমউদ্দিন আহমেদ। জানা গেছে, রাজনীতিতে জ্যোতির আগ্রহের কথা বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার এগিয়ে আসাকে বাহবা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন আগামীর জন্য প্রস্তুত থাকতে। প্রধানমন্ত্রীর এমন আশ্বাস পাওয়ার পর রাজনীতির প্রতি আগের চেয়ে আরও আগ্রহ বেড়েছে জ্যোতিকা জ্যোতির। হঠাৎ রাজনীতির প্রতি আপনার আগ্রহের কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে জ্যোতি বলেন, আমি আসলে ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলাম। বঙ্গবন্ধু আমার আদর্শ। তবে এই দলের হয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহটা হয়তো আরও পরে হতো। আমাদের এলাকার তরুণ সমাজের আগ্রহের কারণেই আমি এবার নমিনেশন পেপার জমা দিয়েছিলাম। তারা চেয়েছেন আমি যেন এটা করি। এলাকার তরুণদের প্রতি সম্মান জানাতেই আমার এই অংশগ্রহণ। এর আগে আমি রাজপথের বিভিন্ন আন্দোলনে জড়িত ছিলাম। এটা আমার এলাকার মানুষ দেখেছেন। তাদের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমার ভালো যোগাযোগ। ঢাকায় এসে অভিনয় ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ার পর আমার প্রতি এলাকার মানুষের প্রত্যাশা দিন দিন বাড়তে থাকে। এর আগে আমি এলাকার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হয়েছি। তারা চাইতেন আমি যেন তাদের সঙ্গে মিলে রাজনীতিতে নাম লেখাই। তবে শুরুতেই এমপি পদে লড়ার স্বপ্ন কখনোই দেখিনি। চেয়েছিলাম ধীরে-সুস্থে সময় নিয়ে এগোতে। এই আসনের সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হওয়ার পর এলাকার মানুষই যোগাযোগ করে আমাকে মনোনয়ন চাইতে বলেন। ময়মনসিংহ বিভাগ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সবুজ সংকেত পেয়েই আমি মনোনয়নের আবেদন করি। তারা বলেছেন, ‘শুরু করো। এবার না হলে পরেরবার হবে।

একটা অভিজ্ঞতাও হয়ে যাক। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা খুব জরুরি।’ মনোনয়নপত্র সংগ্রহের অভিজ্ঞতা নিয়ে জ্যোতি আরও বলেন, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েও নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি। আমি এর কিছুই জানতাম না। আমার সঙ্গে আরও চারজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। ফরম পূরণসহ যাবতীয় কাজে তারাই আমাকে সহায়তা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের অনুভূতি তুলে ধরে জ্যোতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এত আন্তরিকভাবে কথা বলেন, যেন তিনি আমার কত বছরের চেনা। আমি অনেক উৎসাহ পেয়েছি। তার কথা শুনে আমি মুগ্ধ। জ্যোতি আরও জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতিতে এলেও টিপিক্যাল ওয়েতে রাজনীতি করবেন না। তার ভাষায়, এখন আমি অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত। সক্রিয় রাজনীতি না করলেও সব সময় মানুষের পাশেই থাকব। এমপি হলে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে মানুষের কথা তুলে ধরতে পারব, সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকতে পারব। আমি এলাকার মানুষের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি এর প্রতিদান দিতে চাই। এখন গণসংযোগ বাড়িয়ে দেব। এবার মনোনয়নপ্রার্থী হয়ে এমপি হওয়ার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে আমার। এই সময়ের আলোচিত টিভি অভিনেত্রী লাক্স তারকা উর্মিলাও জ্যোতির মতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেন। তারকা হওয়ার অনেক আগে থেকেই উর্মিলা আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ প্রসঙ্গে উর্মিলা বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। জীবনের শেষ পর্যন্ত আমি রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের সেবা করে যেতে চাই। আসলে আমাদের দেশে দু’তিন ধরনের রাজনীতির প্র্যাকটিস রয়েছে। যারা ছাত্ররাজনীতি করে এসেছেন, তাদের কাছ থেকে দেশ ও জনগণ ভালো কিছুই পাচ্ছে। আর যারা টাকার জোরে পদ-পদবী নিয়ে এই অঙ্গনে এসেছেন, তাদের মানসিকতাটা ব্যবসায়ীর। রাজনীতিকে তারা ব্যবসার মতো করে ভাবেন। এই ধরনের মানুষের কাছ থেকে জনগণ তাদের প্রত্যাশানুযায়ী ভালো কিছু পান না। আমি রাজনীতি করবো দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। আগামীতে নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চাই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারকাদের মধ্যে রয়েছেন খ্যাতিমান গীতিকার ও চিত্রপরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি দলটির সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া কণ্ঠশিল্পী মনির খান জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জাসাসের সঙ্গে আরও যুক্ত আছেন কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন ও রিজিয়া পারভীন। বেবী নাজনীন আগামীতে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য নিজের গ্রামের বাড়ির এলাকায় বিভিন্ন গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। জানা গেছে, দলের হাই কমান্ড থেকে এরইমধ্যে তার কার্যক্রমকে সমর্থনও দেওয়া হয়েছে। কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। এছাড়াও নিজের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন চিত্রনায়ক ও পরিচালক মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা)। দীর্ঘদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে তিনি তার প্রত্যাশা মতো সাড়া না পাওয়ায় কয়েকবছর আগে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। দলটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার, এ্যাডভাইজার অব দ্য প্রেসিডেন্ট অব ইলেকশন এ্যাফেয়ার্স এবং কনভেনার অব দ্য সেন্ট্রাল কমিটি অব জাতীয় কালচারাল পার্টিএই তিন পদে দায়িত্ব পালন করেন মাসুদ পারভেজ। এখানেও যেন সুখ খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। অবশেষে গেল মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাসুদ পারভেজ জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারো প্রতি কোনোরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া কিংবা কোনোরকম অভিযোগ ছাড়াই আমি দলের তিনটি পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। প্রেসিডেন্ট আমাকে সবসময়ই আদর করতেন, ভালোবাসতেন। দল থেকে সরে এলেও এর ব্যত্যয় হবে না আমার বিশ্বাস।

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

মালয়েশিয়ায় শুভেচ্ছাদূত ফারিয়া শাহরিন

এই দিন-দিন না আরও দিন আছে : ওমর সানি

ইউটিউব থেকে ‘সুপার হিরো’ গায়েব!

‘বাবা আমার পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিলেন না’

অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার উত্তপ্ত সম্পর্কে দীপিকার খোঁচা!

অন্য ভুবনের বাসিন্দার সাথে জীবন বাঁধতে চান শাকিব