শনিবার, ৮ই জুলাই, ২০১৭ ইং ২৪শে আষাঢ়, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

কখন রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন

AmaderBrahmanbaria.COM
ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩

---

Songbedanরাষ্ট্রপতি যখনই মনে করবেন যে, যুদ্ধ বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশের বা এর কোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন তখনই তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

দ্বিতীয়, ১৪১ক(৩) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরিণ গোলযোগের দ্বারা বিপদ আসন্ন বলে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হলে প্রকৃত যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।

তৃতীয়ত, ১৪১ক(১) উপ-অনুচ্ছেদের শর্ততে বলা হয়েছে যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হলে ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে।

সুতরাং প্রকৃতপক্ষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। অবশ্য জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের শর্তটি যোগ করার পেছনে বাস্তব কারণও আছে।

রাষ্টপতি তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত ব্যতীত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই প্রতিস্বাক্ষরের বিধান করা হয়েছে।

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, জরুরি অবস্থা ঘোষণা রাষ্ট্রপতির (মূলত প্রধানমন্ত্রীর)ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জরুরি অবস্থার উদ্ভব হয়েছে কিনা কিংবা জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ বা এর কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন কিনা এ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।

কোনো আদালতে তাঁর ষোষণার যর্থাথতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা যাবে না। আদালত শুধু এইটুকই দেখতে পারবে যে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে  প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর নেয়া হয়েছেল কিনা।

জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে তার ফলাফল:

১. জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর পরবর্তী কোনো ঘোষণার মাধ্যমে রা তা প্রত্যাহার করা যাবে।

২. জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর তা সংসদে উপস্থাপন করতে হবে এবং ঘোষণা ১২০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তাব দ্বারা অনুমোদিত না হলে ১২০ দিন পর তার কোনো কার্যকারীতা থাকবে না।

৩. যদি সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় অথবা ঘোষণার ১২০ দিনের মধ্যে যদি সংসদ ভেংঙ্গ যায় তাহলে সংসদ পুর্নগঠিত হওয়ার পর প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের প্রস্তাবের মাধ্যমে উক্ত ঘোষণা অনুমোদিত না হলে ৩০ দিন পর তার কোনো কার্যকারীতা থাকবে।

৪. জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথে সংবিধানের ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪২ অনুচ্ছেদ বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিত হয়ে যাবে এবং যতদিন জরুরি অবস্থা বলবৎ থাকবে ততিদিন ঐ অধিকারগুলো স্থগিত থাকবে।

ফলে, নির্বাহী বিভাগ এসকল মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

আবার সংসদও এ সকল মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি যে কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবে। জরুরি অবস্থা যখনই প্রত্যাহার করা হবে তখনই উক্ত অধিকারগুলো পুনরুজ্জীবিত হবে।

৫. জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর রাষ্ট্রপতি আদেশ দ্বারা যে কোনো মৌলিক অধিকারের বলবৎকরণের অধিকার স্থগিত করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, ১৪১খ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণার সাথে সাথে ৬টি মৌলিক অধিকার স্থগিত হয়ে যায়।

ফলে, এদের বলবৎকরণের প্রশ্ন থাকেনা। বাকী থাকে ১২টি মৌলিক অধিকার। জরুরি অবস্থা চলাকালে এ ১২ টি অধিকার বহাল থাকে। তবে ১৪১(গ) অনুযায়ী উক্ত ১২টি অধিকারের যেকোনটির বা সবগুলো বলবৎকরনের অধিকারকে রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে স্থগিত করে দিতে পারেন। 

দেশে এ পর্যন্ত যতোবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে, প্র্রত্যেকবারই ১২টি অধিকারও স্থগিত করা হয়েছে। কাজেই জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে এমন বিধান করা হয়েছে যাতে সবগুলো মৌলিক অধিকারই স্থগিত করা যায়।

এ জাতীয় আরও খবর