শনিবার, ১০ই নভেম্বর, ২০১৮ ইং ২৬শে কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

বদ নজর লাগা সত্য, এর প্রতিকার

ইসলাম ডেস্ক।। পৃথিবীতে অনেক বিষয় আছে। যেগুলো বাস্তবে এবং সত্য সেগুলো ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে। এরমধ্যে একটি বাস্তবতা হলো কুনজর বা বদ নজর লাগা। যে ব্যক্তি নজর লাগিয়েছে যদি তার সম্পর্কে জানা যায়, তবে তার গোসল করা পানি নিয়ে রোগীর পিঠে ঢেলে দিবে। তাতে আল্লাহ তায়ালার হুকুমে সে আরোগ্য লাভ করবে।

আবু উমামা বিন সাহাল বিন হুনাইফ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা সাহাল বিন হুনাইফ মদিনার খাররার নামক উপত্যকায় গোসল করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। যখন তিনি গোসলের জন্য জামা খুললেন তখন তার শরীরে আমের বিন রাবীয়ার (রা.) দৃষ্টি পড়ে। যেহেতু সাহাল বিন হুনাইফ (রা.) সুন্দর ও সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন, তাই আমের দেখামাত্র বলে উঠল। আজকের মতো এমন (সুন্দর) চামড়া আমি কখনও দেখিনি; এমনকি অন্দর মহলের কুমারীদেরও না। তার এ কথা বলার সাথে সাথে সাহাল তৎক্ষণাৎ বেহুশ হয়ে পড়ে যায় এবং প্রচন্ড আকারে রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়।

এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বিষয়টি জানানো হয় এবং বলা হল যে, সে তার মাথা উঠাতে পারছে না।
রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি কারো প্রতি বদ নজরের সন্দেহ কর? উত্তরে লোকজন বলল, হ্যাঁ আমের বিন রাবীয়ার ওপর সন্দেহ হ য় । এটা শুনে নবী (সা.) তাকে ডেকে পাঠালেন এবং তার ওপর রাগাম্বিত হে য় বললেন, কেন তোমাদের মধ্যে কেউ নিজের ভাইকে হত্যা করে। তুমি তার জন্য বরকতের দু’আ কেন করনি? এখন তার জন্য গোসল কর। অতঃপর আমের নিজের হাত, চেহারা, দু’পা, দু’হাঁটু, দু’কনুই ও লুঙ্গির আভ্যন্তরীণ অংশ একটি পাত্রে ধৌত করলেন । অতঃপর সেই পানি সাহাল বিন হুনাইফের পিঠে ঢেলে দেয়া হল। এরপর সাথে সাথে সুস্থ হয়ে গেল। (আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)

লুঙ্গির অভ্যন্তীণ অংশ নিয়ে আলেমগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেন, তা দ্বারা শরীরের অংশ বুঝানো হয়েছে। আর কেউ এটাও বলেছেন যে, এর অর্থ লজ্জাস্থান। এটাও বলা হয়েছে যে, কোমর কাজী ইবনুল আরবী বলেন, এর দ্বারা লুঙ্গির নিম্নের সংশ্লিষ্ট অংশ বুঝানো হয়েছে।

বদ নজরের গোসলের পদ্ধতি : আল্লামা ইবনে শিহাব যুহরী বলেন, গোসলের পদ্ধতি যা আমরা আমাদের উলামাদের নিকট থেকে শিখেছি তা হলো- যে ব্যক্তির পক্ষ হতে নজর লেগেছে তার সামনে এক পাত্র পানি দেয়া হবে। এরপর সেই ব্যক্তি পানি নিয়ে পাত্রে কুলি করবে। এরপর পাত্রে নিজের মুখ ধুবে। বাম হাতে ঢেলে ডান হাতের কজি ও ডান হাতে ঢেলে বাম হাতের কজি পর্যন্ত একবার করে ধৌত করবে, তারপর বাম হাত দিয়ে ডান কনুই এবং ডান হাত দিয়ে বাম কনুইয়ে ঢালবে। এরপর বাম হাতে ডান পায়ে আর ডান হাতে বাম পায়ে ঢালবে।

এরপর বাম হাতে ডান পায়ের হাঁটু আর ডান হাতে বাম পায়ের হাঁটুতে ঢালবে। আর সব যেন পাত্রে হয়। এরপর লুঙ্গী বা পায়জামার ভেতরের অংশ পাত্রে ধৌত করবে নিচে রাখবে না। অতঃপর সকল পানি রোগীর মাথায় একবারে ঢালবে। –সুনানে কুবরা, ইমাম বাইহাকি ৯/২৫২
এই গোসলের প্রমান বিভিন্ন সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়। ১। রাসূল (সা.) বলেছেন, নজর লাগা সত্য, আর কোনো কিছু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করতো তবে তা বদ নজর হতো। আর তোমাদের মধ্যে কাউকে যখন (এর জন্য) গোসল করতে বলা হয় তখন সে যেন গোসল করে। -মুসলিম: ১৪/১৭১

২। আয়েশা (রা.) বলেন, (নবীযুগে) নজর যে ব্যক্তি লাগিয়েছে তাকে ওযু করতে বলা হতো। আর সেই ওযু করা পানি দিয়ে নজর লাগা ব্যক্তিকে গোসল দেয়া হতো।” –সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৮০
উল্লিখিত হাদীসদ্বয় দ্বারা নজরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য বদ নজরকারীর ওযু ও গোসল সাব্যস্ত হয়।