পৃথিবী বাঁচাতে কতটা আগ্রহী আপনি?
অনলাইন ডেস্ক : সাম্প্রতিক এক গবেষণার ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে পৃথিবীর জলবায়ু সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মানুষকে অতিসত্বর কার্বন নিঃসরণ কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্বের মানুষের জীবনযাপনের ধারা এবং ঐতিহ্য-সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই কেবল পরিবেশে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করা সম্ভব।
আর কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রচলিত নানা ধরণের দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেও ব্যাপক পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত, মাংস খাওয়ার হার বিপুল পরিমাণে কমিয়ে আনতে তাগিদ দিচ্ছেন তারা।
মাংস উৎপাদনকালে পরিবেশে উচ্চ পরিমাণে কার্বন নি:সৃত হয়, কাজেই পরিবেশ সংরক্ষণে খাদ্যতালিকায় মাংসের উপস্থিতির হার কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে শুধু বেসরকারি প্রচারণা যথেষ্ট নয়, সচেতনতা তৈরি করতে হবে সরকারের পক্ষ থেকেও।
কিন্তু সরকার মানুষকে মাংসের মত সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় খাওয়া থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলে কি তা সরকারের জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলতে পারে?
যুক্তরাজ্যের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী ক্লেয়ার পেরি মনে করেন জনগণকে পরিবেশ বান্ধব খাদ্যাভ্যাস তৈরি করার উপদেশ দেয়ার দায়িত্ব সরকারের নয়।
জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রীর এই মন্তব্যের জন্য পরিবেশবাদী সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’ পেরির কঠোর সমালোচনা করেছে। সংস্থাটি মনে করে এই জটিল সমস্যা সমাধানে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
মন্ত্রী ক্লেয়ার পেরি নিজেও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে তিনি মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় হস্তক্ষেপ করতে নারাজ।
পেরি বলেন, ‘একজন ব্যক্তি বা পরিবার তাদের খাবারের তালিকায় কী রাখবে, সেবিষয়ে নাক গলানো আমাদের উচিৎ নয় বলেই আমি মনে করি।সারাদিন কঠোর পরিশ্রম শেষে একজন যদি মাংসের স্টেক খেতে চায়, তাকে নিষেধ করার আমি কে?’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে মানুষের মাংস গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনা প্রয়োজন – বিজ্ঞানীদের এই বক্তব্যকে অস্বীকার না করলেও এব্যাপারে পুরোপুরি সম্মতও নন জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী পেরি।
রাজনৈতিক স্বার্থ, না নৈতিক দায়িত্ব? পরিবেশবাদী সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থের’ ক্রেইগ বেনেট বলেন, এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে পরিবেশ ও জলবায়ুর দূষণ রোধে সবচেয়ে দ্রুত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে যেসব পদ্ধতি, মাংস খাওয়া কমানো সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।
মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে বিজ্ঞানীদের সুপারিশকে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা না করায় জলবায়ু মন্ত্রী ‘দায়িত্বে অবহেলা’ করছেন বলেও মন্তব্য করেছে ‘ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ’।
‘মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী এবং এর ফলে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়তে পারে’বলে মনে করছেন বেনেট।
তার মতে, এবিষয়ে মানুষের মনোভাব পরিবর্তনে শুধু পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সচেতনতা তৈরি যথেষ্ট নয়, এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেও।
এবিষয়ে সরকার বিশেষ তথ্য-প্রচারণা অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি স্কুল ও হাসপাতালগুলোর খাবারের তালিকা পরিবর্তন এবং আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করার ওপর জোর দিয়েছেন বেনেট।
তবে জলবায়ু মন্ত্রী পেরি বলেন, ‘মানুষের খাদ্যাভ্যাসে নাক না গলিয়ে প্রযুক্তির উন্নয়নে আমাদের মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।’
পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগিয়েও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কমানো যায় বলে মনে করেন মিজ. পেরি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ জীবন এবং সুন্দর পৃথিবী নিশ্চিত করতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ভূমিকা রাখতে হবে – এমনটা অনেকদিন থেকেই বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।
সে লক্ষ্যে মানুষকে ছোট গাড়ি ব্যবহার করা, যাতায়াতে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানো ও হাঁটা, কম বিমান-ভ্রমণ করা, আধুনিক ফ্যাশন-পণ্য কম ব্যবহার করা, চামড়াজাত পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করা…এবং মাংস খাওয়া কমানোর মত পদক্ষেপ নিতে উপদেশ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
তারা বলছেন মানুষ চিন্তাধারায় ও মনোভাবে পরিবর্তন আনলে টেকসই পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন সম্ভব।
তাদের মতে, সরকার যদি এই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার গুরুত্ব বুঝতে না পারে তাহলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি প্রায় অসম্ভব হয়ে পরবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা