টেকনাফে ইয়াবা বাড়ি গুড়িয়ে দিচ্ছে পুলিশ
ইয়াবা সেবন, কেনাকাটা, বহন ও বাজারজাতকরণে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের আইন জাতীয় সংসদে পাশ হবার পরেও কক্সবাজারের সীমান্ত পথে ইয়াবা পাচার থেমে নেই। সীমান্তের চোরাই পথে, স্থল ও জলপথ সহ আকাশ পথে সমানে পাচার হচ্ছে ইয়াবার চালান। মঙ্গলবার একদিনেই বিজিবি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মীরা আটক করেছে ৬১ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবা সহ একজন পাচারকারীকে।
ওদিকে টেকনাফে পুলিশও শুরু করেছে ইয়াবাবিরোধী এক শক্ত অভিযান। এ অভিযানে পুলিশ সাথে করে বুলডোজার নিয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বুলডোজার দিয়েই পুলিশ সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের সুরম্য অট্টালিকাগুলোতে (ইয়াবা বাড়ি হিসাবে পরিচিত) আঘাত হানা শুরু করেছে। গত দুইদিনে পুলিশ টেকনাফ সীমান্তের তিনজন ইয়াবা কারবারির অট্টালিকা বুলডোজার দিয়ে আংশিক ভেঙ্গে দিয়েছে।
গত শনিবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ ও কক্সবাজার শহরের এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং র্যাব মহাপরিচালক ইয়াবা পাচার বন্ধে কড়া নির্দেশনা দিয়ে যান। এরপরই পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও কোষ্টগার্ড সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা নেমেছে সাঁড়াশি অভিযানে।কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, সীমান্ত এলাকার ইয়াবা কারবারিদের বহু সুযোগ দেয়া হয়েছে ভালো পথে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু আর নয়। এবার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ কারণেই পুলিশ ‘হার্ড লাইনে’ নামতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, এবার ইয়াবা কারবারিদের কালো টাকার আলিশান ভবনগুলো চিহ্নিত করেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
গত দু’দিনে টেকনাফের পুলিশ সীমান্তের তিনজন ইয়াবা কারবারির আলিশান ভবনে বুলডোজার চালিয়ে আংশিক গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ তিন কারবারি হচ্ছেন যথাক্রমে নুরুল হক ভুট্টো, জিয়াউর রহমান ও আবদুর রহমান। তারা তিনজনই সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। এসব অট্টালিকার প্রতিটিতেই রয়েছে বেশ কয়েকটি করে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।
সীমান্তে ইয়াবা পাচার রোধে র্যাপিড এ্যকশান ব্যাটালিয়ান-র্যাবও নতুন উদ্যমে সীমান্তে অভিযান শুরু করেছে। র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোঃ মেহেদী হাসান জানান, ইয়াবার চালান আটকের জন্য ইতিমধ্যে টেকনাফ সীমান্তে ৫ টি ক্যাম্প স্থাপন ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক এবং মেরিন ড্রাইভ সড়কে র্যাবের তল্লাশি চৌকিও স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার এতসব তোড়জোড়ের মধ্যেও ইয়াবা পাচার থেমে নেই। গত ২৪ ঘণ্টায় তিনটি স্থানের অভিযানে আটক হয়েছে ৬১ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবার চালান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা অফিসের কর্মীরা গতকাল কক্সবাজার বিমান বন্দরে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে একজন ইয়াবা পাচারকারীকে। তার নিকট থেকে ২ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কক্সবাজার জেলা কর্মকর্তা সৌমেন মন্ডল জানান, কক্সবাজার সাগর পাড়ের লেগুনা বিচ নামক একটি আবাসিক হোটেলে সংঘবদ্ধ ইয়াবা কারবারিদের রয়েছে বড় আস্তানা। এই আস্তানার এক সদস্য ইয়াবার একটি চালান নিয়ে গতকাল রিজেন্ট বিমানে কক্সবাজার থেকে ঢাকা রওয়ানা দেয়ার সময়ই ধরা পড়ে যায়। আটক পাচারকারি তার নাম হাবিব (২৪) এবং গাজিপুরের টংগির বাসিন্দা বলে জানিয়েছে।
অপরদিকে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফের হ্নীলা খারাংখালী নামক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করে। এ সময় পাচারকারি বস্তাটি ফেরে পালিয়ে যায়। বিজিবি সদস্যরা আরেক অভিযান চালিয়ে টেকনাফের সাবরাং নাজিরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে ৯ হাজার ৮০০ পিস ইয়াবার আরো একটি চালান। এসময় পাচারকারি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সূত্র: কালের কন্ঠ