যেভাবে শরীরচর্চা করেন নায়িকারা
বিনোদন ডেস্ক : ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল, সন্তানসহ টেভি পর্দায় অপু বিশ্বাস যখন হাজির হন, তখন তার ওজন ছিল ৮৫ কেজি। এক বছর পর এখন তার ওজন ৬৫ কেজি। অভিনয়ের জন্য কমাতে হবে আরও ওজন। তাই তো মা হওয়ার পরেই সেই ফিগার ফিরে পেতে কঠোর পরিশ্রম করছেন অপু। কি পরিশ্রম করছেন তা জানালেন,‘ফল খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছি। ভাত-রুটি এমনিতেই কম খাই। রাতের খাবারে চেষ্টা করি শুধু প্রোটিন।’
অপু আরও জানান, ‘শুধু জিমে সময় দিলেই চলবে না, নিজেকে মানসিক চাপ থেকেও মুক্ত রাখতে হবে। মাঝে অনেকটা সময় মনের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলেও এখন আর ওসব নিয়ে মোটেও ভাবছি না। পুরোপুরি চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করছি।’ রাজধানীর গুলশান এলাকার নিকেতনে ‘এপিএস লেডিস ফিটনেস ক্লাব’ নামে একটি ব্যায়ামাগার চালু করেছিলেন অপু। তবে একটা সময়ে তা বন্ধ হয়ে যায়।
আজমেরি হক বাঁধনের বিয়েবিচ্ছেদের চার বছর হলো। মামলা-মোকদ্দমায় নেমে মানসিক অবস্থার বারোটা বেজে গেছে। বিষণ্নতা আঁকড়ে ধরে তাঁকে। বিষণ্নতা কাটাতেই যোগ দিয়েছিলেন জিমে, সঙ্গে খাবারের রুটিনটা বদলালেন। তিন-চার মাসেই মানসিক ও শারীরিক অবস্থার অভাবনীয় উন্নতি। গড়নে-মননে নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন। ১২ কেজি ওজন কমিয়েছেন মাস আটের মধ্যে। কী করেছিলেন? ‘খুব বেশি কিছু না। খাবারে ডায়েট করলাম। আর নিয়মিত জিমে যাচ্ছিলাম। পরিবর্তনটা নিজে যেমন টের পাচ্ছি। বাইরের মানুষও টের পেল।’
প্রায় দশ বছর ধরে নিয়মিত জিম করেন বিদ্যা সিনহা মিম। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ শিখেছিলেন। প্রতিযোগিতা শেষে সেগুলো বাসায় প্রাকটিস করতেন। ২০১২ সালে এপিএস লেডিস ক্লাব জিমে ভর্তি হন। সেখানকার ট্রেইনার শাহীনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে পরে বাসায় একটি ব্যক্তিগত জিম গড়ে তুলেছেন। প্রয়োজনীয় প্রায় সব যন্ত্রপাতিই কিনেছেন।
মিমের শরীর ঠিক রাখার মূল রহস্য দৌড়ানো। দিনে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা দৌড়ান। ঘুম থেকে উঠে হালকা নাশতা সেরেই শুরু করেন দৌড়ানো। দৌড়ানো শেষে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আবার জিমে কসরত করেন। রহস্য বলতে ঢাকার কোন এক পার্কে সকালবেলা তাকে দৌড়াতে দেখা যায়।
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও খুব সচেতন মিম। আইসক্রিম ও চকোলেট পছন্দের খাবার হলেও এখন এড়িয়ে চলেন। ভারী খাবার একদম খান না। সবুজ শাকসবজি পছন্দ তাঁর। এ ছাড়া গ্রিন টি, গ্রিন আপেল ও সালাদ থাকে প্রতিদিনের রুটিনে। আউটডোরে শুটিং থাকলে নিজেই অনেক সময় রান্না করে নেন। রান্না করতে ভীষণ পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে তেল ও লবণের ব্যাপারে সচেতন থাকেন। সঙ্গে নিয়ে যান কিছু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজের যন্ত্রপাতি। সময় বুঝে শরীরচর্চাটা সেরে নেন। সপ্তাহে একবার হলেও ঘন্টাখানেক ধরে সাতার কাটেন। সাতারকেও ভালো ব্যায়াম বলে মনে করেন মিম।
বনানীর রুসলান স্টুডিও জিমের সদস্য নুসরাত ফারিয়া। প্রায় তিন বছর ধরে নিয়মিত জিম করেন সেখানে। যত কাজই থাকুক প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ফারিয়ার জিম টাইম। শুটিং থাকলেও সময়মতো জিমে থাকার চেষ্টা করেন। অপু ও রুসলান ফারিয়ার ট্রেনার। ফারিয়া বলেন,‘প্রথম যেদিন জিমে গেলাম, সেদিন ২ কেজির একটা ডাম্বল ওঠাতে কষ্ট হয়ে গেছে। এখন অনায়াসে ৫৪ কেজি ওজনের ডাম্বল তুলে ফেলি।’
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও খুব সচেতন। লবণ এবং কার্বোহাইড্রেডযুক্ত খাবার মুখে দেন না। সপ্তাহে দুই দিন তৈলাক্ত খাবার খান। আইসক্রিম, পিৎজা, বার্গারসহ নানা ধরনের ফ্যাটি খাবারের আশপাশ দিয়ে যান না অনেকদিন। সকালের খাবার তিনটি ডিম ও এক বাটি স্যুপ। দুপুরে ফ্রেশ সালাদ। সন্ধ্যায় সবুজ ফল ও স্ন্যাক্স। রাতে তেমন কিছু খাওয়া হয় না বললেই চলে। তবে ফারিয়া নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে শরীর চেকআপ করান। দুর্বল লাগলে ব্যবস্থা নেন।
শরীর চর্চা, পার্লার, জিম নিয়ে কতটুকু সচেতন মাহিয়া মাহি? ‘আমি কখনো জিম করি না। আর শুটিং ছাড়া পার্লার যাওয়া বা মেকআপ নেওয়া হয় না। তবে পরিমিত পরিমানে পানি খেলে নাকি স্কিন ভালো থাকে। তাই এ বিষয়টা খুব মেনে চলি। আগে একদমই পানি খেতাম না।’ ফিটনেস ঠিক রাখার জন্যে তার প্রস্তুতি নিয়ে বলেন,‘কোন ছবির শুটিং শুরু হওয়ার দেড় মাস আগ থেকেই, আমি রুটিন করে তিনবেলা জুস খাই। এতে করে আমার শারীরিক ফিটনেস ও ডায়েট দুই’ই ঠিক থাকে। তবে যখন ছবির শুটিং শুরু হয়ে যায়, তখন তেহেরি, কালো ভুনা, গুরুর মাংস পেট পুরে খাই। কারণ এ খাবারগুলো আমার ভীষণ পছন্দ। যদিও খাবারগুলো খেলে মোটা হয়ে যাই। তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করি।’
অভিনয় শুরু থেকেই আকর্ষণীয় গড়ন রয়েছে ববির। র্যাম্প করার সময় থেকেই নিয়মিত জিম করেন তিনি। গুলশানের একটি লেডিস জিমে ভর্তি হলেও সময়ের অভাবে সেটা নিয়মিত করতে পারেননি। বেশ কিছু যন্ত্রপাতি কিনে বাসাতেই করছেন শরীরচর্চা। ট্রেইনার হিসেবে রেখেছেন রোহানকে। তাঁর পরামর্শেই সব করেন।
ঘুম থেকে উঠে এক ঘণ্টা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক ঘণ্টা জিম করেন। এই এক ঘণ্টার মধ্যে বেশির ভাগ সময়ই তিনি দৌড়ান। ফিটনেস ধরে রাখার প্রধান কৌশল দৌড়ানো বলে মনে করেন তিনি।
তৈলাক্ত খাবার যতটা পারেন এড়িয়ে চলেন। প্রথমদিকে শুটিংয়ের মানুষজন তা বুঝতো না। এখন জানে ববি কি চায়। শুটিংয়ে থাকলে শুধু সবজি আর ফল খান। সকালে জিমের পর ফ্রুট সালাদ, দুপুরে হালকা সবজি কিংবা চিকেন। সন্ধ্যায় স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার। তবে রাতে ভারী খাবার একদমই খান না। তবে তার ফিটনেসের রহস্য বলতে তিনি জানান পারিবারিকভাবেই অনেকটা এমন স্লিম। পরিবারের প্রায় সবাই এমন স্লিম।