বাংলাদেশি মুসলমানদের তাড়াতে হবে, পুজায় বোঝাবে বিজেপি!
অনলাইন ডেস্ক : উৎসবের দিনগুলিতে সাধারণ মানুষকে শুধু জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ বা এনআরসি নিয়ে বুঝিয়েই বসে থাকতে রাজি নয় বিজেপি। সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়েও আম জনতাকে জানাতে চায় গেরুয়া শিবির। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছে।
উৎসবমুখী মানুষকে সোজা কথায় বুঝিয়ে বলা হবে, বাংলাদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখান থেকে তাদের ভারতের মাটিতে আশ্রয় খুঁজতে আসা বেআইনি এবং জাতিসংঘের নিয়ম বিরোধী। যে দেশ ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, সেখানকার সংখ্যাগুরু জনজাতি অন্যদেশে আশ্রয়, রোজগার কিংবা নিরাপত্তা খুঁজতে আসবে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
তবে তার পাশাপাশি একটি ব্যাপারে সর্বদা সচেতন রয়েছে পার্টি। এনআরসি এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল সম্পর্কে ভারতীয় মুসলমান সমাজে যেন কোনও ভুল বার্তা না যায়। বিজেপির সংখ্যালঘু নেতৃত্বেকে এই বিষয়ের প্রচারে কাজে লাগানো হচ্ছে।
নেতারা সংখ্যালঘু ভোটারদের বোঝাচ্ছেন, এনআরসি বা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল তাঁদের জন্য নয়। কিছু রাজনৈতিক দল বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় মুসলমানদের ভুল বোঝাতে পারে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের দেশ থেকে বের করে দেওয়াই এর মূল উদ্দেশ্য। কারণ প্রতিবেশি দেশের অনুপ্রবেশকারীরাই বাংলায় অঘটন ঘটাচ্ছে। ভাগ বসিয়েছে সরকারি বরাদ্দে।
লোকসভায় সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০১৬ সালে পেশ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান। ১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট আইনের সংশোধনী আনার চেষ্টা করা হয়েছে সংসদে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি যৌথ সংসদীয় কমিটির আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ কিছুদিন আগেই উৎসবে এনআরসি এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল নিয়ে প্রচারের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তা শুরুও হয়ে গিয়েছে। বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের দায়িত্বে থাকা মোহিত রায় বলেন, ‘বিভিন্ন পুজা মণ্ডপগুলির বাইরে বুকস্টলে আমরা এই বিষয়গুলির উপর বই বিক্রি করছি। কেউ এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে আমাদের স্টলে বসেই আলোচনা করছি। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট ভাষায় বলছি।’
যদিও মোহিত রায়ের অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক দল বাংলার মানুষকে ভুল বার্তা দিচ্ছে। তারা বোঝানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিত্ব দেওয়া হবে। সংসদেও তারা সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের বিরুদ্ধেই কথা বলেছে। উপরন্তু মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে, হিন্দুদেরও নাকি তাড়িয়ে দেবে মোদী সরকার।
তিনি আরো জানান, ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ১০ শতাংশ হিন্দু কমে গিয়েছে। ওই জনগণনা অনুযায়ী মুসলমান জনসংখ্যা ২৭ শতাংশ। মুসলমান বৃদ্ধি নিয়ে ভারতবাসীদের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। সেটি ভালো বিষয়। কিন্তু দেখা প্রয়োজন কীভাবে তা বাড়ল।
কীভাবে বাংলায় মুসলমান জনসংখ্যা বাড়ল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মোহিত রায় বলেছেন, ‘মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিটা গোলমেলে। বাংলাদেশে ২২ শতাংশ হিন্দু কমে গিয়ে এখন হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ এটিই। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের থেকে দেড়গুণ বেশি জনসংখ্যায় বাংলাদেশ থেকে মুসলমানদের বেআইনিভাবে আগমনই রাজ্যে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।’
ভারতের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি বা খৃষ্টান ধর্মীয় বেআইনি অনুপ্রদেশকারীদের গ্রেপ্তার বা ফেরত না পাঠালেও চলবে। তাঁরা যদি ৬ বছর টানা ভারতে থাকেন তাবে নাগরিকত্ব প্রদান করা যেতে পারে। সূত্র: কলকাতা ২৪x৭