আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখলেন আকাশে উড়ে
বেলা তখন পশ্চিমে ঢলে পড়েছে। সূর্যের সোনালী রশ্মি প্রমত্তা পদ্মার বুকে আঁচড়ে পড়ছে। নদীবক্ষের ঢেউ আর আলোরা মিলে খেলছে যেন স্বপ্নের দিশারী হয়ে। আর পদ্মার বুক চিঁড়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। যেন এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি মিলছে শ্রমিকের হাতে হাতে।
হেলিকপ্টার তখন নদীর ঢেউ ছুঁইছুঁই। প্রায় নদীর কোল ঘেঁষে নেমে আসা হেলিকপ্টারের পাখাও ঘুরছে ধীরে ধীরে। স্বপ্নরা হাতছানি দিচ্ছে স্বপ্নকন্যাকে। জানালায় চোখ রেখে মুচকি মুচকি হাসলেন প্রধানমন্ত্রী। তার হাসিতে হাসলো বাংলাদেশও।
এক বিকেলের গল্পকথা। তাতে হাজারো গাঁথুনি। যেন বলে বলে শেষ হয় না। এ দিন বঙ্গবন্ধু তনায়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনায় মিতালি করেছিল নির্মিতব্য পদ্ম সেতুও। পিলারের উপর স্প্যান বসেছে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরও পিলার। তা দেখে যেন আনন্দ ধরছে না প্রধানমন্ত্রীর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার মুন্সিগঞ্জে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করে মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় যোগ দেন। জনসভা শেষে বিকেলে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকায় ফিরছিলেন। এ সময় তিনি সেতুর নির্মাণ কাজ প্রত্যক্ষ করেন হেলিকপ্টারের জানালা দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে বেশ উৎসুকও দেখাচ্ছিল কাজের অগ্রগতি দেখে। তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেয়েছে ফোকাস বাংলার ফটোসাংবাদিক ইয়াসিন কবির জয়ের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করা ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে।
২০১২ সালের ৩০ জুন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থঋণ বাতিল করলে এটি নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। যদিও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে পরবর্তীতে সরে আসে বিশ্বব্যাংক। এর আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য রীতিমত চ্যালেঞ্জের। সকল প্রতিবন্ধকতা পায়ে মাড়িয়ে দৃশ্যমান হয়েছে পদ্মা সেতু। সব ঠিক থাকলে ২০১৯ সাল নাগাদ এ সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচলের কথা রয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর ব্যয় আরও আট হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে সর্বশেষ পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়িয়েছে সব মিলিয়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।