জাতীয় ঐক্যের ‘ঘরে তালা’
ড. কামাল হোসেন এবং ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে তা শুরুতেই গোত্তা খেয়ে ‘নড়বড়ে’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতিবিদরা।
তারা বলছেন, কামাল হোসেন এবং বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ‘দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে যাওয়ার’ মতো অবস্থা। একজন আওয়ামী লীগ থেকে আসা, অন্যজন বিএনপির। দুই নেতার সম্পর্কটা বেশ ভালো বলে শোনা যায় না। তার ওপর আছে ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব। কিছু মূলধারার গণমাধ্যম তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ায় ভেতরের ‘কাজিয়া-ফ্যাসাদের’ খবর বাইরে বেশি আসছে না। এতো সহজে কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী জাতীয় ঐক্যে সফল হতে পারবে না। জনগণ তাদের গ্রহণ করবে না।
এদিকে জামায়াতকে নিয়েও জাতীয় ঐক্যে দেখা দিয়েছে বিরাট বিভেদ ও বিভ্রান্তি। বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলা হচ্ছে। কিন্তু জামায়াত ছাড়বে না। জামায়াতের প্রশ্নে কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব অত্যন্ত সরব। আবার শেখ হাসিনার অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচন নয় অনেকের এই মত হলেও ড. কামালের মনোভাব ভিন্ন। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে নীতিগতভাবে কামাল হোসেনের আপত্তি নেই। তবে বদরুদ্দোজা চৌধুরী কোনভাবেই জামায়াতকে ছাড় দিতে রাজি নন। বিএনপিও যে জামায়াতকে ছাড়বে না সেটাও স্পষ্ট হয়েছে ২০-দলীয় জোটের বৈঠকের ঘোষণায়। জোট অটুট রেখেই জাতীয় ঐক্যের পক্ষে তারা।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ডের সিনিয়র সদস্য ছিলেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তখন জামায়াতকে যেসব আসন ছাড়া হয়েছে, তাতে তিনি আপত্তি করেননি। তিনি নিজেও নির্বাচনে জামায়াতের ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন। চারদলীয় জোটের রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি, যেখানে জামায়াতের সমর্থন ছিল। তা হলে এখন কী হয়েছে?
তিনি আরও বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বৃহত্তর ঐক্য গড়ার স্বার্থে আমরা দলগত অথবা ব্যক্তিগতভাবে ছাড় দেব। কিন্তু আমাদের জোট অটুট থাকবে, এখানে কাউকে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন আসবে কেন? নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আমরা সবাইকে চাই।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিরা পরাজিত ও হতাশ রাজনীতিবিদদের নিয়ে চক্রান্তে লিপ্ত। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের এই ঐক্য জাতির জন্য হুমকি।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কামাল সাহেবরা যেটা গঠন করেছে, সেটা জাতীয় ঐক্য নয়। এটা হলো জগাখিচুড়ি মার্কা ঐক্য। ঐক্যের কথা বলে আলোচনা সভা ডেকে যারা ঝিমায় তাদের ঐক্য টিকবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। তাছাড়া এটা শুরুর আগে ছিল জাতীয় ঐক্য আর সম্প্রতি হয়ে গেছে ‘জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িক ঐক্য’। এ থেকে কিছু আশা করাটা বিএনপির দুঃস্বপ্ন।
রাজনীতিবিদরা বলছেন, নির্বাচনের তিন মাস আগে ঐক্য গড়ার লক্ষ ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ ছাড়া আর কিছু নয়। ইতোমধ্যে ঐক্যের নেতাদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ দেখা দিয়েছে। তারা যতই বলুক জনগণের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য ঘঠন করা হয়েছে, মুলত সহিংসতার মধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সূত্র: বিডিজার্নাল